খােলাবাজার২৪,বুধবার,২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ঃ প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক ভোটারের ভোট দেওয়া সাংবিধানিক অধিকার। আর প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে গঠিত হয় সরকার। এভাবেই গণতান্ত্রিক ধারা চলতে থাকে। ভোটাররা যখন ভোট দিতে পারেননা, কথা বলতে পারেননা, অধিকার যখন নস্যাৎ হয়, ক্ষমতাসীনদের জনগণের মান্ডেট এর ধার না ধেরে ক্ষমতা থাকার অধিক প্রবণতা দেখা যায়-তখন সেটা স্বৈরাতন্ত্র বলে ? বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রে না স্বৈরাতন্ত্রে আছে তা পাঠকরা উপলব্দি করুন তো ?
নির্বাচনী যাচাই-বাছাই এর সময় জনগণ দেখল যেনো শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি’র মনোনয়নপত্র বাতিলের হিড়িক পড়ছিল বিভিন্ন অযুহাতে। আওয়ামীলীগের একটিও মনোনয়নপত্র বাতিল হলো না। আওয়ামীলীগ বা মহাজোটের প্রার্থীরা অবাধে পুলিশের সহযোগিতায় প্রতীক বা মার্কা টানাচ্ছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি প্রার্থীরা প্রতীক টানাতে পারেন না, প্রচারণা চালাতে পারেন না। পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী ক্যাডাররা এসে বিএনপি’র উপর হামলা চালায়। আর পুলিশ সেই ঘটনায় বিএনপিদের নামে মামলা করে এবং ধরে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনী নামানোর পরও দেখা গেল যেনো পুলিশের বেপরোয়া আরো বেড়ে গেছে। আওয়ামী ক্যাডাররা তো আছেনই পুলিশ যেনো আরো বড় আওয়ামী ক্যাডার। শরীয়তপুরে ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নূর উদ্দিন অপু নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশ তাকে গুলিবিদ্ধ করে রক্তাক্ত করে। তাকে বাচানো জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। আবার ঢাকা মহানগরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর আগাম কর্মসূচি ঘোষণা দিলে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলে পুলিশ তাদের বের হতে নিষেধ করেন। অপরদিকে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী তথা মহাজোটের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাঠকগণ ভাবুনতো একবার এটা কি কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না পুলিশি রাষ্ট্র বা আওয়ামী ক্যাডার রাষ্ট্র। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে পুলিশ বাহিনীর এমন পক্ষপাতিত্ত্বের ঘটনা বর্তমানে বিশে^র আর কোথাও নেই। জনগণ ভাবছে-বাংলাদেশ এখন আওয়ামী ক্যাডার তথা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে-যেখানে গণতান্ত্রিক কোন অধিকার নেই।
বিএনপি’র যে যেখানে প্রচারণা চালাতে বেরুচ্ছেন-সেখানেই আওয়ামী ক্যাডার ও পুলিশের যৌথ হামলায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না। কেউ সাংবিধানিক অধিকার বলে পুলিশের ও আওয়ামী ক্যাডরদের বাধা উপেক্ষা করে প্রচারণা চালাতে গেলে বুকে, পিঠে, মাথায় যেখানে হোক গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন পুলিশের দ্বারা।
এতো কিছু সত্ত্বেও ৩০ ডিসেম্বর জনগণ মুখিয়ে আছেন ভোট দেওয়ার জন্য; বিশেষ করে নতুন ভোটাররা। তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে তারা কি ভোট দিতে পারবেন ? এ প্রশ্ন মনে তাদের এই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সময় অতীতের ঘটনাপ্রবাহে। তারা দেখছে ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারী নির্বাচনে জনগণ কোন ভোট দিতে পারেননি। ঐদিন বিরোধী দলীয় নেত্রী গৃহবন্দী, সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ, লোকজন আওয়ামী ক্যাডারদের ভয়ে ঘর থেকে বের হননি। ভোটকেন্দ্রে কুকুর ঘুমিয়ে ছিল। দলীয় এজেন্ট, রিটানিং কর্মকর্তারা নৌকা প্রতীকে অবাধে ছিল মেরেছে। পুলিশ কিছুই বলেননি। দু’-এক কেন্দ্রে লোকজন বেশী হলে আওয়ামী ক্যাডাররা ধাওয়া করেছিল যদি ভোট তারা ধানের শীষে দেয়। ১৫০ আসন পেলে ক্ষমতায় যাওয়া যায় সেখানে ১৫৪ আসন আওয়ামীলীগ আগেই বিরোধী মনোনয়ন বাতিল করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে নেন। ভোট পরেছিল সর্বসাকুল্যে ০৫%। ইতিহাসের লজ্জাকর নির্বাচন ছিল সেটা। আর এবার এখনো পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তা-হচ্ছে আওয়ামী ক্যাডার ও পুলিশি যৌথ হামলার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন করে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, মামলা-হামলা দিয়ে বন্দী করে আহত-নিহত করে নির্বাচন করা। যেনো একক কর্তৃত্ববাদ এর ইশারায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করানো হচ্ছে। আর এতোসব অন্যায়-অত্যাচার, দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, গ্রেফতার-রিমান্ড দেখে নতুন ভোটারসহ জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কোন প্রতীকে ভোট দিবে। জনগণের এ মনোভাব আওয়ামী ক্যাডার ও পুলিশ প্রশাসন বুঝে ফেলছে। তাই তারা আরো বে-পরোয়া হচ্ছে।
কিন্তু জনগণ চায় অবাধে ভোট দিতে। কিন্তু অবাধে এ ভোটের কথা আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আতি-পাতি-পিঁপড়া নেতাদের মুখে পর্যন্ত। কিন্তু কাজের বেলায় তাদের মিল নেই। কাজ করে তারা ঠিক উল্টোটা। তবুও জনগণ চায় ভোট দিতে। যে ভোট দিতে কোন বাধা থাকবে না। অবাধে, সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ ভোট দিতে চায়। এবং সে ভোটের সঠিক হিসাব ও প্রকাশ এবং বিজয়ী দলের কাছে সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নিশ্চয়তা চায়। জনগণ আওয়ামী ক্যাডার তথা পুলিশি সন্ত্রাসী শাসন চায় না। জনগণ চায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-যেখানে জনগণ তাদের প্রাপ্ত ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করবেন। জনগণ চায় সকল দলের সমান সুযোগ নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠ, স্বচ্ছ নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণময়লক নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী ক্যাডার ও পুলিশের হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং তা বন্ধে প্রয়োজনে দেশী-বিদেশী সহায়তাও কামনা করেন। জনগণ একক কর্তৃত্ববাদ চান না-চান গণতন্ত্রায়ণ। জনগণ সন্ত্রাস চাননা-শান্তি চান। পুলিশের পক্ষপাতিত্ত্ব চাননা-নিরপেক্ষতা চান। জনগণ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ভোট দিতে চান এবং সে ভোটের সঠিক হিসাব ও প্রকাশ চান। এ দেশের জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার চান। অর্ধাৎ জনগণ ভোট দিতে চায়।
মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট