বৃহঃ. এপ্রি ২৫, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪, শুক্রবার, ২০ নভেম্বর ২০২০: মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে। কর্মগুনেই মানুষ কাউকে শ্রদ্ধা করেন আবার কাউকে ঘৃণা করেন। কেউ কেউ চিরদিন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকেন, কেউ কেউ মৃত্যুর পরপরই হারিয়ে যান। কর্মেই মানুষ হয় শ্রদ্ধার, ভক্তির, সম্মানের বা ঘৃণার তবে স্মরণীয়। আমাদের দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দেশ ও মানুষের জন্য ভালবাসা ও কর্মগুনে আজ ঘরে ঘরে মানুষ যার আশায় আশান্বিত তিঁনি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা জনাব তারেক রহমান। ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের রোষানলে আর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের জিঘাংসা ও প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি লন্ডনে থেকেও মানুষের ভোটাধিকার ফিরে দেয়ার জন্য অর্থাৎ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য, ভূ-লুন্ঠিত মানবাধিকার ও কলুষিত রাজনীতি সুস্থির-স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার জন্য, মানুষের জান মালের নিরাপত্তার জন্য এবং নিজের দল (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি)- কে আরো শক্তিশালী ও আরো জনসম্পৃক্ত করার জন্য সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে মানুষ তাঁর জন্মদিনে (২০ নভেম্বর জননতো জনাব তারেক রহমান এর জন্মদিন) দোয়া করতেছেন এবং তার কর্মে আশায় আশান্বিত হচ্ছেন। কেননা, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে মানুষ মুক্তভাবে কথা বলতে পারতেছেন না, লেখতে পারতেছেন না, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেছেন না। যেনো অধিকার হারা মানুষ ঘরে ঘরে গুমরে গুমরে কাঁদছেন আর বৈশ^ায়িক প্রেক্ষিতে দেশের অবনমন দেখতেছেন। নিচের কিছু তথ্য-উপাত্তসমূহের ভিত্তিতে পাঠকরা বুঝতে পারবেন আশাকরি।

২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচন। এ নির্বাচনে মানুষ তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করতে পারেন নাই। মানুষ ভোট দিতে গেলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী ক্যাডারদের ত্রাসে মানুষ ভোট দিতে পারেন নাই। মধ্যরাতে প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় ক্ষমতাসীন ক্যাডাররা ছিল মেরে আগেই ব্যালট বাক্স ভরান যা বিবিসি’র সাংবাদিকের ক্যামেরাই ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই ধরা পরে। আর ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারীর নির্বাচন তো সকলেরই জানা। ফলে দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা অত্যন্ত লাজুক হয়ে পড়ে।

বিশে^র ১২৯ টি দেশের গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি, সুশাসনের অবস্থান নিয়ে এক সমীক্ষার পর জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেন তাতে বলা হয় বাংলাদেশ আর গণতান্ত্রিক নয়। রিপোর্টে নতুন পাঁচ স্বৈরাতান্ত্রিক দেশের কথা বলা হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশ আছে; বাকী চার দেশে হল- লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া, উগান্ডা।
ইকোনেমিস্ট ইনটেলিজেন্স জানুয়ারী, ২০১৯ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেন সে রিপোর্টে গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, নাগরিক অধিকার, সরকারের সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এসব মানদন্ডে প্রতিবেদন তৈরি করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এই রির্পোটে বাংলাদেশ ‘হাইব্রিড রেজিম’ অবস্থানে আছে-যেখানে স্কোর ৯-১০ হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৮-৯ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৫-৬ হলে হাইব্রিড রেজিম, ০-৪ হলে স্বৈরাতন্ত্র। একটি দেশের কোন কোন বৈশিষ্টের জন্য হাইব্রিড রেজিমে পড়ে তার ব্যাখায় আছে- ক. নির্বাচনে বেশ অনিয়মের ঘটনা ঘটে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতায় প্রকিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। খ. বিরোধী দল ও প্রার্থীর উপর সরকারী চাপ খুবই সাধারণ ঘটনা। গ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সরকারের সক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়ে মারাত্মক দুর্বল দেখা যায়। ঘ. দুর্নীতির বিস্তার প্রায় সর্বত্র এবং আইনের শাসন খুবই দুর্বল। ঙ. সিভিল সোসাইটি দুর্বল। চ. সাধারণ সাংবাদিকরা হয়রানি ও চাপের মুখে থাকে এবং বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীন নয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) আইনের শাসন সূচক ২০২০ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় আরো তিন ধাপ পিছিয়ে ১২৮ দেশের মধ্যে ১১৫ তম অবস্থানে। মৌলিক অধিকারের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরো খারাপ ১২৮ টি দেশের মধ্যে ১২২ অবস্থানে। এছাড়াও নি¤œ আয়ের ৩০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২২ তম।
প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারের বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের আরো অবনতি হয়ে ১৮০ টি দেশের মধ্যে অবস্থান ১৫২ তম। ২১ এপ্রিল ২০২০ বার্ষিক এ সূচক প্রকাশিত হয়। বিশ^ সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সূচক ২০২০ (ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স ২০২০)- এ সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন মারাত্মকভাবে বেড়েছে। নিউজ ওয়েবসাইট বন্ধ এবং সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনা বেড়েছে বলে রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডার-এর বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐ রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বিচারিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে নির্বাহীরা।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বৈশি^ক অর্থনীতির ৯ টি খাতে বাংলাদেশের অবস্থান লাজুক। সংস্থাটি ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রির্পোট ২০১৯’ প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন। প্রতিবেদনে ১৪১ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান গতবারের চেয়ে আরো ২ ধাপ পিছিয়ে ১০৫ তম। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের লাজুক খাতগুলো হল-
ক. নিরাপত্তা, দুর্নীতি ও বাক-স্বাধীনতাঃ এ সূচকে বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থানে। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ২০১৯ সূচকে প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান গতবারের চেয়ে ৪ ধাপ পিছিয়ে ১২৩ তম।
খ. সেবাখাত নি¤œমুখী ঃ এ খাতে গতবারের চেয়ে আরো নিচে নেমেছে অর্থাৎ ১০৯ তম থেকে ১১৩ তম অবস্থানে এসেছে। নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ও পানি সরবরাহের উপর নির্ভরশীলতায় প্রতিবেদন অনুযায়ী আগের ১১৬ তম অবস্থান থেকে পিছিয়ে এবার ১২৪ তম অবস্থানে।

গ.তথ্য-প্রযুক্তি গ্রহণে সক্ষমতাঃ প্রতিবেদন অনুযায়ী এ খাতেও বাংলাদেশ আগের ১০২ তম অবস্থান থেকে পিছিয়ে বর্তমানে ১০৮ তম অবস্থানে।

ঘ. সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাঃ প্রতিবেদন অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি ও ঋণের বৈচিত্র্য বিশ্লেষণে আগেরবারের চেয়ে ৭ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৫ তম।

ঙ. গ্রাজুয়েটদের মান ও শ্রেণীকক্ষে পাঠদানঃ মাধ্যমিক ও বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক কাজের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন তার কতটা অর্জন করতে পারে-এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান আগের বারের চেয়ে ২ ধাপ পিছিয়ে ১২৩ তম।

চ. নিয়োগ-বরখাস্ত ও শ্রমিক অধিকারঃ শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা এবং নমনীয়তা এসব বিষয়ে গতবারের চেয়ে ৬ ধাপ পিছিয়ে ১২১ তম অবস্থানে বাংলাদেশ।

ছ. লাজুক ব্যাংকিং ও অথনৈতিক ব্যবস্থাপনাঃ ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা, ক্রেডিট গ্যাপ, ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি সূচকে বাংলাদেশ আফ্রিকার দেশ মালি বা ঘানার নিচে অবস্থান ১২৯ তম।

জ. ব্যবসায় বৈচিত্র্যঃ আর্থিক সামর্থ্য, ব্যবসা শুরু করার সময় ও উদ্যোক্তা এসব বিষয় নিয়ে গতবছরের চেয়ে ১ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০ তম।

ঝ. উদ্ভাবনী সক্ষমতাঃ বিভিন্ন দক্ষকর্মী, স্টকহোল্ডারদের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতা, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণ এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান গতবছরের চেয়ে ৩ ধাপ পিছিয়ে ১০৫ তম।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি (সিডব্লিউইউআর) তাদের ওয়েবসাইটে ০৮ জুন ২০২০ইং-এ প্রকাশিত বিশ^ র‌্যাংকিংয়ে দেখা যায় বিশে^র সেরা ১০০০ বিশ^বিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোন বিশ^বিদ্যালয় নেই। এতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগদের সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র বুঝা যায়। আর সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে দেশের স্বাস্থ্য খাতের ভয়াবহ চিত্র বের হয়ে আসছে। অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরা এ খাত। দেশে নেই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও ভাল মানের হাসপাতল। আমেরিকার সংবাদবিষয়ক বিখ্যাত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘নিউজউইক’ জরিপ চালিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে বিশে^র সেরা ১০০ হাসপাতালের তালিকা প্রকাশ করেছেন সে তালিকায় বাংলাদেশের কোন হাসপাতাল নেই। দেশে আজো করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিদ্যমান এবং ইদানিং আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনার ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার।
বৈশ^ায়িক এ চিত্রে দেশের বিভিন্ন খাতের অবনমন থেকে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে, মানুষের অধিকার ফিরে দিতে, জান মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে দিন-রাত পরিশ্রম করে সুকৌশলে পরিকল্পনামাফিক দল, জনগণ ও দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন জননতো জনাব তারেক রহমান। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া প্রতিটি ঘরে ঘরে মানুষ আজ তা অনুধাবন করতে পারতেছেন এবং তার জন্য দোয়া করতেছেন। মানুষ আশায় আছেন তিঁনিই পারবেন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করতে, ভোটাধিকার ফিরে দিতে, বাক-স্বাধীনতা মুক্ত করতে সর্বোপরি দেশে সুশাসন, সুআইন, সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণ ভাবেন তিঁনি পারবেন, তিঁনি এগিয়ে যাবেন, বিজয় তাঁরই হবে। তাঁর জন্মদিনে জনগণ সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করেন। বাংলাদেশের জনগণ আশান্বিত তিঁনি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মানুষের অধিকারের নবসূর্য উদিত করবেন এবং সে আলোয় ধুঁয়ে-মুছে যাবে দুঃশাসন, বিরাজ করবে of the people, by the people, for the people.

লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।