শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
  খোলাবাজার২৪,সোমবার,০৩ জুন ২০১৯ঃ গতবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল হারের যন্ত্রণা লিভারপুল ভুলেছে এ বছরে এসে। টটেনহামকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো এই শিরোপা জিতেছে তারা। আর এই শিরোপা জয়ের পেছনে অন্যতম কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন দলের ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার।

গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের কথা মনে আছে?

অনেক আশা নিয়ে সেবার ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল। ফর্মে থাকা আক্রমণভাগের ত্রয়ী সালাহ-মানে-ফিরমিনোর ঝলকে রিয়াল মাদ্রিদকে টপকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতে যাবে তারা, এমনটাই ভেবেছিল তাদের সমর্থকেরা। তবে সালাহ-মানে-ফিরমিনো নয়, এমনকি রিয়াল মাদ্রিদের কোনো খেলোয়াড়ও নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের সবচেয়ে ‘আলোচিত’ খেলোয়াড় হয়েছিলেন লিভারপুলের জার্মান গোলরক্ষক লরিস ক্যারিয়াস। ক্যারিয়াসের দুই ভুলের মাশুল গুনেছিল লিভারপুল।

রিয়াল স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার পায়ে ভুলে বল তুলে দিয়েছিলেন ক্যারিয়াস। বেনজেমার পায়ে বল লেগে গোল হয়ে যায়। এই ভুলের পরে নার্ভাসনেসের কারণেই কি না, রিয়ালের তৃতীয় গোলটাও আসে ক্যারিয়াসের ভুলেই। ক্যারিয়াসের মুখ বরাবর দূরপাল্লার এক শট নিয়েছে গ্যারেথ বেল। বলটা ক্যারিয়াসের হাতে লেগে দিক পরিবর্তিত হয়ে জালে ঢুকে যায়। ম্যাচ শেষে ক্যারিয়াসের কান্নার ছবিটা এখনো লিভারপুল সমর্থকদের মনে তরতাজা। ম্যাচশেষে লিভারপুলের সমর্থকদের কাছে গিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছিলেন এই জার্মান গোলরক্ষক।

সেই ম্যাচের পরেও ক্যারিয়াসের ওপর আস্থা রেখেছিল লিভারপুল। ক্যারিয়াসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন ক্লপ। কিন্তু এই মৌসুম শুরু আগে কিছু প্রস্তুতি ম্যাচে আবারও কিছু ভুল করে বসেন ক্যারিয়াস। পারফরম্যান্সে উন্নতির কোনো ছাপ ছিল না। কোচ ইয়ূর্গেন ক্লপ বুঝে যান, নতুন গোলরক্ষক না আনলে লিভারপুলের ট্রফি জেতার আশা পূরণ হবে না। ৬৭ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে এএস রোমা থেকে ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে নিয়ে আসেন ক্লপ। যা সে সময়ে অ্যালিসনকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলরক্ষকে পরিণত করেছিল। যদিও এক সপ্তাহ পরেই অবশ্য চেলসি স্প্যানিশ গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলরক্ষক বানিয়ে দলে নিয়ে আসে। অ্যালিসন লিভারপুলে আসার পর দুই বছরের ধার চুক্তিতে ক্যারিয়াসকে তুর্কি ক্লাব বেসিকতাসে পাঠিয়ে দেন দলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।

ক্লপের এক সিদ্ধান্তেই…

এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে হলে প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচটা জিততেই হতো লিভারপুলকে। মোহাম্মদ সালাহর গোলে প্রথমে এগিয়েও গিয়েছিল তারা। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে গোল করার জন্য বল পেয়ে যান নাপোলি স্ট্রাইকার আরকাদিউশ মিলিক। মিলিকের শট অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দেন অ্যালিসন। সেই শটে গোল হলে ম্যাচ ড্র হয়ে যেত, আর তখন লিভারপুল না, নাপোলিই উঠত দ্বিতীয় রাউন্ডে। অনেকের মতে, সে দিন অ্যালিসনের জায়গায় ক্যারিয়াস থাকলে লিভারপুলের গোল হজম করা কেউ ঠেকাতে পারত না! লিভারপুলও বিদায় নিত প্রথম রাউন্ড থেকেই।

সেমিতেও একই কাহিনি। ফাইনালে উঠতে গেলে বার্সেলোনার বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে ৪-০ গোলে জিততে হতো লিভারপুলকে। ডিভক অরিগি ও জর্জিনিও ভাইনাল্ডামের জোড়া গোলের সুবাদে সেই অসাধ্যসাধন হলেও অনেকের চোখের আড়ালেই চলে গেছে অ্যালিসনের বীরত্ব। সে মহাকাব্যিক ম্যাচে চারটা গোল করলেও কোনোভাবে লিওনেল মেসিরা এক গোল দিয়ে দিলেই ফাইনালে খেলত বার্সেলোনা। কারণ, প্রথম লেগে তারা জিতেছিল ৩-০ গোলে। সে দিন বেশ কয়েকটা দুর্দান্ত সেভ করেছিলেন অ্যালিসন। প্রথমার্ধে মেসির একটা শট রুখে দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্যভাবে। তাহলে বুঝুন, সেই শটগুলোর একটাও গোল হয়ে গেলে আজ লিভারপুল ট্রফি নিয়ে উল্লাস করতে পারত?

ফাইনালেও দেখা গেছে একই দৃশ্য। ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায় পেনাল্টি গোলে লিভারপুল এগিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও গোল শোধ করতে পারছিল না টটেনহাম। ম্যাচের শেষের ২০ মিনিটে বেশ কিছু দুর্দান্ত আক্রমণ করে তারা। সেসব আক্রমণগুলো বলতে গেলে একাই নস্যাৎ করেছেন অ্যালিসন।