Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

বিজয় দিবসে প্রজন্মের ভাবনামোঃ মিজানুর রহমান – খােলা বাজার২৪। শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭: 
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানীদের (বর্তমান বাংলাদেশ) অধিকার হরণ, শাসন, শোষণ, জুলুম, অত্যাচার করে আসছিল। পশ্চিম পাকিস্তানীদের জুলুম, অত্যাচার, অধিকার হরণ, শাসন, শোষণ থেকে মুক্তি পেতেই ১৯৭১ সালে হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে ঐ ১৯৭১ সালেরই ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যে জুলুম, অত্যাচার, অধিকার হরণ, শাসন, শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭১ সালে প্রায় ০৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার বিজয় এসেছিল, আজ স্বাধীনতার বিজয়ের এতো বছর পর কি আমরা প্রকৃত অর্থে জুলুম, অত্যাচার, অধিকার হরণ, শাসন, শোষণ থেকে মুক্তি পেয়েছি ? আজ ‘বিজয় দিবসে প্রজন্মের ভাবনা’ এটাই। দেশের বর্তমান অবস্থা দেখলে নতুন প্রজন্মের মনে হয় সে অর্থে মুক্তি হয় নি বরং তার সাথে আরো যুক্ত হয়েছে গুম, অপহরণ বা এর পর খুন বা পঙ্গুত্ব বরণ, মামলা-হামলা, নিপীড়ন ইত্যাদি ইত্যাদি। 

আজ দেশের জনগণ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, অফিস-অদালতে সব জায়গায় জনগণ আজ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। মত প্রকাশের স্বাধীনতাও আজ নিয়ন্ত্রিত। সংবাদপত্রে বা বক্তব্য ব্রিফিংয়ে আওয়ামী সরকারের দোষ-ত্রুটি বা একটু সমালোচনা করলেই হতে হয় গুম বা অপহরণের নয়তো অসম্মানজনক আচরণের সম্মুখীন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হলো- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির  (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকা-নায়ারণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন। প্রায় ৩৪ ঘণ্টা পর তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় কে বা কারা ৩০০ টাকা তার পকেটে গুজে দিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরে নামিয়ে দিয়ে যায়। এছাড়াও অতি সম্প্রতি অপহরণ বা গুমের শিকার হন সাংবাদিক-কলামিস্ট ফরহাদ মাজহার, রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান প্রমূখগণ। গুম বা অপহরণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দি নিউইর্য়ক টাইম্সে’র ২৮ জুলাই ২০১৭ তে এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়-‘বাংলাদেশে বিরোধী শক্তিকে গুম করা হচ্ছে। গুম হওয়াদের মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর সংখ্যাই বেশী। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর উদ্ধৃতি দিয়ে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের ৮ বছরের শাসনামলে ৩২০ জনেরও অধিক লোককে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার অথবা গুম করা হয়েছে।’ গুম হওয়ার বিষয়ে সরকারের নিস্ক্রিয়তার কড়া সমালোচনা করে বলা হয়, ‘অভিযোগকারীদের অভিযোগ নির্দয়ভাবে প্রত্যাখান করে গুমের তামাশাপূর্ণ জবাব দিচ্ছে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার’ (সুত্র- জাস্ট নিউজ অনলাইন পত্রিকা)। কিন্তু আজ নতুন প্রজন্ম এসব চায় না, চায়-নিরাপত্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

জনগণ আজ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। নির্বাচনের দিন ভোট দিতে গেলে দেখা যায় আগেই ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। কেন্দ্রগুলো ক্যাডার বাহিনী দখল করে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে নিজেরা একাধিক ব্যালট পেপার ছিল মেরে নিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখে আর কেউ ভোট দিতে এলে বলা হয় আপনার ভোট কষ্ট করে দিতে হবে না, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। পুলিশ-প্রশাসনও এ ব্যাপারে যেনো পক্ষপাত দেখায়। নতুন প্রজন্ম আজ অবাধ, সবার অংশগ্রহণে উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার অধিকার চায় এবং সেই ভোটের প্রাপ্ত ফরাফলও যেনো সঠিক, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়-তার গ্যারন্টি চায়। নতুন প্রজন্ম সেই সাথে এও ভাবছে-এর জন্য প্রয়োজন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার বা নির্বাচন কালীন সরকার বা যে নামই থাকুক না কেন, তা অবশ্যই কোন দলীয় সরকার এর অধীনে নির্বাচন নয়। কেননা, বর্তমান আওয়ামী সরকারের সময় জাতীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের কোন নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, ভয়-ভীতিহীন, উৎসবমূখর পরিবেশে করতে পারেন নি। …….তাই আজ বিজয় দিবসে প্রজন্মের ভাবনা- অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র-যেখানে থাকবে সব দল।

নতুন প্রজন্ম চায় সুষ্ঠ ধারার বুদ্ধিদীপ্ত রাজনীতি। রাজনীতির নামে অযাথাই হামলা নয়, অজ্ঞাত নামে বিরোধীদের নামে হাজার হাজার মামলা নয়, নির্যাতন, জেল, জুলুম, রিমান্ড নয়। বিরোধী পক্ষ সভা-সমাবেশ করতে চাইলে বাধা প্রদান নয়। এক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাও দলীয় অন্ধপক্ষপাত নয়-নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি চায় প্রজন্ম।

আজ বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য উর্ধ্বগতি। দফায় দফায় বছরে-বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, বাড়ী ভাড়া বাড়ানো, পরিবহন ভাড়া বাড়ানো ইত্যাদি। প্রজন্ম আজ দ্রব্যমূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরিবহন, বাড়ী ভাড়া সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণ চায়। প্রজন্ম চায় অফিস-আদালত ঘুষ-দুর্নীতি মুক্ত। প্রজন্ম চায় গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন মুক্ত দেশ। হানাহানি বাদ দিয়ে প্রজন্ম চায় শান্তি, সম্প্রীতি, সৌর্হাদ্য, অধিকারপূর্ণ বসবাস।

জনগণের মাঝে এখন একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে, রাজনৈতিক কারণে বা আন্দোলন-সংগ্রাম যেনো না করতে পারে সেজন্যই হয়তো (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় থাকতেই) সরকার সরকারী চাকুরিজীবীদের বেতন দিগুন বা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশী বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু বেসরকারী চাকুরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির কোন নীতিমালা সরকার দেন নি বা বেসরকারী চাকুরিজীবীদের বেতন কোন বৃদ্ধিই হয় নি বরং বেসরকারী চাকুরিজীবীরা অফিসে সময় সরকারী চাকুরিজীবীদের চেয়ে বেশী দেয়। কিন্তু প্রজন্ম চায় সরকারী চাকরিজীবীদের মতো বেসরকারী চাকুরিজীবীদেরও বেতন বৃদ্ধি হোক বা এ সংক্রান্ত নীতিমালা হোক।

প্রজন্ম চায় শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে আজ সকল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়। এমনকি পঞ্চম শ্রেণীর অবুঝ শিশুদের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়। এভাবে চলতে থাকলে এ জাতি একদিন জ্ঞান-বিজ্ঞানের অতল গভীরে হারিয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম প্রশ্নফাঁস শক্ত হাতে দমন চায়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর (আওয়ামী সরকারের) ‘আগেও প্রশ্নফাঁস হতো, আমাদের সময়ও প্রশ্নফাঁস হতো-এখনও হয়’ এমন উক্তি চায় না। চায় প্রশ্নফাঁস রোধ বা কঠোর হস্তে দমন। এ ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের বিএনপি জোট সরকারের সাবেক মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনের মতো কঠোর হাতে দমন চায় প্রজন্ম।

সরকার দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের নিজ এলাকা বা শুধু শহর বা নগর কেন্দ্রিক নয়, তৃণমূল পর্যায়েও এবং অবহেলিত এলাকার উন্নয়ন চায় প্রজন্ম। সমাজে মাদক, ইয়াবা আজ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রজন্ম মাদক, ইয়াবা থাবামুক্ত সমাজ চায়। দেশে আজও প্রচুর নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, পাচার হচ্ছে। প্রজন্ম আজ নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, পাচার রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন চায়। প্রজন্ম মেধাপাচার ও তথ্যপাচার রোধে সঠিক ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চায়। প্রজন্ম লিঙ্গ বৈষম্যও চায় না, চায় সম-অধিকার। বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। তাই প্রজন্ম চায় কৃষি ব্যবস্থা বা কাঠামোর সহজীকরণ ও উন্নয়ন-যাতে তৃণমূল পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকও এর সুফল ভোগ করতে পারে। প্রজন্ম চায় শিল্প-কল-কারখানার যুগোপযোগী আধুনিকায়ন এবং কর্মীদের সময়োপযোগী বেতন কাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থানের নিশ্চয়তা।

আমাদের বাংলাদেশীয় কোন টিভি চ্যানেল আমাদের পার্শ¦বর্তীদেশ ভারতে চালানো হয় না। ভারতের সরকার চালাতে দেয় না। অথচ ভারতের প্রায় সব চ্যানেল অবাধে আমাদের দেশে ঘরে ঘরে প্রতিদিন চলে। এ ব্যাপারে আমাদের বর্তমান আওয়ামী জোট সরকার একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেন না বা ভারতীয় চ্যানেল আমাদের দেশে নিষিদ্ধ করেন না কিংবা ভারতের সরকারের অসংখ্য চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন হলেও এ ব্যাপারে কোন কার্যকরী সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেন না। বর্তমানে আমাদের দেশীয় সিনেমা ব্যাবসা এমনিতেই মন্দা, সিনেমা হল কম। সেখানে ভারতীয় বাংলা সিনেমাও আমাদের সিনেমা হলে যৌথ প্রযোজনা বা ব্যবসার নামে চালাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের চলচ্চিত্র জগৎ তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গণ ভারতের সংস্কৃতির গহ্বরে হারিয়ে যাবে। তাই সাংস্কৃতিক এ আগ্রাসন থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে কার্যকরী সিদ্ধান্ত, নীতিমালা, প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চায় প্রজন্ম।

ভারত বর্ষা মৌসুমে নদীতে অবাধে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারে আর শুস্ক মৌসুমে তথা প্রয়োজনের সময় পানি উজানে আটকে রেখে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করে। তাই প্রজন্ম ভারতের পানি আগ্রাসন থেকেও মুক্তি চায়। 

২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য করলে সুস্পষ্ট দেখা যায়- আমাদের রাজনীতিতে ভারত হস্তক্ষেপ করে এবং একটি বিশেষ দল হয়তো ক্ষমতার মোহে এতে যোগানদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। প্রজন্ম এ হতেও মুক্তি চায়। সার্বিক অর্থে প্রজন্ম ভূ-রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন চায়।

সর্বোপরি প্রজন্ম জানতে চায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের একটি পেক্ষাপট ছিল ১৯৭০ এর নির্বাচন। সে নির্বাচনের শর্তই ছিল লিগাল প্রেম ওর্য়াক অর্ডার Legal frame work order (এল এফ ও) মেনে চলা। Legal frame work order (এল এফ ও) এর মধ্যে একটা শর্ত ছিল ফেডারেল পার্লামেন্টারী গর্ভমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা। মূলত Legal frame work order (এল এফ ও) ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের স্বার্থসিদ্ধির একটা দলিল। Legal frame work order (এল এফ ও) এর কোথাও পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তি বা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা ছিল না। এই Legal frame work order (এল এফ ও) এর শর্ত মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী মেনে নেন না। ফলে তিনি ও তার অনুসারীরা ১৯৭০ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না। এতে ভাগ্য খুলে যায় শেখ মুজিবুর রহমানের। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ Legal frame work order (এল এফ ও) এর শর্ত মেনে নেন এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সে নির্বাচনে শেখ মুজিব নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ বিজয় অর্জন করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই শেখ মুজিব বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণে নিজেকে প্রস্তুত ও এগিয়ে নিতে থাকেন। পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণে শেখ মুজিব একটুও ছাড় দেন না-ওদিকে পশ্চিম পাকিস্তানীরাও শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের শাসনভার না দেওয়ার জন্য তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এমন পেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চ ভাষণ দেন। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণের পর তখনও দেশ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন নি। কেননা, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণে তখনও আরো বেশী দৃঢ় ও অটল থাকেন এবং দেন-দরবার চালাতে থাকেন। শেখ মুজিবুর রহমান তার পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে কোন সমাধান না হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২৫ মার্চ কালো রাতে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর নির্বিচারে কামান, স্টেনগান, মেশিনগান-গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে। সে রাতে যেনো পুরো দেশে আঁধার নেমে আসে। জাতি দিশাহারা-তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতারা কেউ ভারতে পালিয়ে যান, কেউ বা নিজেকে আত্মগোপন করে রাখেন। এমনি সময় বুকভরা সাহস আর লৌহকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে দিশাহারা জাতির সামনে এগিয়ে আসেন অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গর রেজিমেন্টের (একমাত্র বাঙ্গালি রেজিমেন্ট) মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি বাংলা ও ইংরেজী দুই ভাষাতেই পাঠ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, তৃতীয় খ-ে বর্ণিত জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাটি নিম্নরূপ- 

Dear fellow freedom fighter's-
I, Major Ziaur Rahman, Provisional Presiden and commander-in-chief of liberation Army do hereby proclaim independence of Bangladesh and appeal for joining our liberation struggle. Bangladesh is independent. We have waged war for the liberation of bangladesh. Everybody is requested to participate in the liberation war with whatever we have. We will have to fight and liberate the country from the occupation of pakistan Army.
Inshallah, victory is ours.

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সহযোদ্ধা ভাইয়েরা,
আমি, মেজর জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আর্মি চীফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেমেছি। আপনারা যে যা পারেন সামর্থ অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে দেশ ছাড়া করতে হবে। 
ইনশাল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।


মেজর জিয়াউর রহমান হয়ে যান ইতিহাস। এবং তিনিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান থেমে থাকেন নি-যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। নিজে ১ নং সেক্টরে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এরপর যুদ্ধকে আরো বেগবান ও চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য তিনটি ফোর্স গঠন করেন এবং একটি ফোর্সের নেতৃত্বেও দেন। অতঃপর অসে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়। ……….নতুন প্রজন্ম সেই যুদ্ধকালীন সময়ের সঠিক ইতিহাস জানতে চায় এবং তা লালন করতে চায়। 

নতুন প্রজন্ম অযাথাই রাজনৈতিক সংকীর্ণতার একাগ্র প্রতিহিংসা বশবর্তী কোন কর্মকা- আর দেখতে চায় না। এ ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-বিগত নব্বই দশকে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সরকার প্রধান বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন তৎকালীন সময়ে দেশের বৃহত্তম সেতু যমুনা সেতুর উদ্বোধন করতে যান সিরাজগঞ্জে। সেদিন তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগ হরতাল ডেকেছিল সম্ভবত অযুহাতের পিছনে ছিল বাধা দেওয়ার মানসিকতা। অথচ পরে ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে সেই যমুনা সেতুর উদ্বোধন করেন তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। কিন্তু সে দিন তৎকালীন বিরোধী দল (বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল) বিএনপি আর হরতাল ডাকেন নি। ফলে এখানেও কার মন-মানসিকতা কেমন তার পরিচয় পাওয়া যায়।

এক্ষেত্রে আরো একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতার এসে বাংলাদেশের প্রধান বিমান বন্দর ‘জিয়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর’ এর নাম পরিবর্তন করেন। এতে খরচ হয় প্রায় সাড়ে বারো শত কোটি টাকা। জনমনে ধারণা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই আওয়ামী সরকার এই কাজ করেছেন। অথচ অতগুলো টাকা নাম পরিবর্তনে খরচ না করে দেশ ও জাতির কল্যাণে খরচ করা যেত। নতুন প্রজন্ম ……এসব কাজকেও সমর্থন করেন না।


বর্তমান সময়ে নতুন প্রজন্মের কাছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আরো পরিস্কার। ১/১১ এর ফলে দেশে নেমে এসেছিল রাজনৈতিক দুর্যোগ। ১/১১ এর সরকারের সময়ে আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনার নামে মামলা হয়েছিল ১৫ টি-যার মধ্যে হত্যা মামলাও ছিল। সেগুলো হলোঃ -বেপজায় পরামর্শক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা, ফ্রিগেট ক্রয় দুর্নীতি মামলা, মেঘনা ঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্নীতি মামলা, খুলনায় ভাসমান বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, ৮ টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় দুর্নীতি মামলা, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণ দুর্নীতি মামলা, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ মামলা, আজম জে চৌধুরীর দায়েরকৃত চাঁদাবাজি মামলা, আওয়ামীলীগ নেতা নূর আলীর দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলা, কাজী তাজুল ইসলাম ফারুক এর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা ও একটি হত্যা মামলা। এবং বেগম জিয়ার নামে মামলা হয়েছিল ৫ টি। তা হলোঃ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা। কথিত আছে সমতা আনার জন্যই না কি সে সময় ১/১১ সরকার বেগম জিয়ার নামে এই ৫ টি মামলা দিয়েছিল।

অতঃপর ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতার এসে শেখ হাসিনার নামে থাকা বিচারাধীন ১৫ টি মামলা তুলে নেন।  আর এসব তুলে নেওয়া মামলার বিচারপতিরা ছিলেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সভাপতি’র দ্বায়িত্ব পালনকারী ও বিচারপতি মোহাম্মদ শামসুল হুদা বেঞ্চ এবং যুক্তরাজ্য শাখা ছাত্রলীগের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক আখ্যা দিয়ে সে সময় তুলে নেওয়া হয়। আর বেগম খালেদা জিয়ার নামে থাকা মামলা গুলো সচল রাখেন এবং পরবর্তীতে অযাথাই অযুহাতে আরো মামলা দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। শুধু মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হননি আওয়ামীলীগ জোট সরকার। ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন নির্বাচনের পর ক্ষমতায় বসে প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে মামলা হাজিরা রাখেন এবং বতমান সময়ে দেখো যাচ্ছে সপ্তাহে তিন দিন করে মামলার তারিখ ফেলেছেন। যদিও-‘প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েই সরকার মিথ্যাচার করছে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি’-(সুত্র দৈনিক দিনকাল ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং)-তথাপি এই আওয়ামী সরকারের মনে কি আছে কে জানে ? কেননা বিচার বিভাগ আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তার প্রমাণ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা-র ঘটনায় প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এমনি বিচার ব্যবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাবেন কি না সন্দেহ। কিন্তু নতুন প্রজন্ম এমনটি চান না। একজনের মামলা (শেখ হাসিনার মামলাগুলো) ক্ষমতায় থেকে নিজেদের অনুগ্রহ বিচারপতি দ্বারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে তুলে নিবেন (এমনকি হত্যা মামলা) আর অন্যজনের মামলা (বেগম খালেদা জিয়ার মামলা) সংখ্যায় অরেকজন (শেখহাসিনা) এর চেয়ে তিনভাগের এক ভাগ হলেও (বিরোধী দলের নেত্রী বলে) তুলে না নিয়ে চাপে রেখে সপ্তাহ-সপ্তাহ কোর্টে হাজিরার তারিখ ফালানো-নতুন প্রজন্ম এটাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই ভাবছে। নতুন প্রজন্ম এমনটি চান না। নতুন প্রজন্ম চায় মামলা চললে দু’জনেরই চলুক, মামলা উঠে নিলে দু’জনেরই উঠে নেওয়া হোক। কিন্তু বাস্তবে তা নেই  এবং তার কোন লক্ষণ নেই। 

অতএব এতোসব বৈষম্যের কারণেই নতুন প্রজন্ম চায় গণতন্ত্র তথা ভোটাধিকার এবং প্রাপ্ত ভোটের সঠিক ফলাফল প্রকাশ। এতে প্রয়োজনে নিরপেক্ষ বা নির্দলীয় সহায়ক সরকার বা তত্ত্বাধায়ক সরকার দারকার হলেও-তা গঠন করা দরকার। কেননা, বর্তমান সময়ে নির্বাচনে আওয়ামী জোট নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। নতুন প্রজন্ম চায় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সহনশীলতা, স্থিতিশীলতা এবং সুন্দর, সুষ্ঠ নিরাপত্তামূলক পরিবেশ ও সেই সাথে টেকসই উন্নয়ন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট