দুই মাস ধরে করোনা থেকে বাঁচার জন্য উদ্ভাবক ইয়েজিন আল কোয়াশি টরন্টোর পাতালরেলে আসা-যাওয়া করছেন একটি বিশাল কালো রঙের ‘অদ্ভুতুড়ে হেলমেট’ পরে। হেলমেটটি সম্পূর্ণ ‘হ্যাজম্যাট’ প্রক্রিয়ায় তৈরি। অর্থাৎ এটি সব ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিক উপকরণ ও রোগজীবাণু থেকে ব্যবহারকারীকে মুক্ত রাখে। এর পেছনে রয়েছে একটি ব্যাটারিচালিত পাখা ও বায়ু পরিশোধক যন্ত্র, যা কি না নিঃশ্বাসের মাধ্যমে টেনে আনা বাতাসকে পরিশোধন করে দূষিত বায়ুকে বাইরে বের করে দেয়।
স্বভাবতই ৩২ বছর বয়সী কোয়াশিকে দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যান। কেউ কেউ তো মন্তব্য করতেও পিছুপা হন। কোয়াশি বলেন, ‘হঠাৎ আমাকে দেখে অনেকে হয়তো মনে করেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির কোনো চরিত্র বাস্তবজীবনে উঠে এসেছে।’
মার্কিন নৌবাহিনীতে চাকরি করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিস এহলিংগার হচ্ছেন আরেকজন হ্যাজম্যাট হেলমেট প্রস্তুতকারক। ৩৫ বছর বয়সী ক্রিস বলেন, ‘এই হেলমেটগুলো ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য আমাদের ধীরে ধীরে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছে।’ তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘ভ্যালহালা মেডিক্যাল ডিজাইন’-এর তৈরি করা ‘এনই-১’ হেলমেটটি দেখতে কিছুটা মোটরসাইকেলের হেলমেটের মতো। এতে ব্যাটারিচালিত বায়ু পরিশোধন যন্ত্রের পাশাপাশি রয়েছে মাইক্রোফোন এবং স্পিকার। ফলে এটির ব্যবহারকারী হেলমেট না খুলেই সহজে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে এবং শুনতে পারবেন।
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রাপ্তি সংবাদ আসছে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এ অবস্থায় কি এ ধরনের হেলমেটের আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে?
‘এয়ার’ নামের পিএপিআর হেলমেট (পাওয়ার্ড এয়ার পিউরিফাইং রেস্পিরেটর) নির্মাতা মাইকেল হলো বিশ্বাস করেন যে অদূর ভবিষ্যতে কভিডের ভয় সেভাবে না থাকলেও দূষিত বায়ু থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য মানুষ এ ধরনের হেলমেট ব্যবহারে ঠিকই উৎসাহী হবে।
তবে এর পরও প্রশ্ন থেকে যায়, শুধু বাতাসের মাধ্যমে প্রবাহিত ভাইরাস কিংবা দূষিত বায়ু থেকে বাঁচার জন্য কি এ ধরনের হেলমেট কেউ ব্যবহার করবে?
নাতাশা ডুউইনের প্রতিষ্ঠান ‘অক্টো সেফটি ডিভাইসেস’ ফেস মাস্ক বানিয়ে থাকেন। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, ‘হেলমেটের সুবিধা হচ্ছে এতে মানুষের মুখ দেখা যায়। আপনি হাসি এবং মুখভঙ্গি দেখতে পাবেন এবং একই সঙ্গে নিরাপদেও থাকবেন। তবে ব্যাটারিচালিত হেলমেটগুলো যেকোনো সময় বিকল হয়ে যেতে পারে এবং হঠাৎ সে রকম কিছু হলে ব্যবহারকারী একরকম বিপাকেই পরবেন।’
উল্লিখিত তিনটি হেলমেটের দাম ১৩ হাজার থেকে শুরু করে ৩৩ হাজার টাকার মধ্যে, কিন্তু এর কোনোটিই এখনো বাজারজাতকরণের ছাড়পত্র পায়নি। তবে প্রত্যেকেই দাবি করছেন যে প্রয়োজনীয় অনুমতি তাঁরা অল্পদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
শিকাগোর ওয়েইস মেমোরিয়াল হাসপাতালের কভিড-১৯ প্রতিরোধ দলের প্রধান চিকিৎসক ডা. সুজান ফাম বলেন, ‘এই চমকপ্রদ হেলমেটগুলো কভিড মোকাবেলায় ঠিক কতটুকু উপযোগী, তা সময়ই বলে দেবে। এখন অবশ্য এ ব্যাপারে মন্তব্য করার মতো যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণালব্ধ তথ্য আমাদের হাতে নেই।’
তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এ ধরনের হেলমেটগুলো সামাজিক বিভেদ তৈরি করতে পারে। যাঁরা এই উন্নত প্রযুক্তির ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন না তাঁরা হয়তো মনে মনে ভাবতেই পারেন—শুধু সার্জিক্যাল মুখোশ পরে কি নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারছি?
এই হেলমেটগুলোর বিক্রি নিঃসন্দেহে ভালো হবে। কেননা এর ব্যবহারে সত্যিকারের সুরক্ষা কতটুকু পাওয়া যাবে তা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এতে যে ব্যবহারকারীর মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।