খোলা বাজার২৪, রোববার, ১৫ মে ২০১৬: দুই বছর আগে লুইস সুয়ারেজ যখন বার্সেলোনায় নাম লেখালেন, তখন অনেক বার্সা সমর্থকই তাঁকে ঠিক মন থেকে গ্রহণ করতে পারেননি। উরুগুইয়ান তারকা যখন ন্যু ক্যাম্পে পা দিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি নিষিদ্ধ। বিশ্বকাপে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে জর্জো কিয়েলিনিকে কামড় দিয়ে বিশ্বকাপের মতো আসর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছেন ফিফার নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে শৃঙ্খলাজনিত ব্যাপার-স্যাপারে তাঁর কালিমাখা অতীত ঠিক বার্সার সঙ্গে যায় না।
কিন্তু দুটি বছর যেতে না যেতেই সেই সুয়ারেজই এখন বার্সেলোনার নায়ক। কাল তো রীতিমতো হ্যাটট্রিক করে, বার্সার শিরোপা নিশ্চিত করে মুহূর্তটা সোনালি মোড়কে মুড়িয়ে রাখলেন। গ্রানাডাকে তো সুয়ারেজই হারালেন ৩-০ গোলে!
এই মৌসুমে লা লিগায় ৪০ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার ‘পিচিচি’ ট্রফিটা নিচ্ছেন নিজের করেই। গত সাত বছর ধরে যে ট্রফিটা দখল করে রেখেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নয়তো লিওনেল মেসি। মেসি-রোনালদোর রাজত্বের ইতি টেনে দিলেন। অন্তত একটা বিরতি তো পড়ল!
সবচেয়ে বড় কথা, এই মৌসুমে ৫৯ গোল করেছেন। লিগে গত ৫ ম্যাচেই করেছেন ১৯ গোল। ১৩ বছরের মধ্যে প্রথম টানা তিন ম্যাচ হারের ধাক্কা সামলে বার্সা যে আবারও লিগ শিরোপা জিতল—তার মূল নায়ক সুয়ারেজই। গোল তিনি আগেও পেয়েছেন, এত এত না হলেও। তবে গোলমুখে সেই আগের ক্ষুধার্ত বাঘটি থাকলেও সুয়ারেজের সবচেয়ে বড় জয়—বার্সায় এসে নিজেকে প্রায় বদলে ফেলাতে। সুয়ারেজ হলুদ কার্ডও দেখেছেন কালেভদ্রে।
গত তিন মৌসুমের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো সুয়ারেজ একটি মৌসুম কাটালেন কোনো প্রকার বিতর্ক ছাড়া, কোনো বহিষ্কারাদেশ হাতে না নিয়েই। বার্সেলোনার জার্সি যে তাঁকে এতটা বদলে দেবে, সেটা তিনি নিজেও কী ভাবতে পেরেছিলেন!
এই মৌসুমে তিনি যা খেললেন, তাতে নিশ্চিত করেই আসছে ব্যালন ডি’অরের অন্যতম যোগ্য দাবিদারে পরিণত হতে যাচ্ছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগ রিয়াল মাদ্রিদ জিতলে রোনালদো আর তাঁর লড়াই হবে খুব। কে জানে, হয়তো গত আট বছর ধরে ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারে মেসি-রোনালদো রাজত্বেরও ইতি ঘটতে চলেছে কি না!
এই মুহূর্তে যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সুয়ারেজ, সেখান থেকে কিয়েলিনি কিংবা ইভানোভিচকে কামড়ে দিয়ে কলঙ্ক কুড়ানোর সময়টিকে দূর অতীতেই দেখছেন তিনি। এই সুয়ারেজ যে একেবারেই অন্য সুয়ারেজ।
এবারের মৌসুমে আছে ৫টি হ্যাটট্রিকও। মেসি ও নেইমারের সঙ্গে তাঁর ‘এমএসএন’ যুগলবন্দী তো এখন সকলের মুখে মুখে। কিন্তু ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড়টির নাম এই মৌসুমে ছিলেন সুয়ারেজই। ‘এমএসএন’-এর ‘এম’ যখন আহত হয়ে দুই মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেলেন, তখনকার কথা একটু মনে করুন! কী অসাধারণ ফুটবলটাই না খেলেছেন সুয়ারেজ। মেসির অনুপস্থিতির দুই মাসে বার্সেলোনার ১০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ১২।
যে সুয়ারেজের পিচিচি নিয়ে এত কথা, তিনি নিজে কী বলছেন? এই জায়গাতেও সুয়ারেজ আগের মতো, যে সুয়ারেজ দল অন্তঃ প্রাণ। যে সুয়ারেজ দলের জন্য নিশ্চিত নিষেধাজ্ঞা জেনেও গোলমুখে হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে দিতে পারেন! সুয়ারেজ পুরো কৃতিত্ব সতীর্থদের দিলেন এভাবে, ‘তাদের ছাড়া এর কিছুই করা হতো না। আমি আজকে এখানে থাকতাম না। ওরা আমার কাজটা এত সহজ করে দিয়েছিল, আমাকে কেবল আলতো টোকা দিয়ে বলটা জালে পাঠাতে হতো। ওরা সব সময় আমাকে দিয়ে গোল করাতে চেয়েছে।’
এখন নিশ্চয়ই বড় পার্টি হবে? তা হবে, কিন্তু সুয়ারেজ জানিয়ে দিলেন, কাজ এখনো বাকি, ‘আমাদের কাপ ফাইনাল নিয়ে ভাবতে হবে। অবশ্য আপাতত লা লিগার শিরোপা উপভোগ করাই উচিত। এবার লিগে আমার প্রত্যেকে বছরজুড়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সেটারই ফল পেলাম।’