Thu. Apr 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

মেহেদী হাসান শিমুলঃ বায়ুদূষণে দীর্ঘদিন ধরেই আক্রান্ত রাজধানী ঢাকা। দূষণ রোধে সরকার বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পুরোপুরি রোধ করতে সক্ষম হয়নি। ফলে দূষণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবও বাড়াচ্ছে ঝুঁকি।

বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একই মুদ্রার দুটি পিঠ। আবার বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে, এ ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা ত্বরান্বিত করছে। আবার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধারাও বায়ুদূষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কারওয়ানবাজার ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত নির্মল ‘বায়ু নিশ্চিত করণ : প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রতিনিয়তই বায়ুমণ্ডলে জটিল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একে অন্যকে প্রভাবিত করছে। বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি অন্যটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ও শিল্পকারখানায় নির্গত ধোঁয়া প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ও ওজোন নির্গত করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নামেও পরিচিত। এসব দূষকের মধ্যে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনকে শর্ট লাইভ ক্লাইমেট পল্যুশন বা স্বল্প আয়ুর জলবায়ু দূষক বলা হয়। এই গ্যাস এবং দূষণগুলো একদিকে যেমন বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও দায়ী। এসব গ্যাস সূর্য থেকে আসা তাপ ধরে রাখে। আবার পৃথিবী তাপ বিকিরণ করে যে ঠান্ডা হবে, তাতেও বাধা দেয় এই গ্রিন হাউজ গ্যাস। ফলে পৃথিবী সময়ের সঙ্গে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে। যা বিভিন্ন জলবায়ুজনিত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বায়ুদূষণ এমন একটি বিষয়, যেখানে আমাদের নো কম্প্রোমাইজ। এটা জিরো টলারেন্সের জায়গা। আমরা যেমন বলি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স, তেমনি বায়ু দূষণের ক্ষেত্রেও একইভাবে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমাদের চলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু পরিবেশ অধিদফতর নয়, এটা রোধে সার্বিক বিষয় সবার দিক থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা জরুরি। কারণ এককভাবে পরিবেশ অধিদফতর এখানে কিছুই করতে পারবে না। বায়ুদূষণ একটি নীরব ঘাতক। এটার খারাপ প্রভাব আমরা প্রকাশ্যে বা সরাসরি দেখতে পাই না। কেউ অস্ত্র নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলে, ব্রাশ ফায়ার করতে চাইলে এটা আমি তাৎক্ষণিক দেখতে পাই, কিন্তু এই বায়ুদূষণ যে কীভাবে নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করছে এটা আমরা বুঝতেই পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে অনেক কাজ করার আছে। শুধু পরিবেশ অধিদফতর এককভাবে এ কাজ করতে পারবে না। উন্নয়নের সংজ্ঞার বিষয়ে আমরা যেভাবে সবাই একমত হই। তেমনি বায়ুদূষণ রোধে আমাদের সবার একমত হয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। ২০৪১ সালে আমাদের যে ভিশন আছে, উন্নয়নের ভিশন সেটার সঙ্গে এই বায়ুদূষণ রোধটাকেও রাখতে হবে। বায়ুদূষণ কেন্দ্রিক আমাদের অনেক কাজ বাকি এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে আমাদের এই বায়ু দূষণকে রোধ করতে হবে এজন্য যা যা করণীয় সমস্ত কিছুই যথাযথভাবে আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

জাতীয় সংলাপে মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বায়ুমান উন্নয়ন না করলে ভবিষ্যতে আমাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বায়ুমান উন্নয়নে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হল বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুর দূষক নিঃসরণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা। যার ফলশ্রুতিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবও তুলনামূলকভাবে কমে আসবে।

তিনি তার বক্তব্যে দেশে বায়ুমান উন্নয়নের জন্য ৪টি সুপারিশের কথা তুলে ধরেন। তা হলো- (১) বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০২২ এ বস্তুকণা ২.৫ এর পূর্ববর্তী মান প্রতিঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখা (২) উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদানকারী দেশগুলো নিজ দেশে যেভাবে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইমিশনের মাত্রা বজায় রাখে একইভাবে বাংলাদেশেও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইমিশনের মাত্রা বজায় রাখা (৩) পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত বায়ুদূষণ নির্দেশিকার ১৬ নং পৃষ্ঠার ১৯ নং ক্রমে উল্লেখিত কম সালফারযুক্ত (৫০ পিপিএম) ডিজেল আমদানি ও ব্যবহার নিশ্চিত করা (৪) সকল কয়লা, তেল ও গ্যাস ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্টকে পূর্বের মত লাল শ্রেণীভুক্ত রাখা।

ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল, অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল, সুইডেন দূতাবাস বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ফাস্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল নোভাক, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন প্রমুখ।