শনি. এপ্রি ২০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শনিবার,১৩জুলাই,২০১৯ঃ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। সাবেক স্বৈরাশাসক ও রাষ্ট্রপতি। এরশাদের প্রেম ও বিয়ে নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প ও গুজব রয়েছে। সামরিক শাসনের সময় থেকে আজীবন নারীর প্রেম পুজো করেছেন তিনি।কিন্তু মাঝে-মধ্যেই নারীর রসালো প্রেমকাহিনী তাঁর সংসার, পার্টিসহ সবকিছুতেই তোলপাড় সৃষ্টি করলেও তিনি সামাল দিয়েছেন কৌশলভাবে। ‘রোমান্টিক’ এ রাজনীতিকের জীবনে একাধিক নারীর আগমনের খবর ওপেন সিক্রেট। তার মধ্যে চারজনের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বলে একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে।

তবে বর্তমানে সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ছাড়া বাকিরা নেই এরশাদের জীবনে। এদের কেউ মারা গেছেন, কেউ বিদেশে, কেউ দেশে থেকেও না থাকার তালিকায়। এরশাদের কথিত স্ত্রী হিসেবে যে তিনজন পরিচিতি পেয়েছিলেন-তার মধ্যে মেরি, জিনাত মোশাররফ ও বিদিশা ইসলাম।

এর মধ্যে বিদিশাকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছিলেন। যদিও তাকে তালাক দিয়েছেন এরশাদ।

এই সম্পর্কগুলো ছাড়াও একাধিক গায়িকা, নায়িকা, এক সুপারস্টারের মা’সহ অনেকের সঙ্গেই স্বৈরশাসক এরশাদের নাম জড়িয়েছিল। সারাজীবন একের পর এক নারী এরশাদের জীবনে এলেও শেষ বেলায় এসে তিনি একেবারে নিঃস্ব। বর্তমানে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

মরিয়ম মমতাজ মেরি : এরশাদ আশির দশকে মেরি নামের এক নারীকে গোপনে বিয়ে করেছিলেন বলে শোনা যায়। যদিও মেরিকে জনসমক্ষে খুব কমই দেখা গেছে। এরশাদ নিজে কখনো এই বিয়ের কথা স্বীকারও করেননি।

মরিয়ম মমতাজ মেরি যৌবনে ছিলেন-আকর্ষণীয় ফিগারের। সুঠামদেহী এই নারী ছিলেন প্রথম দর্শনেই সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার মতো সুন্দরী। স্বৈরাচারী শাসক সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদও প্রথম দর্শনে মেরির প্রেমে পড়ে কুপোকাত হন।

মেরির দাবি অনুযায়ী এরশাদ তাঁর প্রেমে পড়ে অবশেষে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তবে এরশাদ মেরিকে বিয়ে করার কথা বরাবর অস্বীকার করলেও তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার বিষয়টি গোপন থাকেনি। মরিয়ম মমতাজ মেরির সঙ্গে এরশাদের প্রেম পরিণয়ে চটকদার খবর এক সময় চাউর থাকত সংবাদপত্রের পাতায়।

জিনাত মোশাররফ : এরশাদের ডজনখানেক বান্ধবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে জিনাত মোশাররফের নাম। ক্ষমতায় থাকাকালে জিনাতের সঙ্গে এরশাদের পরকীয়া ছিল ওপেন সিক্রেট। এরশাদের সঙ্গে নামের মিল রেখেই জিনাত মোশাররফ জিনাত হুসেইন নাম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। তার সঙ্গে পরকীয়া নিয়ে একটি সংবাদপত্রে খোলামেলা সাক্ষাৎকারও দিয়েছিলেন এরশাদ। এরপরই সাবেক মন্ত্রী মোশাররফের সঙ্গে জিনাতের ঘর ভাঙে।

অনেকেই দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এরশাদের ইচ্ছাতেই সংরক্ষিত আসনে জিনাতকে সংসদ সদস্য করা হয়। এরশাদের একসময়ের প্রেমিকা জিনাত বর্তমানে স্থায়ীভাবে লন্ডনে বসবাস করছেন বলে জানা যায়। এরশাদের সঙ্গে তার সম্পর্কও বহু আগেই চুকেবুকে গেছে।

বিদিশা সিদ্দিক : বিদিশা সিদ্দিকের সঙ্গে এরশাদের বিয়ের বিষয়টি সবারই জানা। নিজ বয়সী কবি আবু বকরের মেয়ে বিদিশা ইসলামের প্রেমে পড়েন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রায় ছয় বছরের পুরো জেল জীবনে বিদিশার সঙ্গে প্রেম করে ২০০০ সালে ঘোষণা দেন যে তিনি বিদিশাকে বিয়ে করেছেন। সেদিন ছিল তাদের ছেলের প্রথম জন্মদিন।

বিদিশাকে নিয়ে স্বল্পস্থায়ী সংসারে এরশাদের জটিলতা না কমে বরং বাড়তে থাকে। চার দলীয় জোট সরকারের সময় বিদিশাকে তালাক দিয়ে তিনি চুরির মামলায় জেলে পাঠান। চুকে যায় তখনকার মতো এরশাদ-বিদিশা পর্ব।

বিদিশা রাজনীতি না করলেও এরশাদের জাপার বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি এরশাদের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখেন বিদিশা। এরশাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগে বিদিশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে জানা যায়।

রওশন-এরশাদ : নাম তার পেয়ারা। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি বিয়ের পর দূরে থাকা স্ত্রীকে প্রচুর চিঠি লিখতেন। চিঠিতে তিনি স্ত্রীকে সম্বোধন করতেন ‘হৃদয়ের রানী’ ‘হৃদয়ের ধন’ ‘ওগো মোর জীবন সাথী’ ‘খুশি বউ’ ‘খুশি পাগলী’ ‘সোনা বউ’ ‘খুকু বউ’ ‘ওগো দুষ্টু মেয়ে’ ‘নটি গার্ল’ ‘বিরহিনী’ ইত্যাদি অবিধায়।

স্ত্রীর ডাকনাম ডেইজী হওয়ায় ভালবেসে ডাকতেন ডেজু, ডেজুমনি, ডেজুরানী। চিঠির শেষে নিজের পরিচয় লিখতেন ‘পেয়ারা পাগল সাথী’ ‘বড্ড একাকী একজন’ ‘প্রেম-পূজারি’ ‘বিরহী’ ইত্যাদি। ৬২ বছরের সংসার জীবন। স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্বের বহুদেশ ঘুরেছেন। ৯ বছর দেশ শাসন করেছেন। স্ত্রীকে রাজনীতিতে এনে এমপি, মন্ত্রী এমনকি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতাও বানিয়েছেন।

যাদের সম্পর্কে এই কথাগুলো বলা হলো তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বেগম রওশন এরশাদ। এরশাদের ডাক নাম পেয়ারা ও রওশনের ডাক নাম ডেইজি।

১৯৫৬ সালে বিয়ের পর সেনা কর্মকর্তা স্বামী এরশাদকে চাকরিতে এখানে সেখানে থাকতে হয়। আর পড়াশুনার জন্য স্ত্রী রওশন এরশাদ ডেইজিকে এক বছর থাকতে হয় বাবার বাড়ি ময়মনসিংহে। তখন এইচ এম এরশাদ দূরে থাকা স্ত্রীর বিরহে লেখা চিঠিতে এই শব্দগুলো ব্যবহার করতেন।

কবি এরশাদ নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, বিয়ের পর সংসার করার জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। রওশন ওদের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছিল। চাকরির জন্য আমি আজ এখানে কাল ওখানে। সে সময় দূরে থাকা স্বামীরা স্ত্রীদের কাছে চিঠি পাঠাতো। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না।

বহু চিঠি লিখেছি; চিঠির প্রথমে রওশনকে অনেকভাবে ‘সম্বোধন’ করতাম। এই দম্পতির সাদ নামের এক সন্তান রয়েছে। তিনি ভারতীয় এক নারীকে বিয়ে করে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন।