
এছাড়া সংস্থার দুর্নীতি-দমন ইউনিটের (আকসু) মাধ্যমে দুর্নীতি ও ম্যাচ-গড়াপেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আইসিসির এই আকসু নিষিদ্ধ করেছে অনেক ক্রিকেটারকে; নিষিদ্ধ সব ক্রিকেটার নিয়ে নিয়ে লিখেছেন -জিয়া উল ইসলাম
- নিষিদ্ধ ২ বছর : সাল ২০১৯
বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব
বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজে দুইবার ও একই বছর এপ্রিলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচে একবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেলেও তা আইসিসিকে জানাননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী আইনে বলা আছে, কোনো ক্রিকেটার যদি জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর বা স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান, তাহলে দ্রুতই তা আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। না জানালে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। সাকিব আল হাসান সেই কথা না জানানো জন্য দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। তবে এক বছরের শাস্তি স্থগিত থাকবে। প্রথম এক বছরের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন নতুন করে কোনো অপরাধ না করলে পরবর্তী এক বছরের শাস্তি পেতে হবে না তাকে। সেক্ষেত্রে আগামী ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন তিনি। আর এ সময়ের মধ্যে আবার কোনো অপরাধ করলে স্থগিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
- নিষিদ্ধ ৫ বছর : সাল ২০১৩
বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা আশরাফুল
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধাক্কা আশরাফুলের ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়া। আশরাফুল অবশ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিক্সিং করেননি। ২০১৩ বিপিএলের একটি ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িয়ে পড়েন তখনকার আলোচিত বাংলাদেশ তারকা। পরে নিজের স্বীকারোক্তির কারণে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। আপিল করে রেহাই পান ৩ বছর। ৫ বছর পর ক্রিকেটে ফিরলেও এখনো নিজের পুরনো রূপে ফিরতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটার আশরাফুল।
- আজীবন নিষিদ্ধ : সাল ২০০০
ভারতীয় দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
১৯৯০ শতকে ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং ১৯৮৮ সালে অর্জুন পুরস্কার লাভ করা ক্রিকেটার মোহাম্মাদ আজহারউদ্দিন। ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হ্যানসি ক্রনিয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ আনা হলে বিশদ তদন্তে তার নাম বের হয়ে আসে। ক্রনিয়ে জানায়, ১৯৯৬ সালে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে আমি আজহারের ফোন পাই। তিনি আমাকে সন্ধ্যায় রুমে ডাকেন। সেখানে তিনি আমাকে মুকেশ গুপ্তা নামক এক জুয়াড়ির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে একা রেখে আজহার চলে যান। তদন্তে বের হয়ে আসে ১৯৯৬ সালে রাজকোটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবং ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালের পেপসি কাপে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সাথে আজহারের জড়িত থাকার ঘটনা। এতে আজহারকে আজীবনের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর কারণে আজহারকে ৯৯টি টেস্ট খেলেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয়েছিল। ২০১২ সালে আজহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি একজন রাজনীতিবিদ ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সদস্য।
- আজীবন নিষিদ্ধ : সাল ২০০০
ভারতীয় প্রতিভাবান ক্রিকেটার অজয় শর্মা
ভারতের হয়ে মাত্র ১টি টেস্ট ও ৩১ ওয়ানডে খেলা প্রতিভাবান ভারতীয় ক্রিকেটার অজয় শর্মা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজারের বেশি ম্যাচ খেলেছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে গড়ের দিক দিয়ে অজয় শর্মা তৃতীয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার গড় ছিল ৬৭ এর উপরে। ২০০০ সালে ক্রিকেটের কালো অধ্যায়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ের আজহারউদ্দিনের সাথে অজয় শর্মাও আজীবন নিষিদ্ধ হয়। পরে ২০১৪ সালে তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বয়স ততদিনে ৫০ পার হয়ে যায় তার তখন আর ক্রিকেট খেলা সম্ভব হয়নি।
- নিষিদ্ধ আজীবন : সাল ২০১৩
ভারতীয় ক্রিকেটার শান্তাকুমারন শ্রীশান্ত
৯ মে ২০১৩ সালে আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে একটি ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে পরিকল্পিতভাবে ১৪ রান দেন তিনি। ১৬ মে ২০১৩ বাজিকরদের থেকে টাকা গ্রহণ করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন শ্রীশান্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করে। তার সাথে রাজস্থান রয়েলসের আরেক খেলোয়াড় অঙ্কিত চৌহানকেও আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। পুলিশ অবশ্য তাকে গ্রেপ্তারের এক মাস পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
- আজীবন নিষিদ্ধ : সাল ২০০০
পাকিস্তানের বোলার আতাউর রেহমান
আতাউর রেহমান পাকিস্তানের উদীয়মান ফাস্ট বোলার ছিলেন। তাকে ২০০০ সালে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। পরে ২০০৬ সালে তার নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেয়া হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে আতাউর প্রথমে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ওয়াসিম আকরাম তাকে বাজে বল করার জন্য এক লাখ পাকিস্তানি রুপি দিয়েছিল। যদিও পরে তিনি তার স্টেটমেন্ট চেঞ্জ করেন। এতে বেচে যায় ওয়াসিম আর ফেঁসে যান আতাউর। তখনকার অনেকের মতেই ওয়াসিম আকরামও ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত ছিলেন তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ওয়াসিমের মতো বোলারকে হারাতে চায়নি তাই তাকে বাঁচিয়ে বলির পাঠা বানিয়েছিল আতাউর রহমান আর সেলিম মালিককে। কারণ সেলিম মালিকের বয়স তখন ৩৭ খুব বেশিদিন আর খেলতে পারবে না আর আতাউর রহমান ১৯৯৬ সালের পর পাকিস্তান দলে আর সুযোগ ই পায় নাই। অন্যদিকে ওয়াসিম আকরাম ছিল তখন তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ফর্মে।
- আজীবন নিষিদ্ধ : সাল ২০১০
পাকিস্তানের লেগস্পিনার দানিশ কেনেরিয়া
পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার দানিশ কেনেরিয়া। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট ন্যাটওয়েস্ট প্রো৪০ প্রতিযোগিতায় একটি ম্যাচে তার ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে ২০১০ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড তাকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০১০ সালে পাকিস্তান-দক্ষিণ সিরিজের স্কোয়াডে ছিলেন দানিশ কেনেরিয়া কিন্তু এ ঘটনার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড স্কোয়াড থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে কেনেরিয়া নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে আপিল করলেও ২০১৩ সালে তা নাকোচ করে দেয়া হয়।
- আজীবন নিষিদ্ধ : সাল ২০০০
পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার সেলিম মালিক
পাকিস্তানের ক্রিকেটার সেলিম মালিক। ফিক্সিংয়ের দায়ে পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আজীবন নিষিদ্ধ হয়। ১৯৯৪ সালে স্টিভ ওয়াহ, শেন ওয়ার্ন, টিম মে ও মার্ক ওয়াহকে ঘুষ নিয়ে বাজে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই দোষে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ঘটনার ৬ বছর পর ২০০০ সালে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হন সেলিম মালিক। তবে পরবর্তীতে ২০০৮ সালে লাহোরের স্থানীয় আদালতের আপত্তির কারণে তার আজীবন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে ততদিনে তার ক্রিকেট খেলার মতো বয়স আর ছিল না ফলে ব্যাট বল হাতে আর মাঠে নামা হয়নি। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ২০১২ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু তার আবেদন গ্রহণ করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
- নিষিদ্ধ ১০ বছর : সাল ২০১০
পাকিস্তানের ৩ ক্রিকেটার বাট-আসিফ-আমির
একবিংশ শতাব্দীতে ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দেয়া অন্যতম বড় ঘটনা এটি। ২০১০ সালে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান বাটের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ইচ্ছাকৃত নো বল করেন মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমির। পরে তাদের ফিক্সিং কেলেঙ্কারি তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই প্রমাণ হয়। যে কারণে আমিরকে ৫ বছর, আসিফকে ৭ বছর ও বাটকে ১০ বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে আসিফ ও বাটের নিষেধাজ্ঞাও ৫ বছরে নামিয়ে আনা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় কাটিয়ে তিন ক্রিকেটারই এখন ব্যাট-বলে ফিরেছেন। আমির বিশ্বকাপও খেলেছেন এবার।
- আজীবন নিষিদ্ধ : সাল ২০১৩
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান লু ভিনসেন্ট
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার ও ব্যাটসম্যান লু ভিনসেন্ট ২০১৩ সালে ডিসেম্বর আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট (আকসু) তার বিরুদ্ধে পেশাদার ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ, ইসিবি ৪০, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার বেশ কিছুসংখ্যক খেলায় পাতানো খেলার অভিযোগ উত্থাপন করে। ২০১৪ সালে ৮ জুন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ১ জুলাই ২০১৪ পাতানো খেলায় তিনি তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকার করেন। ইংল্যান্ড এবং ওয়লস ক্রিকেট বোর্ড যেকোনো ধরনের ক্রিকেট খেলায় ইসিবি কর্তৃক অয়োজিত খেলাসহ আইসিসি কিংবা অন্য কোনো জাতীয় ক্রিকেট ফেডারেশনের খেলায় তাকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা করা হয়।
- নিষিদ্ধ ২ বছর : সাল ২০০৭
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ব্যাটসম্যান স্যামুয়েলস
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ডানহাতি ব্যাটসম্যান মারলন স্যামুয়েলস। ২০০৭ সালে ২১ জানুযারি নাগপুরে অনুষ্ঠিত ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যেকার প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় ভারতীয় পুলিশ স্যামুয়েলসকে নিজ দলের তথ্য লেনদেনের কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দাবি করা হয় যে, এক জুয়াড়ির সাথে তিনি টেলিফোনে কথাবার্তা বলেছিলেন যা গোপনে ধারণ করা হয়। এ সম্পর্কীয় তথ্যাদি পরবর্তীকালে পুলিশ প্রকাশ করে। মে মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এ বিষয়ে শুনানির আয়োজন করে। ২৭ বছর বয়সি স্যামুয়েলসের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থগ্রহণ, সুবিধা গ্রহণ, অন্য পুরস্কার গ্রহণের কথা অভিযোগ আকারে উত্থাপন করা হয় যা ক্রিকেটকে কলুষিত করেছে। এর ফলে তাকে দুই বছরের জন্য ক্রিকেট জীবন থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।