Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৮: কক্সবাজার ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সড়কের একপাশে সমুদ্রসৈকত আর অন্যপাশে পাহাড়ের গা-ঘেঁষে বহমান ঝর্ণাধারা। বালুকাময় বিস্তৃত সৈকত, ইনানী পাথুরে বিচ ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরা উপভোগ করা যায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে যেতে যেতে। এজন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজার থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস বা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে হিমছড়ি, ইনানী, সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন যান। কড়া নিরাপত্তায় গভীর রাতেও পর্যটকদের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ঘুরতে দেখা যায়। কিন্তু মেরিন ড্রাইভ সড়কে মরণ ফাঁদ হিসাবে দেখা দিয়েছে পর্যটক ও পিকনিকের বাস। বেপরোয়া গতিতে চলাচলকারী এসব বাস এখন পর্যটকদের জন্য আতঙ্ক।

গত সোমবার মেরিন ড্রাইভ সড়কে পিকনিকের একটি বেপরোয়া বাস একটি সিএনজি অটোরিকশাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে অটোরিকশার চালকসহ তিনজন নিহত হয়। পরে আহত আরও একজন হাসপাতালে মারা গেছে। খবর ইনকিলাব’র।

স্থানীয়রা জানান, পিকনিক ও পর্যটকবাহী বাসগুলোকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে চলাচলের অনুমতি দেয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত এরকম দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে একজন পর্যটক জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে বহু মানুষ ছোট ছোট যান নিয়ে চলাচল করছে। ভারী যানবাহন নিষিদ্ধ হওয়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কটি সত্যি নিরাপদ। নিরাপত্তারও কোনো ঘাটতি নেই। পর্যটকরা রাত-বিরাতেও নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। কিন্তু পিকনিকের বাসগুলো এতোটাই বেপরোয়া চলাচল করে যে, পর্যটকদের কাছে বাসগুলো এখন আতঙ্কের বিষয়। সোমবারের দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে ওই পর্যটক বলেন, আমাদের চোখের সামনেই একটা অটোরিকশাকে চাপা দিল বাসটি। এরকম করুণ দৃশ্য দেখার পর কেউ কী আর ঠিক থাকতে পারে? মেরিন ড্রাইভ সড়কে মানুষের নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করার জন্য পিকনিক বা পর্যটকদের বাস চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ওই পর্যটক বলেন, প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে হলেও মরণফাঁদ রুপী বাসগুলো চলাচল বন্ধ করা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কটি করা হয়েছে পর্যটকদের চলাচলের জন্যই। তিনি বলেন, রাস্তা যখন হয়েছে তখন সেটাতে যানবাহন চলাচল করতে দিতেই হবে। আমরা ভারী কোনো যানবাহন ওই সড়কে চলতে দেই না। কিন্তু পর্যটকদের বাস চলতে না দিলে পর্যটকরা চলাচল করবে কিভাবে? বাসগুলোর কারনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে এ কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বাসগুলোর বেপরোয়া গতি ঠেকাতে। এজন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা কঠোরভাবে নজরদারি করছে।

গত বছরের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগর তীর ধরে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কটির উদ্বোধন করেন। পর্যটক আকর্ষণের জন্য নির্মিত এ সড়কের একপাশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনী এই সড়ক নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু নানা জটিলতা, বিশেষ করে উত্তাল সমুদ্রের ভাঙনের কারণে বারবার ব্যাঘাত ঘটে প্রকল্পের। ১৯৯৫ সালে একবার সড়কের একটি অংশ পুরোপুরি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরুর পর সমুদ্র শাসন করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উৎসাহে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করে নির্ধারিত সময়ের আগেই। সড়কের পাশে ১১ লক্ষ গাছ রোপনের ফলে মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।