শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ আজ পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের চর গাজীপুর এলাকায় জমি সংক্রান্ত  বিরোধ এবং আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চর গাজীপুর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার খানসহ তার পরিবারের সদস্যদের (৪৫) বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানি  মূলক মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবারের সদস্যরা।তিনি  শুক্রবার সকালে উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের চর গাজীপুর এলাকায় এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে দেলোয়ার খানের স্ত্রীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনান তার ছেলে কলেজ ছাত্র সাইফুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইলিয়াছ আলী খান, প্রবীণ সাংবাদিক বাবুল হালদার, মোতাহার সেখ, তৈয়ব আলী খান, লিযাকত খান, দেলোয়ার খানের স্ত্রী বিলকিস বেগম, এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই মোঃ ইসরাফিল খান, মরিয়ম, পারুল বেগম, ফরিদা বেগম, শাহিনুর, খাদিজা, লাকি বেগমসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির নারী-পুরুষ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার স্বামী দেলওয়ার খান সংসারিক কাজকর্ম করেন এবং মাঝে মধ্যে মৎস্য আহরণ করে জীবীকা নির্বারহ করে সংসার চালান। কিন্তু একই এলাকার সেখ বংশ ও খান বংশের মধ্যে দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে বিরাজমান জমাজমি, সামাজিক মর্যাদা আর বংশীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলতে থাকা দ্বন্দের কারনে সেখ বংশের একজন চিন্হিত মামলাবাজ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য রুস্তুম আলী সেখ গংদের দ্বারা খান বংশের লোকজন হামলা মামলা সহ নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।

তিনি বলেন আমার স্বামী দেলোয়ার খান ও দেবর ই¯্ররাফিল (৪৩) খানকে হেনেস্তা করার জন্য রুস্তুম গংরা একের পর এক নানা ভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। শুধু আমার পরিবারই নয়, এই রুস্তম ও তার সহযোগীদের অত্যাচার-নির্যাতন আর মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানির কারনে এ এলাকার সাধারন মানুনের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আমার স্বামী ও দেবর তার (রুস্তমের) এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ হয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা সহ আমার স্বামী ও দেবরকে হত্যা করার জন্য অনেক চেস্টা করে যখন বিফল হন তখনই রুস্তমের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাক নামে সাবেক এক ইউপি সদস্যকে দিয়ে হত্যা সহ এক এক করে ৩টি মামলায় জড়ান।

আদালতের তদন্তে নির্দোশ প্রমানিত হওয়ায় যুবলীগ কর্মি রাসেল হত্যাকান্ড সহ তাদের জড়ানো অন্যান্য মামলা থেকে আমার স্বামী ও দেবর অব্যাহতি পান। এছাড়া দরিচর গাজীপুরের মিলা আক্তার (২১) গনধর্ষণের ঘটনায় আমার স্বামী দেলোয়ার ও দেবর ই¯্ররাফিলকে ঐ মামলায় আসামি হিসেবে জড়ান রুস্তুম গং। তদন্ত শেষে ৩/৪/১৯ তারিখ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত ঐ মামলা থেকেও আমার স্বামী দেলাওয়ার খান ও দেবর ঈ¯্রাফীল খান অব্যাহতি পান। কিন্ত রুস্তুম সেখের ভাতিজা জাকির হোসেন গন ধর্ষণ মামলা সহ কয়েকটি মামলার প্রধান আসামি হওয়া সত্বেও তাকে গ্রেপতার করা হচ্ছেনা। ১ নং আসামি থাকার পরেও সে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। রুস্তুম সেখ পুলিশে চাকুরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলায় জড়ান। পিরোজপুরের কাউখালীতে ২২/৪/১৫ তারিখ একটি চুরি মামলায়ও আমার স্বামী ও দেবরকে জড়ানো হয়। অথচ ঐ এলাকায় আজ পর্যন্ত আমার স¦ামী ও দেবর কেউ যাতায়াত করেননি। এই রুস্তম বিভিন্ন সময়ে আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও ডাকাতী সহ নানা বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ দায়ের করে হয়রানি করে আসছে।

রুস্তমের বংশের ১৫ থেকে ২০ জন লোক প্রশাসন সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকুরিরত অবস্থায় আছ্।ে এ কারনে রুস্তুম গং স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় গায়ের জোরে এসবকিছু করার চেস্টা করছে এবং নানান ভাবে প্রভাব খাটানোর চেস্টা করে থাকেন এলাকায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক মামলায় ঢুকিয়ে যখন দমাতে পারেননি তখন আমার স্বামীকে ফাঁসানোর জন্য নতুন ফন্দি আটে। র‌্যাব-৮ এর কাছে এর আগে মিথ্যে তথ্য দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন রুস্তম ও তার সহযোগীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ অক্টোবার মঙ্গলবার বিকাল ৩ টার সময় নিজ বাড়ির সামনে স্লইচ গেট সংলগ্ন খালে গোসল করার সময় ছদ্দোবেশে আসা আমার স্বামীকে আটক করে র‌্যাব-৮ এর একদল সদস্য। ঐ দিন রাতে লাহুরি বাজারের প্রধান সড়কের পাশে গৌতম বাবুর সুপারি বাগানের খোলা জায়গা থেকে বস্তা ভরা দুটি অস্ত্র, ৪ রাউন্ড কার্তুজ ও দুটি চাকু উদ্ধার করে র‌্যাব। যা উপস্থিত জনতার কাছে এক প্রকার প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ঐ অস্ত্র গুলো নাকি আমার স্বামী দেলোয়ার খান ঐ বাগানের খোলা জায়গায় রেখেছিল বলে দাবি করা হয়। এ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি রুস্তমের সাজানো বলে সচেতন এলাকাবাসি তখন প্রতিবাদ জানান। এ ঘটনায় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে র‌্যাব-৮ এর ডিএডি লুৎফর রহমান বাদি হয়ে ১৬/১০/১৯ ইং তারিখ ইন্দুরকানি থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয় আমার স্বামী বাড়ির কাছে বলেশ্বর সহ আশপাশের বিভিন্ন নদ নদীতে বিভিন্ন সময়ে ডাকাতি করত।বিগত দশ বছরেও এসব নদ-নদীতে চুরি-ডাকাতির কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা এমন খবর স্থানীয় থানা পুলিশ সহ কারো জানা নেই।

তিনি দাবি করেন যন্ত্রযন্ত্র মূলক ভাবে বিভিন্ন এলাকায় জড়ানো আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি জিআর এবং দুটি নন জিআর মামলা চলমান ছাড়া আর কোন মামলা নেই। আমার স্বামী, চোর ডাকাত বা সন্ত্রাসী নয়। আমার স্বামী স্থানীয় ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক যে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত সহ প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানান তিনি।

এবিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক এবং স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল হালদার জানান, দেলোয়ার ও তার ভাই ই¯্রাফিল সবসময় এলাকায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে থাকেন। আমার জানামতে তারা চুরি ডাতাতিসহ কোন অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত নয়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইলিয়াছ আলী খান জানান, জমাজমির বিরোধ সহ দীর্ঘদিনের বংশীয় আধিপত্য বিস্তারের জেরের কারনে দেলোয়ার খানের পরিবারকে একের পর এক ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু এরাই নয়, এলাকার অনেক মানুষ রুস্তম সেখের গংদের দ্বারা নানা ভাবে নিগৃহিত হচ্ছে।

রুস্তম সেখ জানান, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে কাউখালী ও পার্শ্ববর্তি মোড়েলগঞ্জসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সে এলাকায় চুরি –ডাকাতি সহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। এদের অপরাদ মূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষী দেয়ায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়।

ইন্দুরকানী থানার এস আই শহিদুল ইসলাম বলেন, দেলোয়ার খানের বিরুদ্ধে ইন্দুরকানী থানায় অস্ত্র আইনসহ অন্যান্য থানায় আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। তবে তিনি স্থানীয ষড়যন্ত্রের শিকার কিনা তা সঠিক বলতে পারবনা।