খােলাবাজার২৪,বুধবার,০৮সেপ্টেম্বর ,২০২১ঃ বিশারকান্দি থেকে ঘুরে এসে, বানারীপাড়া প্রতিনিধি,আব্দুল আউয়ালঃ সাঁকোর গ্রাম বিশারকান্দি দূর্ভোগে জনজীবন। যে গ্রামে শত শত বাঁশ ও জীবন্ত গাছের সাকো বিদ্যমান। বানারীপাড়া উপজেলার পশ্চিম উত্তর সীমান্তে বিলাঞ্চল খ্যাত বিশারকান্দি ইউনিয়ন। গ্রামটিই তিন ভাগে ভাগ হয়ে ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গ্রামে প্রায় ১১ হাজার লোক বসবাস। একই ইউনিয়নের ৬ ওয়ার্ডের মানুষ গাড়ীতে চলাচল করতে পারলেও ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষকে চলাচল করতে হয় নৌকায়। পাকা রাস্তাতো দুরের কথা মাটির রাস্তাও নেই। নেই কোন পুল ব্রিজ কালভার্ট। বিলাঞ্চল খ্যাত বিশারকান্দি ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষি কাজ হলেও ওই এলাকার (১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ড)শতভাগ মানুষের পেশা কৃষি কাজ। বিশারকান্দি এলাকার প্রায় ১১হাজার মানুষ কৃষি পন্য দারা মানুষের ক্ষেদমত করলেও তাদের জন্য নেই চলাচল করার মত কোন সড়ক। বছরের অর্ধেক সময় পানির নিচে থাকে এলাকাটি। ৬ মাস মাটিতে চাষাবাদ করলেও জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত ভাসমান ম্যাদা বেঁধে তার ওপর চাষাবাদ করতে হয়। অতি সম্প্রতি দু একটি স্লাভ ব্রিজ নির্মান কাজ শুরু হলেও আজ ও নির্মান করা হয়নি কোন পাকা সড়ক। একান্ত এলাকাবাসীর চলা চলের জন্য কয়েকটি রাস্তা স্থানীয় ভাবে নির্মান করা হলেও তা আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত থাকে ভরাডুবি পানির নিচে। ফলে একমাত্র বাহন নৌকাই তাদের ভরসা। স্কুল কলেজের অভাব থাকলেও লেখা পড়ায় ওই এলাকার মানুষ এগিয়ে রয়েছে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এলাকাটি সমৃদ্ধশালী বলা চলে। ওই এলাকার এমন কোন বাড়ী পাওয়া যাবেনা যে বাড়ীতে কম হলেও একজন এস এস সি পাশ মানুষ নেই। শিক্ষক,কাডার, ব্যাংকারসহ নানা শ্রেনী পেশায় সংযুক্ত রয়েছে শতশত মানুষ। যে যত বড় চাকুড়েই হন না কেন বাপ-দাদার মূল পেশাকে তারা এখনো আকড়ে রয়েছেন।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে জামভিটা এলাকার একটি গ্রাম্য দোকানে ১৫ জন লোক বসে চা খাচ্ছিল আর আড্ডা দিচ্ছিল। প্রথমে তাদের দেখে আমার সফর সঙ্গীরা বেজায় রাগান্বিত হয়েছিল। করোনা কালীন সময়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়ায়। পরক্ষনেই তা প্রশমিত হল। তারা জানাল একটি পুল নির্মানকে কেন্দ্র করে এখানে জড়ো হওয়া। তাদের মধ্যে ৪ জনই স্কুল কলেজের শিক্ষক, ২ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অন্যরা ও কেউ লেখাপড়া করছে কেউ আবার লেখা পড়ার পার্ট চুকিয়ে জমি জমা নিয়ে কাজ করছেন। কেউ আবার ওই এলাকার ফসল কিনে অন্য এলাকায় বিক্রি করেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে উল্টো তারা আমাদের ঘিরে ধরেন। তাদের আকুতি আপনারা একটু আমাদের জনদুর্ভোগের কথা রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি সমাজের উচ্চ বিত্তশীল মহলে তুলে ধরুন আশা করি আপনাদের লেখনীতে একটু হলেও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে । ওই এলাকার সন্তান একটি ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন ওই এলাকার ছেলে মেয়েরা নৌকায় করে দুর দুরান্তে গিয়ে কষ্ট করে লেখা পড়া করে থাকে। পড়া শুনার পাশাপাশি তারা অভিভাবকদের সাথে ক্ষেতে কাজ করে। বৈঠাকাটা কলেজের সহকারী অধ্যাপক জিয়াউল কবির বলেন, বিশারকান্দি ইউনিয়নে একসময় স্কুল কলেজ মাদ্রাসার কথা ভাবাই ছিল স্বপ্নের মত। কোন প্রকারে প্রাথমিক পাশ করে বানারীপাড়া সদর কিংবা স্বরূপকাঠি গিয়ে লজিং থেকে লেখা পড়া করতে হত। বর্তমানে কেবল উচ্চ শিক্ষার জন্যই ইউনিয়নের বাইরে যেতে হয়। আজ বিশারকান্দি ইউনিয়নে একটি কলেজ, চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাদ্রাসা, ১৭ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। বিশারকান্দি গ্রামের তিনটি ওয়ার্ডে একটি মাধ্যমিক ও ৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের সাথেও কোন সংযোগ সড়ক নেই। ফলে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নৌকা বেয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। এর পরেও ওই এলাকায় শিক্ষার হার ইর্শনীয়। ওই এলাকার শিক্ষার হার ৮০% এর উপরে হবে বলে জানিয়েছেন। বিশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃসাইফুল ইসলাম সান্ত আজকের পত্রিকাকে জানান, বিশারকান্দি ইউনিয়ন এ প্রায় ৩৫০ এর উপরে সাকোঁ রয়েছে । সবচেয়ে ১ নং ওয়ার্ডে বেশি ।এরপর ৩ নং৬ নং ও ৮নং ওয়ার্ডে ।বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মাধ্যমে দু একটি রাস্তা নির্মান করা হয়েছে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য কাঁচা রাস্তা পানি ওঠার কারনে এক মৌসেুমের বেশি টিকে না। তিনি আরো বলেন , বিগত ৫ বছরে প্রায় ২০০এর উপরে ছোট খাটো বক্স কালভার্ট ও সাঁকো তৈরি করেছি। কিন্তু বড় ধরনের বিশেষ বরাদ্দ না থাকলে এই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়