বৃহঃ. মার্চ ২৮, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, বৃহস্পতিবার২৩ মে,২০১৯ঃ যাকে ঘিরে ছিলো অবিশ্বাস, দাঙ্গার কলঙ্ক এবং ঘৃণা, সেই ডানপন্থি নেতা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন নিয়ে আবারও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আর কেউ নন, নরেন্দ্র মোদী।

সেই ২০০১ সাল থেকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির এই নেতা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় তার গতিশীল নেতৃত্বে গুজরাট পরিণত হয় ভারতের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে। কৌশলী প্রচার তাকে দিয়েছে উন্নয়নের অগ্রদূতের ভাবমূর্তি, বিপুল জনসমর্থন।

মোদীর উত্থান রূপকথার মতো। গুজরাটের রেলস্টেশনে যে বালকের শৈশব কেটেছে চা বিক্রি করে, সে বালকই একদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ১২০ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী। এদফায় আবারও দেশব্যাপী রীতিমতো সুনামি বইয়ে দিয়ে ভারতের মসনদ জয় করলেন তিনি। কিন্তু কি মধু আছে এই মোদীতে?

কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হলেও এবারের নির্বাচনে হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচার সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন মোদী। নির্বাচনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল – মোদী আবারও প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে, গুজরাটের আদলে তিনি পুরো ভারতকে বদলে দেবেন। ভারতকে কখনও মাথা নোয়াতে দেবেন না।

গত পাঁচ বছরে সাফল্য এলেও মোদীকে নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। বলা হয়েছে, তিনি স্বৈরাচারী মেজাজে দল চালাতে চান, প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতি মানেন না। এমনকি মোদীর শিক্ষা ও অর্থনীতির জ্ঞান নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয়েছে বিরোধী শিবিরে। বলা হয়েছে, দাঙ্গার কলঙ্ক আড়াল করতেই মোদী উন্নয়নের ফাঁপা বুলি আওড়াচ্ছেন।

গত পাঁচ বছরে সরকারের পরিকল্পনার সুফল বেশি পেয়েছেন গ্রামের গরিব, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিরা। তাই সরকারের মূল শক্তি হল গ্রামীণ আম জনতার সমর্থন।

সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসডিএস) নামে ভারতের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলার পর জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ছাপিয়ে মোদিকে আরেকবার ক্ষমতায় দেখার প্রত্যাশ্যা জোরালো হয়ে উঠেছে ভারতীয়দের কাছে।

ধারণা করা হয়েছিল, চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ বেকারত্বের হার, ভয়াবহ কৃষি সংকট আর খাদ্য মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোটাররা লোকসভা নির্বাচনে হয়তো অর্থনৈতিক ইস্যুকেই প্রাধান্যের কেন্দ্রে রাখবে। ভরাডুবি হবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের।

কিন্তু সিএসডিএস এর জরিপে উঠে আসে, কিছুদিন আগেও দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব, কৃষি ও খাদ্য সংকটের মতো মৌলিক জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ভোটারদের কাছে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল, ভোটদানের সময় পর্যন্ত তা একইরকম থাকেনি। বরং জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে ভোটারদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে মোদি সরকার।

পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বাহিনীর হামলার পর জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ছাপিয়ে মোদিকে আরেকবার ক্ষমতায় দেখার প্রত্যাশ্যা জোরালো হয়ে উঠে। ভোটের আগে-পরে দুই ধাপে পরিচালিত জরিপেই অংশগ্রহণকারীদের একটা ছোট অংশ জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে রাখার কথা বলাই যায়।

কিছুদিন আগের তুলনায় নির্বাচনের সময় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ভোটারদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। অথবা তারা ওইসব ইস্যু নিয়ে তেমন বেশি একটা উচ্চকণ্ঠ ছিল না। সম্ভবত তারা নিজেদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়গুলোকে বিবেচনা করেছে।