শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, মঙ্গলবার ,২৩জুলাই,২০১৯ঃ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের তালা ভেঙে ফেলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনসহ একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই তালা ভেঙে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে একা পেয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাত কলেজ ও ঢাবির বিদ্যমান সংকট নিরসনের দাবিতে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। এর আগে সকাল থেকে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুপুরে সমাবেশ শেষে প্রশাসনিক ভবনে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে, ছাত্রলীগের নেতারা যখন প্রশাসনিক ভবনের দিকে যান তখন ভবনের সামনে আগে থেকেই বসে থাকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের সরে যেতে বললেও তারা সরে যায়নি। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে যাওয়ার সময় মল চত্বরে থাকা ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের ওপর হামলা চালান ঢাবির জহুরুল হক হল শাখার নেতাকর্মীরা। পরে আখতারকে মারধরের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে আখতার বলেন, আমি মল চত্বরে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃত্বে হঠাৎ আমার ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। আমাদের সঙ্গে যে মেয়েরা ছিলেন তাদেরও লাঞ্ছিত করেন। আমরা তখন দৌঁড়ে রক্ষা পাই।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলটি দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে যখন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান নেয় তখন প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আসে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে।

এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।

এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, এখন ডাকসু রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের যে চিরারচিত চরিত্র ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন দমন করা। সেই পদ্ধতিই তারা বেছে নিয়েছে। আজকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে ডাকসু নেতা আখতারের ওপর হামলা করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের সাত কলেজ সংকট তৈরি করেছে। আমরা এই সংকট সমাধানের কথা আমাদের আস্থার ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি। আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দিচ্ছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সংকটের সমাধান হবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ব্যাপারে ডাকসুর জিএস বলেন, আপনারা ডাকসুর ওপর আস্থা রাখুন। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। গত ১০ বছরে একটি দিনও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়নি। আমরা চাই না, এই সংকট চলুক। আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান হবে। যদি না হয় তবে ছাত্রলীগ এই সমস্যার সমাধান করবে।

গোলাম রাব্বানী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সমস্যার সুন্দর সমাধান হবে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে ঢাবির শিক্ষার্থীদের সেই চিন্তা করতে হবে। বাইরের দেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে যেখানেও এমন কলেজ অধিভুক্ত আছে। কিন্তু সাত কলেজ অধিভুক্তি হওয়ার পর ঢাবির যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে সংকট তৈরি হচ্ছে। এই সংকট সমাধান হবে। আলোচনা চলছে। এটা নিয়ে আমাদের ভাবার বিষয় না। ঢাবির মান উন্নত হচ্ছে কি না, এটা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।

প্রসঙ্গত, সাত কলেজের সংকটকে কেন্দ্র করে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতারা। তৎকালীন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন, ঢাবি সভাপতি আবিদ আল হাসান ও মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বেই এই হামলা করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের বিরুদ্ধে নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ পাওয়া যায়। ছাত্রলীগের হামলায় তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনন্ত ২০ জনের মতো আহত হন।

 Share
 Tweet
 Share

অন্যরকম