১০ মার্চ, খোলা বাজার অনলাইন ডেস্কঃ পার্বতীপুর প্রতিনিধি : ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি যৌথভাবে ১৮ মার্চ ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করবেন।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে স্থাপিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের রিসিভ টার্মিনালের জ্বালানি তেল পাঠানোর এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
এদিকে কাজের প্রস্তুতিমূলক সর্বশেষ অগ্রগতি দেখতে আজ শুক্রবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পার্বতীপুরে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের রিসিভ টার্মিনাল পরিদর্শন করেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খাইরুজ্জামান মজুমদার, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ন কবীর, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী ও পার্বতীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসমাঈল প্রমুখ। পরিদর্শন শেষে প্রকল্প পার্শ্ববর্তী ট্যাঙ্কলরি টার্মিনাল এলাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে। এটা প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারি চিন্তার ফসল। তিনি এ অঞ্চলের উন্নয়নে কতটা আন্তরিক তাও এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশেষ করে নীলফামারীর সৈয়দপুরস্থ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল (ডিজেল) আমদানির রিসিভ টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।
এ প্রকল্প চালুর ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল কেনার সুযোগ পাবে। প্রকল্পের সব কার্যক্রম মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই সর্বাধুনিক অটোমোশন পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। বর্তমানে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৫ শতাংশ। শুরুতে এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের পিপি সংশোধন করে এর মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় পার্বতীপুরে ৬ দশমিক ৮০ একর জমিতে রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ ৫ হাজার ৬৯০ টন ধারণক্ষমতার ৬টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার দুটি ওয়াটার ট্যাংক ও অগ্নিনির্বাপক ফোম রাখার জন্য ২ হাজার ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতার দুটি ব্লাডার ট্যাংকসহ ৮টি ট্যাংক নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অটোমোশন সিস্টেম স্থাপন, পাম্প হাউস, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও ২৪টি ট্র্যান্সফর্মার স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নির্মাণ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউস, সিকিউরিটি পোস্ট, সিকিউরিট গেট, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পাইপলাইন নির্মাণের জন্য পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩৪ দশমিক ১২ একর হুকুম দখল, ভারত ও বাংলাদেশ অংশে মোট ১৩০ কিমি পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি এসভি স্টেশনের (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) কাজও শেষ হওয়ায় বর্তমানে তেল আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের পিপি জানায়, পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারি হতে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এখন শিলিগুড়ি টার্মিনাল হতে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার দিবে ৩০৩ কোটি রুপি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন দিবে ২১৭ কোটি টাকা। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এই পাইপ দিয়ে বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে। গত ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপলাইন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মেঘনা অয়েল কোম্পনি জানায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ১ মিলিয়ন টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টন ডিজেল আমদানি করবে। ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ডিজেল আমদানির পরিমাণ ৪ থেকে ৫ লাখ টন করে বৃদ্ধি পাবে। উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি তেল চাহিদা পূরণের জন্য সমুদ্রপথে আনা জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে পার্বতীপুর রেল হেড অয়েল ডিপোতে নিয়ে আসা হয়। এতে সময় লাগে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনে জ্বালানি তেল এক দিনের মধ্যে আমদানি করা সম্ভব হবে।
সেচ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ১৯৯৯ সালে পার্বতীপুরে রেলহেড অয়েল ডিপো স্থাপন করে। এর পাশেই ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। ভারতের লুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান বলেন, এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়কাল ছিল ২০২০ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।