বৃহঃ. মার্চ ২৮, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, শনিবার, ০৯নভেম্বর, ২০১৯ঃ গভীর সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা উপকূল অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড়টি বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

এর মধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ৬ নম্বর সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত’র জেলাগুলো হলো, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা। এসব এলাকার সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ‘বুলবুল’ বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমান গতিপথ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কা​ রয়েছে বলে জানান আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।

সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল জেলার উপকূলীয় অঞ্চল। বুলবুলের প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সারাদেশে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। উপকূলীয় এলাকায় বইছে দমকা হাওয়া। ১০ বছর পর এই প্রথম কোনও ঘূর্ণিঝড়ের বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতেই গভীর নিম্নচাপ থেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম)-এ পরিণত হয় ‘বুলবুল’। এখন সেটি ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। তারা জানান, বুলবুল ছোবল দেয়ার সময় যদি সাগরে জোয়ার থাকে তবে প্রলয়ঙ্করী হয়ে উঠতে পারে। আর ভাটা থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ কখনো বেশি হচ্ছে, কখনো কম হচ্ছে। তবে এর গতিপথ ও তীব্রতা যেকোনো মুহূর্তে বদলে পশ্চিমবঙ্গের দিকে সরে যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, উপকূলে আঘাত করার আগে সাধারণত সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার কখনো-কখনো দুর্বল হওয়ার নজিরও রয়েছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র বলয়ে থাকা সাত জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা।

‘বুলবুল’ মোকাবেলায় ২২টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে সরকার। শনিবারের জেএসসি-জেডিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পণ্য খালাস সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।

খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জরুরি সেবা দিতে উপকূলীয় বেশিরভাগ উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

এরইমধ্যে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এনজিও কর্মী, রোভার ও স্কাউট সদস্যরা।