খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: সম্প্রতি চলচ্চিত্রের নামে প্রতারণার মাত্রা বেড়ে গেছে। একসময় টিভি তারকারা চলচ্চিত্রে কাজ করতে না চাইলেও এখন তারাই চলচ্চিত্রে প্রতিযোগিতা করছেন। প্রায় প্রত্যেক তারকার মূল ভাবনা চলচ্চিত্র নিয়ে। একাধিক ছবিতে কাজ করছেন টিভি তারকারা।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের সাধারণ পরিবারের মেয়েরাও চলচ্চিত্রে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আর এই আগ্রহকে পুঁজি করে নতুন নায়ক-নায়িকা হতে ইচ্ছুকদের সঙ্গে বাড়ছে প্রতারণা। এমনটিই অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সহশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মিজান মিডিয়ার কর্ণধার মিজানুর রহমান মিজান।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলচ্চিত্রে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা নতুনদের সঙ্গে প্রতারণা করে। মাঝে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে কিছু লোক এই প্রতারণা চালালে আমি থানায় বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ডায়েরিও করেছি। এরপরও যারা নতুন কাজ করতে চায়, তারা আসলে জানে না কিছুই, যে কারণে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা সহজ।’
কীভাবে প্রতারণা করা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে মিজান বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে চলচ্চিত্রের তারকাদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করে। নিজেকে চলচ্চিত্রের লোক হিসেবে প্রমাণ করতে চায়। তারপর তারা ফেসবুকে বিভিন্ন ছেলেমেয়েকে চলচ্চিত্রে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। রাজি হয়ে গেলেই শুরু হয় প্রতারণা। ছেলেদের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা আর মেয়েদের ক্ষেত্রে হয় আরো জঘন্য প্রতারণা।’
কী ধরনের প্রতারণা করা হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে মিজান বলেন, ‘ছেলেদের ক্ষেত্রে তারা কিছু টাকা নিয়ে কয়েক দিন ঘুরিয়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তাদের প্রতারণার মূল শিকার মেয়েরা। এরা প্রয় সবাই মফস্বলের সাধারণ পরিবারের মেয়ে। ছবিতে কাজ দেওয়ার নাম করে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসে। অভিনয়, ফাইট, ড্যান্স শেখানোর নামে তাদের ক্লাস করানো হয় কয়েক দিন। একটু বিশ্বাস তৈরি করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারপর শুরু হয় তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন। ছবিতে কাজ পাওয়া ও নায়িকা হওয়ার স্বপ্নের কারণে মুখ বুজে তারা সব সহ্য করে। যখন তারা বুঝতে পারে তারা ভুল জায়গায় এসেছে, তখন তাদের ফিরে যাওয়ার পথ থাকে না।’
মিজান আরো বলেন, ‘প্রতারণা করে প্রথমেই মেয়েদের ভিডিও ক্লিপসহ এমন কিছু কাজ করে ফেলা হয়, যেন মেয়েটি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে। এই কারণে মেয়েটি হয় আত্মগোপনে চলে যায়, না হয় এদের সাথে মিশে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়।’
বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মিজান বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা কাদের সঙ্গে কাজ করছে এটা যেমন জানে না, তেমনি কোথায় অভিযোগ করতে হবে সেটাও তাদের জানা নেই। আর প্রতারকচক্র এমনভাবে মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করে যে, তারা জিম্মি হয়ে যায়। নানা কারণে আর নিজের এলাকাতেও ফিরে যেতে পারে না। এদের বেশির ভাগেরই জীবন নষ্ট হয়ে যায়। চলচ্চিত্র সহশিল্পী সমিতিতে এলে এসব প্রতারণার বিহিত আমরা করার চেষ্টা করি।’
চলচ্চিত্রে শিল্পী বানানোর নামে এমন প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক অমিত হাসান বলেন, ‘নতুনদের অতি আগ্রহ, আর না জেনে কাজ করতে আসার কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। আমার মনে হয়, নতুন কেউ কাজ করতে চাইলে বা কেউ চলচ্চিত্রে কাজ করানোর প্রস্তাব দিলে তারা যেন আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে কেউ তাদের সঙ্গে প্রতারণার সুযোগ পাবে না। নতুন যারা কাজ করতে চায় তাদের বলব, আপনারা সরাসরি আমাদের শিল্পী সমিতিতে চলে আসুন। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। সব কাজের মতো অভিনয়টাও অনেক কঠিন বিষয়, ফেসবুকে একজন বলল- আপনি খুব সুন্দর, নায়িকার মতো লাগছে, অভিনয় করবেন কি না, আর আপনি চলে গেলেন- বিষয়টি এত সহজ নয়। অভিনয় এত সস্তা নয়। দুদিন ট্রেনিং করেই নায়ক-নায়িকা হওয়া যায় না। আমার মনে হয়, নতুনদের আরো সচেতন হতে হবে। আর সচেতনতাই পারে এ ধরনের প্রতারণার জবাব দিতে।