পরস্পরের ব্যক্তিত্বের সংঘাত, শ্বশুরবাড়ি বনাম বাবারবাড়ি, শ্বশুর-শাশুড়ি, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি কারণে সংসার কখনও কখনও রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এ ঝগড়া অনেক সময় চলে যায় সীমারেখার বাইরেও।
আপনারা যদি হন মা-বাবা, তখন এ সীমারেখাটা কিন্তু খুব জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আপনাদের হার-জিতের মাশুল গুনতে হয় আপনার নিষ্পাপ শিশুটিকে, যাকে আলো, পানি, সার দিয়ে বড় করে তোলার দায়িত্ব আপনার।
শিশুরাই দেশ, সমাজ, জাতির ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের কর্ণধার। বাবা-মার কছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। তাদের ঘিরেই তো সব পরিকল্পনা সব স্বপ্ন। কিন্তু সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
শিশুরা পর্যবেক্ষণ ও বোঝাপড়ায় খুব দক্ষ, বাবা-মার কথা এবং কাজ সহজে শিশুদের চরিত্রের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। যদি বাবা-মা শিশুদের অনুভূতির কথা বিবেচনা না করে তাহলে শিশুদের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সে জন্য পত্যেক বাবা-মার উচিত শিশুর সামনে নিজেদের কথা ও কাজের প্রতি খেয়াল রাখা।
বাবা-মায়ের রোজ কলহ, চ্যাঁচামেচি, সমালোচনা, ব্যঙ্গ বিদ্রুপের কারণে বাচ্চাদের আচরণে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পরে।
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অশান্তির কারণে মন হয়ে থাকে তিক্ত। অনেক সময় পুরো রাগটা গিয়ে পড়ে শিশুটির ওপর। ফলে বাবা-মায়ের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্কটাই গড়ে উঠতে পারে না। তাই সন্তানকে একটা সুস্থ ভবিষ্যৎ দিতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন, হতে পারে আপনাদের মধ্যে অনেক মিলমিশ আছে কিংবা হয়তো অমিল আছে কিন্তু ঝগড়া হলে কোনো কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। এসব ক্ষেত্রে যতই রাগ হোক না কেন নিজের সন্তানের দিকটা বিবেচনা করে কিছুক্ষণের জন্য রাগ কন্ট্রোল করুন। অপরজনকে সেটা বোঝান। তারপর এমন জায়গায় গিয়ে ঝামেলা মেটান যেখানে সান্তান না শুনতে পারে। তবে সেটা একই বাড়িতে দরজা বন্ধ করে নয়। বাচ্চাদের বোকা বানানো সহজ নয়। তাই নিজেকে শান্ত করার উপায় খুঁজুন। মন শান্ত করার জন্য মিউজিক থেরাপি খুব ভালো উপায়। ভালো গান কিন্তু দুর্দান্ত ওষুধ। ভালো গান মন যেমন ভালো রাখে, তেমনই শান্তভাবে পরিস্থিতিকে হ্যান্ডল করারও সাহস জোগায়।
আপনাদের মধ্যে মতানৈক্য হলে, সন্তানকে কোনো একজনের দিকে টেনে নেবেন না বা তার কাছ থেকে সাপোর্ট খুঁজবেন না। এর ফলে সে আরেকজনের কাছ থেকে মানসিকভাবে দূরে চলে যায়। যা একটা সুন্দর পরিবারের ব্যালান্স নষ্ট করে।
- কী করবেন?
* নিজেদের রাগ প্রশমিত হলে সন্তানের সামনে সরি বলুন।
* পরস্পরের প্রতি যে কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ সন্তানের অনুপস্থিতিতে (যেমন স্কুলে থাকলে) আলোচনা করুন।
* নিজের সম্পর্ক যাই থাকুক বাবা-মা সম্পর্ককে ইতিবাচক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করুন।
* তর্কের সময় কখনই সন্তানের সামনে পরস্পরের প্রতি খারাপ মন্তব্য, অশ্রদ্ধাপূর্ণ শব্দ, ভাষা ব্যবহার করবেন না।
* ঝগড়ার সময় আতঙ্কপূর্ণ পরিবেশ যেমন : ভাংচুর করা গায়ে হাত তোলা হুমকি দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
* পরস্পরের প্রতি রাগ বা ক্ষোভ সন্তানদের মধ্য দিয়ে মেটানোর চেষ্টা করবেন না।