খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০১৫, নীলফামারী
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ডোমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ভঙ্গ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিষদের ৫ জন সদস্য ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর চেয়ারম্যান বিধি লংঘনের পাশাপাশি তার বেপরোয়া আচরনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ায় প্রতিকারের আশায় তারা নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবর আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই একটি রেজুলেশন তৈরি করেন এবং অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং সবকিছু বিধি মোতাবেক চলছে মর্মে ওই রেজুলেশনে ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর নেবার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। একের পর এক অভিযোগ দায়ের করা হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় এলাকাবাসী বঞ্ছিত হচ্ছেন তাদের নাগরিক সুবিধা হতে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর দায়ের করা ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ভঙ্গের এ অভিযোগে জানা যায়, জেলার ডোমার উপজেলার ডোমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ বছর খানেক আগে উপ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শপথ গ্রহণ করেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর হতেই তিনি নিজেকে নানা অনিয়মের মধ্যে জড়িয়ে ফেলেন। কোনো প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের ইচ্ছামত চালাতে থাকের পরিষদ। সর্বশেষ তার অনিয়মের প্রতিকারের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হলেন তারই পরিষদের সদস্যরা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের এলজিএসপি-২ এর স্কীম প্রনয়নে কোনো মতামত গ্রহণ না করে তার ইচ্ছামত স্কীম গ্রহণ করেন। তিনি বিধি লঙ্ঘন করে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যকে কোনো প্রকল্পের সভাপতি না করে তার পছন্দমত ব্যাক্তিকে প্রকল্প সভাপতি করেন। ২০১৫ সালে বোরো মৌসুমের ধান ক্রয়ে কোনো কৃষককে সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভুয়া তালিকা তৈরি করে ধান বিক্রি করেন। ভিজিএফ, টিআর, কাবিখা এবং হতদরিদ্রদের জন্য সকল কর্মসূচি জনসংখ্যা অনুপাতে বিভাজন না করে নিজের ইচ্ছামত বিভাজন করেন এবং কাবিখা’র ৬ টন চাল রাস্তা মেরামত না করে সমুদয় অর্থ আত্বসাৎ করেন। ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের এজলাস তৈরীর বরাদ্দের ৩০ হাজার টাকা, দলিল নিবন্ধনের ১ শতাংশের লাখ লাখ টাকা কাজ না করেই ভুয়া ভাউচার তৈরি করে পকেটস্থ করেছেন। এলজিএসপি-২ এর আওতায় ৬ টি ওয়ার্ডে প্রতিটি ১৪ হাজার ৫শত টাকা বরাদ্দের ২৭ টি নলকুপের পরিবর্তে ২০ টি নলকুপ স্থাপন করেন। যার প্রতিটির ব্যয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা এবং ২৫ থেকে ৩০ ফুট পাইপ ব্যাবহার করা হয়েছে। এর ফলে তা বসানোর ১ হতে ২ সপ্তাহের মধ্যেই ব্যাবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং কাজ বাস্তবায়নের পুর্বেই ৪ লক্ষ টাকার চেক ইস্যু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য রবিউল ইসলাম ও মহিলা সদস্য রওশন কানিজের সহায়তায় পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন করের সমুদয় টাকা আত্বসাৎ করেছেন। ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্যকে কোনো প্রকল্পের সভাপতি না করে তার পছন্দমত ব্যাক্তিকে সভাপতি করেন এবং ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের এলজিএসপি-২ প্রকল্পের খামাতপাড়া মৌয়ামারী রাস্তার ১ লক্ষ টাকার একটি ইউ ড্রেন নামকা ওয়াস্তে কাজ করে অর্থ আত্বসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৬ নং ওয়ার্ডে নিম্নমানের নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ করায় এলাকাবাসীকে সরকারি কাজে বাধার হুমকি দিয়েছেন মহিলা সদস্য রওশন কানিজের স্বামী আমিনুর রহমান বলে অভিযোগে প্রকাশ। যা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরারর অভিযোগ দাখিল করার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাদেরকে নানাভাবে হুমকি প্রদর্শন করে আসছেন। একপর্যায়ে অভিযোগকারী সদস্যদের বাদ দিয়ে বিধি ও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ঈদের পূর্বে একাই ভিজিএফ’র চাল ১০ কেজির পরিবর্তে ৭/৮ কেজি করে বিতরণ করেন। তারা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যাবহার ও সকল অপকর্মের হাত হতে ইউনিয়নবাসীকে বাঁচাতে যথাযথ কতৃপক্ষের সহায়তা কামনা করছেন। এ ব্যাপারে ডোমার ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, বিধি মোতাবেক সবকিছু কাজ শতভাগ করছি। তা ছাড়া সদস্যরা ভাগ না পেলে এমন অভিযোগ করেন বলে তিনি দাবি করেন। এ ব্যাপারে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা প্রশাসকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুজিবুর রহমান জানান, বিষয়টি কাগজপত্র দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।