দেশের মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে উত্তাল পদ্মা নদীর বুকে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ব বৃহৎ সেতু। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০১৪ সালের জুনে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানিকে। ১২, ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায় এই চীনা প্রতিষ্ঠান। ছয় দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ চার বছরে শেষ করে ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে উদ্বোধনের লক্ষ্য দিয়েছিল সরকার।
২০১৫ সালে পাইল ড্রাইভের কাজ শুরু। এরপর ২২টি পিলারের পাইলিংয়ে দেখা দেয় জটিলতা। নদীর তলদেশের মাটির গঠনের কারণে বসানো যাচ্ছিল না পিলার। এর নকশা জটিলতার সমাধান পেতে লাগে দেড় বছর। ২০২০ সালে করোনা-বন্যায় আবারো থমকে যায় কাজের গতি। এ পর্যন্ত চায়না মেজর ব্রিজকে পৌঁনে তিন বছর বাড়তি সময় দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তারপরও সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় লোকবল ও যন্ত্রপাতি বসিয়ে রাখার জন্য ক্ষতিপূরণ চাইছে তারা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, করোনা মহামারি এটা কিন্ত ঠিকাদার বা আমাদের দায় না। বাট এ টাইমটা বাড়ছে, এ কারণে তারা ক্লেইম করলে এটা লজিক্যাল যে কিছু ক্ষতিপূরণ পাবে। কারণ তাদের ইকুইপমেন্ট বসে ছিল। যেগুলো যৌক্তিক সেসব পরিশোধ করা হচ্ছে। তারপরও সন্তুষ্ট না হলে আরবিট্রেটর নিয়োগ হবে। সিঙ্গাপুরে দুপক্ষের শুনানি হবে। সে পর্যায়ে আসেনি। আরবিট্রেশন হলে দুপক্ষের আন্তর্জাতিক আইনজীবী যুক্ত হবে, কনসালটেন্ট যুক্ত হবেন। তাদেরও যেমন ব্যয় হবে, আমাদেরও হবে। সেক্ষেত্রে যৌথভাবে আলোচনা করে সমাধান করাই যৌক্তিক।
চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি দিনে ৩৯ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। আর ৩১ লাখ হিসাবে এরই মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে বলে জনিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, তারা ৬০০ কোটি টাকা ক্লেইম করেছিল। আমাদের কনসালটেন্ট যেটা মত দিয়েছে সেই অনুযায়ী তিনশো কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। যেটা লজিক্যাল সেটাই দেয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্লেইম করা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। এখন হয়তো ৪০/৫০টা আসছে। আরো আসবেই এবং আমরা মীমাংসা করতেই থাকব। এখন পর্যন্ত আমাদের অমীমাংসিত খুব বেশি নাই। যদি কোনো বড় ধরণের সমস্যা হয় আমাদের আরবিট্রেশনে যেতে হতে পারে, এখন পর্যন্ত এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। যে ক্লেইমগুলো আসছে সেগুলো আমাদের চুক্তিমূল্যের মধ্যেই থাকছে। চুক্তির বাইরে কিছু এখনো হয়নি।
কাজ পেছানোয় শুকনো মৌসুমকে টার্গেট করে পদ্মা সেতুর কাজে আরো গতি আনতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৯০ ভাগ, নদী শাসন ৭৪ দশমিক পাঁচ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক পাঁচ ভাগ।