শনি. এপ্রি ২০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪ বুধবার ২৬ আগস্ট, ২০২০: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ইসহাক সরকারকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। এই মুক্তি যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে আর ফুটপাত নয়, এবার রাজপথের সব কংক্রিট উড়িয়ে আমরা এমন ব্যারিকেড তৈরি করব, আপনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো ক্ষমতায় টিকে আছেন বন্দুকের নলের জোরে। বন্দুকও অনেক সময় কাজ করে না, অকার্যকর হয়ে যায় জনগণের শক্তির কাছে।’ আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন আয়োজিত ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

রিজভী প্রশ্ন করেন, ইসহাক সরকার কী অপরাধ করেছে যে ওর নামে ৩০০টি মামলা। সে তো ফরিদপুরে ছাত্রলীগ নেতার মতো টাকা পাচার করেনি। সে তো খালেদ, শামীম, সম্রাটের মতো ক্যাসিনো ব্যবসা করেনি। তারপরও কেন আজ সে দুই বছরের অধিককাল কারাগারে? টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত ইসহাক সরকার? সে কি ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত? যারা দীর্ঘ ১০ বছর প্রচণ্ড প্রতাপে ক্যাসিনো ব্যবসা করে আসছে, এরা কারা? এরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে টাকা নিয়ে দরকষাকষি করে যে ছাত্রলীগের জন্য এই টাকাটা দিতে হবে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্ট ও একুশে আগস্ট প্রসঙ্গে কত কথাই বলছেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে। তাঁদের দোষ কী? রাজনৈতিক নেতা যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এটা সহ্য করতে পারছেন না অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন সেনাবাহিনীর মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন, এটা তাঁর সহ্য হচ্ছে না। তাই তিনি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মনগড়া কথা বলছেন। কারণ, তিনি জানেন তিনি কথা বললে কেউ কিছু বলতে পারবে না, কারণ সব মিডিয়া তাঁর নিয়ন্ত্রণে। গণতন্ত্রের স্বাধীনতা গোরস্থানে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মনের ইচ্ছা কী আপনারা কি জানেন? তাঁর মনের ইচ্ছা, আমি যা বলব ওটা বিশ্বাস করতে হবে। আমি অন্যায় বলব, মিথ্যা বলব, কলঙ্কলেপন করব, বাজে কথা বলব দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম একটার পর একটা তিনি কর্মসূচি সাজিয়ে রেখেছেন।’

গতকাল ফেনী জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কী অপরাধ করেছে ছাত্রদল নেতা রিয়াদ? অপরাধ হচ্ছে, দেশের এই করোনাকালে বন্যা দুর্যোগের সময় তারা ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে অসহায়দের দ্বারে দ্বারে। ফরিদপুরের ছাত্রলীগের নেতার দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের ঘটনা তো ঢাকতে হবে। যারা ফরিদপুরের মতো শহরে মার্সেডিজ গাড়ি চালায়, এগুলো পত্রপত্রিকায় এসেছে, এগুলো তো ঢাকতে হবে। জেকেজির সাবরীনা, রিজেন্টের সাহেদ এবং সম্রাট বা খালেদের (ঘটনা) তো ঢাকতে হবে। এসব ঘটনা ঢাকার জন্যই ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘চারদিকে এই সরকারের আর কোনো ভিত্তি নেই। দেশের জনগণ থেকে তাঁরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। প্রধানমন্ত্রী, আপনার তো এত ক্ষমতা, যাকে তাকে ক্রসফায়ার দিতে পারেন, গুম করতে পারেন, কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু দিতে ভয় পান। দিনের নির্বাচন রাতে করেন। সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন, ওই সাহস আপনার নেই। কারণ, জনগণ আপনার শত্রু, তাই জনগণকে ভয় করে রাতের অন্ধকারে চোরের মতো নির্বাচন করে আজ ইসহাক সরকারদের বন্দি করে রেখেছেন।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘সরকার ২১ আগস্ট ও ১৫ আগস্ট দুটোকে একসঙ্গে মেলাতে চাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে এ ছাড়া সরকারের হাতে কোনো পুঁজি নেই। যে ব্যক্তি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন… এই যে টেলিভিশন, এই যে পত্রপত্রিকা—এটি কার অবদান? এটি জিয়াউর রহমানের অবদান। তাই প্রধানমন্ত্রীর এত হিংসা। যিনি খন্দকার মোশতাককে রক্তাক্ত লাশ ডিঙিয়ে শপথ পড়ালেন, তিনি আজ আপনার অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা)। তাঁকে তো আপনি খলনায়ক বলেন না। আপনার তাঁবেদারি করলে তার সব দোষ মাফ। সব দোষ কার? জিয়াউর রহমানের, কারণ তিনি দেশে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন, খবরের কাগজের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; আর, খালেদা জিয়ার (দোষ), কারণ তিনি আবার দেশে গণতন্ত্র দিয়েছেন। আজও তিনি লড়াই করছেন বর্তমান এ দুই নম্বর বাকশালি সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিমসহ ছাত্রদলের কয়েকশ নেতাকর্মী।