দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি চুক্তির প্রথম ধাপ চূড়ান্ত করতে চাইছে। এমন সময়ে নতুন বিলকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। লন্ডনে অবস্থানরত ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতেই সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের ইতি টানতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভালো হবে।
মঙ্গলবার রাতে প্রতিনিধি পরিষদে তোলা উইঘুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্টটি ৪০৭-১ ভোটে পাস হয়। বিলটি আইনে পরিণত হতে উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদন লাগবে।
চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে পাস হওয়া বিলে সই করে সম্প্রতি তা আইনে পরিণত করেছেন ট্রাম্প। এর কয়েক দিনের মাথায় উইঘুরদের পক্ষে আরেকটি বিল পাস হলো প্রতিনিধি পরিষদে। কেনটাকি থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সদস্য থোমাস মেসি বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি হংকংয়ের বিলটির বিরুদ্ধেও ভোট দিয়েছিলেন।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, উইঘুরদের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাল্টা জবাব দিতে কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে।
বিলে কী রয়েছে
প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে বন্দিশিবিরে আটক রাখাসহ বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। উইঘুরদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে চীন বৈষম্য করেছে বলে বিলে অভিযোগ করা হয়েছে। যেমন তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম পালন, চলাফেলা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চীন কর্তৃপক্ষ বরাবরই অস্বীকার করেছে।
চীনে মুসলিম নির্যাতন
ঊর্ধ্বতন চীনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব
বড় ধরনের হস্তক্ষেপ, বলল চীন
বিলে উইঘুর নীতি নিয়ে জিনজিয়াংয়ের কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান চেন কুয়াংগোসহ চীনের কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেন, বিলে ইচ্ছাকৃতভাবে জিনজিয়াংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর কালিমালেপন করা হয়েছে। জিনজিয়াংয়ে উগ্রবাদ নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন সরকারের নীতির প্রতি বিদ্বেষপূর্ণভাবে হামলা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) চীনের সংবাদদাতা জন সুদওয়ার্থ বলেন, বিলটি আইনে পরিণত হলে এটি হবে চীনের উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘু মুসলমানদের বন্দিশিবিরে আটক রাখা নিয়ে বেইজিংকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের অন্যতম নজির।
চীনের জনসংখ্যায় মুসলমান হিস্যা ১-২ ভাগের বেশি নয়। তারও অর্ধেকের কম উইঘুর। বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, শিবিরে বন্দী উইঘুরদের মান্দারিন ভাষা শিখতে বাধ্য করা হয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসার কথা বলা এবং তাদের সঠিক আচরণ পরিচালনার নিয়মগুলো কঠোরভাবে মনে রাখতে বাধ্য করা হয়। এ অভ্যাসগুলোর অংশ হিসেবে চীন সরকার সাংঘর্ষিকভাবে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সংস্কৃতি ও জাতিগত সত্তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই শিক্ষা শিবিরের পাশাপাশি উইঘুর শিশুদের ক্যাম্প ও স্কুল রয়েছে, যেখানে তাদের পরিবার, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে ফেলা হয়।