শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, শুক্রবার, ১৫নভেম্বর, ২০১৯ঃ বিশেষ প্রতিনিধিঃ প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপে দুর্নীতির মাধ্যমে নাম মাত্র মূল্যে কিশোরগঞ্জের কালিয়াচাপড়া সুগার মিল বিক্রয়। গত ১১-১১-১৯৯৯ইং তারিখে বাংলাদেশ প্রাইভেটাইজেশন কমিশন পাকুন্দিয়ায় কিশোরগঞ্জের কালিয়াচাপড়া সুগার মিলটি রুগ্ন দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে সুগার মিলটি বিক্রয়ের উদ্দেশ্য দেশী বিদেশী আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে সূত্রঃ মপবি/ প্রা: বো:/জস/৪/৯৭/৯৭৪ তারিখ ১১/১১/১৯৯৯ইং আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহবান করে।

প্রাইভেটাইজেশন কমিশন অসৎ উদ্দেশ্যে এই আন্তজাতিক বিজ্ঞপ্তিটি চাপা টেন্ডার করেন,যার ফলে আলোর মুখ দেখেনি এই হাজার কোটি টাকার টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দুর্নীতির মাধ্যমে প্রথমে মেসার্স সেন্ট্রাল প্রপার্টিজ লিঃ নামের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান সিডিউল ক্রয় করে। পরবর্তীতে দৈনিক সাহারা পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকতা পেশায় থাকার কারণে চলচ্ত্রি প্রকশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) থেকে এই টেন্ডারের বিষয়ে জানতে পারে এবং পরবর্তীতে অনেক কষ্ট করে তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাল্টি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর নামে একটি সিডিউল ক্রয় করে।

প্রসঙ্গত, সরকারী কোন টেন্ডার দরপত্র আহবান করলে কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহন বাধ্যতামূলক।প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সচিব ও টেন্ডার কমিটি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আবদুল মাতলুব আহমেদের সত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেন্ট্রাল প্রপার্টিজ লি: প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এই অবৈধ কাজটি করেন।

প্রাইভেটাইজেশন  কমিশন ও আবদুল মাতলুব আহমেদের সাথে সমোঝতা করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মেসার্স সেন্ট্রাল প্রপার্টিজ লি: প্রতিষ্ঠানকে নাম মাত্র মূল্যে এই হাজার কোটি টাকার সম্পদ কালিয়াচাপড়া সুগার মিলটি বিক্রয় করে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, এই সুগার মিলটি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যে দুইটি সিডিউল প্রাইভেটাইজেশন কমিশন বিক্রয় করেছে তার মধ্যে মেসার্স মাল্টি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ছিল প্রথম সর্বোচ্চ দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠান।আর আবদুল মাতলুব আহমেদের প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেন্ট্রাল প্রপার্টিজ লি: ছিল দ্বিতীয় দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠান।

প্রথম দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাল্টিট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৪,১২,৯৫,২৯৪/- টাকা প্রস্তাব করে এবং দ্বিতীয় দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেন্ট্রাল প্রপার্টিজ লি: ৪,০১,০০,০০০/- টাকা প্রস্তাব করে।পরবর্তীতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সচিব ও টেন্ডার কমিটি কারসাজি করে মেসার্স সেন্ট্রাল প্রপার্টিজ লি: এর মালিক আবদুল মাতলুব আহমেদের সাথে সমঝোতা করে তার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে গোপনে ৪৯,০০,০০০/- টাকা যোগ করে দুর্নীতির মাধ্যেমে মেসার্স সেন্ট্রাল  প্রপার্টিজ প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি ভাবে কাজ পাইয়ে দেয়।

দরপত্রের বিক্রয় চুক্তিতে সুগার মিলটি দ্রুত চালূ করার কথা উল্লেখ থাকলেও আবদুল মাতলুব আহমেদ মিলটি চালু না করে ২০০২ সালে জামাত-বিএনপির জোট সরকার ক্ষমতার আসার পরে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে উল্টো মিলের মালামাল বিক্রয় করে কয়েক কোটি টাকা এবং মিলের পুরাতন স্থাপনা সরিয়ে মিলটির সেল সেন্টার ও ট্রেড সেন্টারের জায়গায় দ্বিতল বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করে।মার্কেটটি এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে বিএনপি পন্থী এই ব্যবসায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সারাদেশে ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষনাকে কাজে লাগিয়ে কিশোগঞ্জের পাকুন্দিয়া কালিয়াচাপড়া  সুগার মিলের ১২০ একর জায়গার উপরে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) থেকে কিশোরগঞ্জ ইকোনোমিক জোন লিঃ এর অনুমতি নেন এবং ৩-৪-২০১৯ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে উদ্বোধন করান।

প্রকৃতপক্ষে অবৈধভাবে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন কতৃক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ক্রয় করা কালিয়াচাপড়া সুগার মিলের ১২০ একর জায়গা যার আনুমানিক মূল্যে এক হাজার কোটি টাকা। মিলের জায়গা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সারাদেশে ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষনাকে কাজে লাগিয়েছে বিএনপি পন্থী এই ব্যবসায়ী মাতলুব আহমেদ।

সরকারের কাছে পাকুন্দিয়া কিশোরগঞ্জ এলাকার মানুষের প্রানের দাবী কালিয়াচাপড়া সুগার মিলটির ১২০ একর জায়গা মাতলুব আহমেদরে হাত থেকে যতদ্রুত উদ্ধার করে এই জায়গায় নতুন করে ইন্ডাসট্রি তৈরি করে এলাকার বেকারত্ব দূর করা হোক।

অনুসন্ধানে পাকুন্দিয়া কিশোরগঞ্জে গিয়ে জানা যায় যে,জামাত-বিএনপি সরকারের সময় এই মাতলুব আহমেদ ছিল বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর কাছের লোক এবং তিনি ও ছিলেন বিএনপির একনিষ্ঠ আস্থাভাজন।সেই সূত্রে হারিস চৌধুরীর দাপট দেখিয়ে আবদুল মাতলুব আহমেদ এলাকায় সাধারণ মানুষদের নানা ভাবে হয়রানী করেছেন।

পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শাহাবুদ্দিন জানান, ১৯৯৯ সালে কালিয়াচাপড়া সুগার মিলটি মাতলুব নামের এক ব্যবসায়ী ক্রয় করে।তিনি ২০০২ সালে পর্যায়ক্রমে সুগার মিলটির সকল যন্ত্রপাতি বিক্রয় করে ফেলেন যাহার অনুমানিক মূল্যে একশত কোটি টাকার উপরে। ঐ সময়ে আমি এলাকার জনগন নিয়ে এই কাজে বাধা ও দিয়েছি এবং হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছিলাম কিন্তু কোন কাজে আসেনি। আবদুল মাতলুব আহমেদের অবৈধ টাকা ও ক্ষমতার কাছে আমি হেরে যাই। এমনকি আমার চেয়ারমানিত্ব শেষ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাকে সাসপেন্ড করান।পরবর্তীতে আমি আইনি সহায়তার মাধ্যমে আমার চেয়ারমানিত্ব ফিরে পাই।

চেয়ারম্যান মোঃ শাহাবুদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন,বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে দেশে অনেক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেছেন।তিনি কি পারে না তাকে নিয়ে এই বিএনপি পন্থী দুর্নীতিবাজ সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী মাতলুবের কিশোরগঞ্জ ইকোনোমিক জোন লিঃ এর নামে প্রতারনা ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে? এখানে আছে কি এই সাইনবোর্ডটি ছাড়া, দেখেন এই মিলের ভিতরে ঢুকে, এর ভিতরে কিছুই নাই।এই সাইনবোর্ড সর্বস্ব কিশোরগঞ্জ ইকোনোমিক জোন লিঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে উদ্বোধন করে জনগনকে বোকা বানিয়েছে এই মাতলুব।

অনুসন্ধানে আরও প্রতিয়মান হয় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের কর্মকর্তাদের হাত করে দুর্নীতি  ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রথম দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাল্টি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল হওয়ার পরেও তার কাছে মিলটি বিক্রয় না করে দুর্নীতির মাধ্যমে নাম মাত্র মূল্যে কালিয়াচাপড়া সুগার মিলটি দ্বিতীয় দরপত্রদাতা মেসার্স সেন্ট্রাল প্রপার্টিজ লি: এর কাছে বিক্রয় করেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশন।

সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশন ১১-১১-১৯৯৯ইং তারিখের টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাগজ পত্র জব্দ করে যাচাই বাছাই করলে এই ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হবে এবং এই ঘটনার সাথে কারা কারা জড়িত ছিল তা বেড়িয়ে আসবে খুবই সহজে।প্রমানিত হবে বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী কত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই কালিয়াচাপড়া সুগার মিল থেকে আর বিএনপি পন্থী ব্যবসায়ী আবদুল মাতলুব আহমেদকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন কিভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মেরে মাধ্যমে কালিয়াচাপড়া সুগার ‍মিলটি বিক্রয় ও হস্তান্তর করে।