বৃহঃ. মার্চ ২৮, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪, সোমবার ১৭ আগস্ট, ২০২০: নিবন্ধন আছে এমন কিছু রাজনৈতিক দলে নিজেদের কর্মী ঢোকানোর কৌশল নিয়েছে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। উদ্দেশ্য হলো ওই দলগুলোতে জামায়াতের প্রভাববলয় তৈরির পাশাপাশি দলের সমর্থক ও কর্মীবাহিনী রক্ষা করা।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এখন দলটির ওপর ঝুলে আছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার খড়্গ। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তাদের কর্মকাণ্ড ও নেতৃত্বের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং দ্বিতীয় দফা বিচারের দাবি উঠতে পারে। দলের বিপুল সম্পদ বাজেয়াপ্তের সম্ভাবনাও জোরাল হবে বলে অনেকে মনে করছেন।

নিজেদের নিবন্ধন ও প্রতীক না থাকায় গত নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছে জামায়াত। এ নিয়ে তাদের মাঠ পর্যায়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া আছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আছে এমন কোনো দলে নিজেদের নেতাকর্মীদের ঢুকিয়ে দিয়ে সেই রাজনৈতিক দলকে কবজায় নেওয়ার পরিকল্পনার কিছু তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নিজস্ব চিন্তায় গোপন এই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

সূত্রের দাবি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টিকে টার্গেট করে আপাতত পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। সূত্র বলছে, সম্প্রতি জামায়াতের আমির দলের মাঠ পর্যায়ের সাবেক দুই নেতা ও দলের প্রতি আস্থাভাজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে ডেকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। বনশ্রী এলাকায় বসবাসরত জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল কাদের সরকারের একটি টেলিফোন আলাপের সূত্র ধরে গোয়েন্দারা এ বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। চট্টগ্রামে একসময়কার ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা আ ফ ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী, যিনি ফ্রি থিংকার্স ফাউন্ডেশন নামের একটি বিতর্কিত গবেষণা সংস্থা পরিচালনা করেন এবং শিবির থেকে নির্বাচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি রেজাউল করিমকে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও রেজাউল করিম এরই মধ্যে কয়েকবার কল্যাণ পার্টির একজন নেতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। তাঁদের আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত আমিরের মনোনীত একজন ক্লিন ইমেজের সাবেক শিবির নেতাকে কল্যাণ পার্টির সেক্রেটারি পদে পদায়ন এবং একই সঙ্গে বেশ কিছু জামায়াত-শিবির নেতা ও কর্মীকে কল্যাণ পার্টিতে যোগদান করানোর চেষ্টা চলছে। সূত্রের দাবি, বিষয়টির প্রত্যক্ষ তদারকি করছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম ও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আমির সেলিম উদ্দিন। তাঁদের সঙ্গে কল্যাণ পার্টির গোপনে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

তবে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জানে না। তাঁর কানেও নেই।’ তিনি এটাও বলেন, ‘বর্তমান মহাসচিব নুরুল কবির ভূঁইয়া পিন্টু এ বছরও দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর নতুন কাউকে নেব কি না সে চিন্তা পরে করা হবে।’

জামায়াতের নেতা আব্দুল হালিমও কারো সঙ্গে কথা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘যাঁদের নাম বললেন বিগত দিনে তাঁদের সঙ্গে কথাই হয়নি। কিছু জানিই না।’ শিবিরের সাবেক নেতা রেজাউল করিম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’

আর বনশ্রী এলাকায় বসবাসকারী জামায়াত নেতা কাদের সরকার এসব ঘটনা মিথ্যা দাবি করে বলেন, জামায়াতের কেউ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব হলে সেটা তো দেখাই যাবে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করেও আ ফ ম জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে একই উদ্দেশ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গেও জামায়াতের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে। তবে কাদের সিদ্দিকী তা প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানা যায়।

জাহাঙ্গীর চৌধুরী, আব্দুল কাদের সরকার ও রেজাউল করিমের সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় জামায়াত সমর্থিত বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী আর্থিক জোগানদার হিসেবে সম্পৃক্ত আছেন মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে।

আব্দুল কাদের সরকারের ফোনালাপের রেকর্ড থেকে গোয়েন্দারা জানতে পারে যে তারা আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকীসহ আরো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। খুব শিগগির জামায়াতের মনোনীত একজনকে কল্যাণ পার্টির নতুন সেক্রেটারি মনোনীত করা এবং গোপনে বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবিরকর্মীর কল্যাণ পার্টিতে যোগদান করার কাজটি তারা বেশ গুছিয়ে এনেছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং দলে সংস্কারের দাবি তুলে ব্যর্থ হয় দলটির তরুণ নেতৃত্বের একটি অংশ। প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ওই অংশ এরই মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে গিয়ে চলতি বছরের ২ মে নতুন দল গঠন করেছে; যার পরিপ্রেক্ষিতে দলের ভাঙন ঠেকানোর জন্য বর্তমান জামায়াতকে বিলুপ্ত করে দিয়ে নিজেরা নতুন আরেকটি দল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের মজলিসে শুরা। তবে তা বাস্তবায়নে এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। দলের সেক্রেটারি জেনারেলকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি প্রস্তাবিত নতুন দলের কিছু খসড়া তৈরি করলেও বর্তমান নেতৃত্বের অনীহার কারণে তা থমকে আছে।