খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬: আপনারা শুনলে হয়ত অবাকই হবেন, কিন্তু ইসলামী দুনিয়ায় যা ঘটে চলেছে, সে তুলনায় ক্যাথলিক চার্চের শিশুকামিতাৃ শিশুমাত্র, কারণ ইসলামে প্রাপ্তবয়স্কের সাথে শিশুদের যৌন সম্পর্কের অনুমোদন আছে। ইসলামিক দেশগুলোতে তাকে বিবাহ হিসেবে দেখানো হয় কিন্তু আসলে তা ধর্ষণ, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের যৌন নির্যাতন ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলামের প্রবর্তক এই সংস্থাপিত ধর্ষণের অনুমতি প্রদান করে গেছেন বলে বলা হয়ে থাকে, কিন্তু প্রশ্ন ওঠেই: ইসলামী দুনিয়ায় আজকের দিনেও কেন তা সহ্য করা হয়?
আমেরিকের রাষ্ট্রদূত মহলের ফাঁস হয়ে যাওয়া কথোপকথনে উইকিলীকস-এর তরফ থেকে পাওয়া গেছে ভয়াবহ তথ্য। উত্তর আফ্রিকার দেশ মৌরিটানিয়ার থেকে আরব বাজারে বাচ্চা মেয়ে চালান দেয় মানুষ বিক্রির একটি সুগঠিত চক্র। ৫ থেকে ১২ বছর বয়েসের বাচ্চা মেয়েদের বিক্রি করা হয় সৌদি আরবের ধনী লোকেদের কাছে যৌন-ক্রীতদাসী হিসেবে, এবং বয়ঃপ্রাপ্তি ঘটলে তাদের বার করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে – যার পরে দেহপসারিনী হওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো গতি থাকে না।
মৌরিটানিয়ার ঘটনাবলী জনসম্মুখে উঠে এসেছে এক পরম সাহসী মহিলার উদ্যোগে। সেই দেশের প্রশাসন তার কথাকে গুরুত্ব না দিতে, একক ভাবে বহু প্রচেষ্টার পরে এই মহিলা – নাম, আমিনেতু মিন্ট এল মোক্তার – আমেরিকার একজন রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগ করেন। পাচারকারীরা গরিব পরিবারের মেয়েদের খোঁজ করে ধনী সৌদি লোকের সাথে বিয়ে দেবার জন্য। যত কম বয়স, দাম তত বেশী হয়।
স্থানীয় মুদ্রা ওউগিয়ার হিসেবে প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ দাম উঠতে পারে (প্রায় ১২০ হাজার ডলার) – স্থানীয় পর্যটন সংস্থাগুলো এদের মদত দেয়, পাচারের বন্দোবস্ত করে। মৌরিটানিয়া এই সমস্যার কথা খাক অস্বীকার করে। আমেরিকার রাষ্ট্রদূতদের সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে মৌরিটানিয়ার মহিলা পাচারের ঘটনার অস্তিত্ব নেই, এবং সৌদি আরবে মহিলাদের পাচার করা সম্ভব নয়, কারণ সেখানে পুরুষ পরিবারের সদস্যের সাথে ছাড়া মহিলারা চলতে পারে না।
এইসব ঘটনার কথা প্রকাশ করার জন্য এল মোক্তারকে সম্মুখীন হতে হয়েছে মারণ হুমকির, শুনতে হয়েছে যে তিনি মিথ্যাবাদী, পাগল এবং বিশ্বাসঘাতক যার উদ্দেশ্য হল মৌরিটানিয়ার ভাবমূর্তির হানি করা।
হাজারে হাজারে শিশুকন্যা পাচার করা হয়েছে সৌদি আরবের প্রতিবেশী ইয়েমেন দেশে যৌন-ক্রীতদাসী হিসেবে কাজ করার জন্য; উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আসা ধনী লোকদেরকে ইয়েমেনীয় সেক্স-ইন্ডাস্ট্রি এই বাচ্চা মেয়েদের প্রমোদসামগ্রী হিসেবে যোগাড় দিয়ে থাকে। এই ব্যবসার খবর ইয়েমেন বা সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষের অজানা নেই, কিন্তু কোন উপায় করা হয়না।
ইয়েমেন-এ যৌন পর্যটন ছাড়াও আরেকটি সংলগ্ন সমস্যা হল শিশুবিবাহ, বিশেষত বাচ্চা মেয়েদের। ইয়েমেনের রাজধানী সানা-য় আমেরিকার দূতাবাসের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে সেই দেশের মেয়েদের ২৫ শতাংশের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় ১৫ বছরের আগে। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় যখন ১২ বছরের মেয়ে ফৌজিয়া আব্দুল্লাহ ইউসেফ-এর মৃত্যু ঘটে সন্তানপ্রসবের সময়। মাত্র ১১ বছর বয়েসে তার বিয়ে হয়েছিল ২৪ বছরের এক যুবকের সঙ্গে।
সুখের কথা এই যে, শিশুবিবাহের চলন সৌদি আরবেই বেশ কিছু জায়গায় কমে আসছে সেখানকার মানুষের প্রতিবাদের ফলে। কিছু কিছু ঘটনা সেই দেশের স্থানীয় সংবাদপত্রেও আলোচিত হয়েছে। ২০০৮-এ নেইদ শহরে এক স্থানীয় বিচারক একটি ৮ বছরের মেয়ের সাথে এক ৫০ বছরের লোকের বিয়ে ভেঙ্গে দিতে অস্বীকার করলে উচ্চতর আদালত তা স্বীকার করে ২০০৯-এর এপ্রিলে সেই বিয়ের বিচ্ছেদ করে। একই ভাবে সৌদি মানবাধিকার কমিশন একটি ১০ বছরের মেয়ের সঙ্গে ৬০ বছরের লোকের বিয়ে রদ করে। ২০০৮-এর অক্টোবরে বিশা শহরের আদালত একটি ১৪ বছরের মেয়ে এবং তার ৭০ বছর বয়সী স্বামী বিয়ে ভেঙ্গে দিতে আদেশ জারি করে। কিন্তু এই ধরণের ঘটনার সংখ্যা খুবই নগণ্য।
সুইডিশ সংস্থা শিশু বাচাঁও (“সেভ দ্য চিলড্রেন”)-এর উদ্যোগে নরওয়ে এবং সুইডেন-এর মন্ত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে তাদের সৌদি কাউন্টারপার্টদের সাথে আলোচনা করতে এই বিষয়ে। এই সংস্থা বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানীর সাথেও যোগাযোগ করেছে তাদের ব্যবসায়িক সংযোগ কাজে লাগিয়ে এই শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে।(সংগৃহীত)