Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার ২৪, রবিবার  ২৮ অক্টোবর ২০১৮ঃ আব্দুল আউয়াল  বানারীপাড়াঃ বানারীপাড়ায় জালিয়াত চক্রের সদস্য তথাকথিত মহুরী আব্দুল মন্নান তালুকদার ও সেলিম বেপারী অত্যাচারে অতিষ্ট ও ভিটেমাটি হারা অসোহায় ভূক্তভুগীরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাছে ব্যাপক তথ্য ও প্রমান তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি জালিয়াত চক্রের সদস্য আব্দুল মন্নান তালুকদার ও সেলিম বেপারীর অত্যাচারে ভিটেমাটি হারা সনাতন ধর্মাবলম্বী অসোহায় ভূক্তভুগীরা এ তথ্য-প্রমান তুলে ধরেন।

অপরদিকে জাল-জালিয়াতি চক্রের সদস্য সেলিম বেপারীর বিরুদ্ধে ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সম্প্রতি জাল-জালিযাতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বানারীপাড়া থানার ওসি (দতন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করলে রোববার বরিশাল চতুর্থ আমলী আদালতের বিচারক মো. ফারুক হোসাইন ৫দিনের রিমান্ড’র আদেশ দেন। বৃহম্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (দতন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম তাকে জেল হাজত থেকে বানারীপাড়া থানায় রিমান্ডে আনেন। রিমান্ডে সেলিম বেপারী জাল-জালিয়াতির সংঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ব্যাপক তথ্য দিয়েছেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান।

এসব বিষয়ে জানা গেছে, বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার এলাকার জাল-জালিয়াতি চক্রের সদস্য তথাকথিত মুহুরী আব্দুল মন্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে বরিশাল জজ আদালতে জালিয়াতির অভিযোগে একাধিক জাল ডিক্রীসহ অসংখ্য মামলা থাকার প্রমান পেয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম। তবে জালিয়াতি মামলা তদন্তের স্বার্থে এখনই এ ব্যাপামেূখ খুলতে চাইছেন না তিনি। তিনি মূখ খুলতে না চাইলেও এ বিষয়ে ইলুহার ইউনিয়নের ছাদেক তালুকদার জানান, মান্নান তালুকদার তার ভোগ-দখলীয় ১ একর ৩৬ শতাংশ সম্পত্তি জাল দলিল করে সম্প্রতি আদালতের মাধ্যমে রায় নিয়ে নেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে বরিশাল জজ আদালতে ১১২-২০১৪নং আপিল মামলা দায়ের করেন।বর্তমানে আদালতে ওই মামলা চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান। একই ভাবে ইলুহার ইউনিয়ন জাসদ’র সম্পাদক মো. সিদ্দিক তালুকদার অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে মান্নান তালুকদার তার রেকডিও ৬৮ শতাংশ সম্পত্তি ভূয়া ডিক্রির মাধামে জবর দখল করে নেয়ার চেষ্টা করেন।

একই ভাবে থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া জালিয়াত চক্রের সদস্য সেলিম বেপারী বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাছে জাল-জালিয়াতির ব্যাপক তথ্য-প্রমান তুলে ধরা হয়েছেন তার অত্যাচার নির্জাতনে ভিটেমাটি হারা সনাতন ধর্মাবলম্বী অসোহায় ভূক্তভুগীরা। এবিষয়ে উজিরপুর উপজেলার হারতা গ্রামের বৃদ্ধ উপেন্দ্র নাথ পাড়, স্বরসতী মন্ডল, সুনিল পাড়, সুমতি দাস, গৌরাঙ্গ পাড়, লক্ষি পাড়, কাজল পাড়, নিমচাঁদ পাড়, আশালতা মন্ডল, শরৎ রায়, রনঞ্জিৎ মন্ডল স্থানীয় জালিয়াত চক্রের সদস্য সেলিমের বিরুদ্ধে ব্যাপক তথ্য-প্রমান তুলে ধরেন। তারা বলেন, এক সময় হাট-বাজারের ফুটপাতে ইদুরের ঔষদ বিক্রি করা সেলিম বেপারী জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের অর্ধশত একর সম্পত্তি জবর দখল করে নিয়ে আলীশান ভবন তৈরী করে অবৈধ্য অর্থের মালিক বনে গেছেন। ভূক্তভূগীদের অভিযোগ, জালিয়াত চক্রের সদস্য সেলিম বেপারী কেবল তাদের প্রায় অর্ধশত একর সম্পত্তি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জবর দখল করেই ক্ষান্ত হননি। তাদেরকে নিজে ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা সহ পাশবিক নির্যাতন করার পাশাপশি বসত ঘরের মালামাল লুটপাট করে পথে বসিয়ে দিয়েছেন। ভিটেমাটি হারা ক্ষতিগ্রস্থ্য স্বরসতী মন্ডল অভিযোগ করেন, সেলিম বেপারী জাল দলিলের মাধ্যমে তার বসত বাড়ি দখল করে নিয়ে সেখানে একটি অলিশান ভবন নির্মান করেছেন। মাথা গোজার ঠাঁই না থাকায় বর্তমানে স্বরষতী অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি সহ ক্ষতিগ্রস্থরা সেলিম বেপারীর বিরুদ্ধে উক্ত ঘটনার সময় মামলা করার পর পুলিশ প্রশাসনের তদন্তে জাল-জালিয়াতির প্রমান পাওয়ায় সে হাইকোটের মাধ্যমে ওই মামলা স্থগিত করেন।এদিকে ১৪ অক্টোবর বিকেলে বানারীপাড়া থানার ওসি (দতন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম গাপন সংবাদের ভিত্তিতে উজিরপুর উপজেলার হারতা বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে জালিয়াত চক্রের সদস্য মো. সেলিম বেপারীকে ৬৬টি দলিল ও বিভিন্ন এলাকার ১০টি নকশা (চর্চাম্যাপ) সহ গ্রেফতার করেন। ১৫ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম তাকে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করেন এবং তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এর আগে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া আসামীরা ওই আদালতে জামিন আবেদন করে ব্যার্থ হয়ে বরিশাল জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। ফলে মামলার নথিপত্র জজ আদালতে চলে যাওয়ায় চতুর্থ আমলী আদালতের বিচারক মো. ফারুক হোসাইন রিমান্ড আবেদনের ব্যাপারে ২১ অক্টোবর সুনানির দিন ধার্য করেন এবং ওই দিন তিনি সেলিম বেপারীর বিরুদ্ধে ৫দিনের রিমান্ড’র নির্দেশ দেন।

এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, অনুমান করা হচ্ছে জালিয়াত চক্রের সদস্য সেলিম বেপারীর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত দলিল ও আলামত গুলোর সবই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে। এছাড়াও জালিয়াত চক্রের সদস্য সেলিম বেপারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় জাল-জালিয়াতি, অপহরন, চাঁদাবাজী ও নারী নির্যাতন সহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও তিনি জানান।প্রসংগত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্বিতে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান’র নেতৃত্বে উপজেলার ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকা থেকে তথাকথিত মুহুরী আব্দুল মান্নান তালুকদারকে বিপুল পরিমানে বিটিশ ও পাকিস্তানী জাল ষ্ট্যাম্প, জাল ডিক্রি, ভূয়া ওয়ারেন্ট, হাইকোটের জামিন আদেশ এবং সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নামের সিল সহ আটক করেন। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বরিশাল থেকে আরও তিন জনকে আটক করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর বরিশাল পুলিশ সুপার মো.সাইফুল ইসলাম বিপিএম এ ব্যাপারে প্রেস ব্রিরিফিং করেন। অপরদিকে ওই দিন রাতেই এস.আই মোশারেফ হোসেন বাদী হয়ে জালিয়াত চক্রের ১৫ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। থানার অফিসার ইনচার্জ মো.খলিলুর রহমান ওই মামলাটি তদন্ত করার জন্য তদন্ত ইন্সেপেক্টর মো. জহিরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। তিনি ২০ সেপ্টেম্বর আটকৃত ৪ জনকে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করেন এবং জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আদালতে ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতের বিজ্ঞবিচারক উক্ত জালিয়াত চক্রের ৪ জনের বিরুদ্ধে ৭দিনের রিমান্ড’র নির্দেশ দেন। ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকা বিভিন্ন জেলা-উপজেলার একাধিক ব্যক্তির নাম সহ ব্যাপক তথ্য জানতে পারেন। সে অনুয়ায়ী পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম সম্প্রতি গোপন সাংবাদের ভিত্তিতে উজিরপুর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে ৬২টি জাল দলিল ও ৫টি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নামের সিলসহ একাধিক মামলার আসামী আলাউদ্দিন ওরফে নান্না ওরফে হানন্নান বেপারীকে (৪৫) গ্রেফতার করেন। পরে তার বিরুদ্ধে আদালতে ১০দিনে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত নান্নার বিরুদ্ধে ৫দিনের রিমান্ড’র নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, নান্নার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি, হত্যা, চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে এক এক সময় এক এক নাম পরিচয় ব্যবহার করে আসছে বলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান।

এবিষয়ে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, জাল-জালিয়াতি চক্রের সংঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে। এ চক্রের সদস্যরা ধরা পড়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও শন্তি ফিরে এসেছে। এছাড়াও জালিয়াত চক্রের সাথে জড়িত অপর সদস্যদের পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করা হবে বলেও তিনি জানান।