Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০১৬:  দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ৬ বছর বয়সের এক শিশু ধর্ষনের অভিযোগে ঘটনার ১০ দিনের মাথায় মামলা দায়েরের পর মোঃ মতি (৩৮) নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের পরামর্শে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও ধর্ষনের আলমত বা নমুনা পায়নি চিকিৎসকেরা। আর শিশুটির প্রতিবেশীরা ধর্ষন ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মোঃ মতির দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করলেও মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবী বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর। সুষ্টু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবী জানিয়েছেন তারা।

গ্রেফতারকৃত মোঃ মতি বীরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মোঃ জয়নালের পুত্র।

জানা যায়, চলতি মাসের ৬ তারিখে ওই ৬ বছর বয়সের শিশু ধর্ম নানা কর্তৃক ধর্ষনের শিকার হয়েছে-এমন অভিযোগে গত ১৬ নভেম্বর বীরগঞ্জ থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করে শিশুটির পিতা। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৬ নভেম্বর বীরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে শিশুটিকে ধর্মনানা মতির বাড়িতে রেখে আসে তার স্ত্রী। ওই দিন রাতে মতি ওই শিশু কন্যাকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। যা পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শিশুটির মা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর ধর্ষনের ঘটনা জানতে পারে। শিশুটির চাচা মোসলেম উদ্দীন জানান, ধর্ষনের বিষয়টি তিনি ৮ নভেম্বর শুনেছেন। এরপর তিনি বিষয়টি গত ১৫ নভেম্বর স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম ও মোঃ তৈয়বকে জানালে তারা স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু ১৫ নভেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় তারা বীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশের পরামর্শেই শিশুটিকে প্রথমে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানান তিনি। একই সাথে মামলায় অভিযুক্ত মোঃ মতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শিশুটির পরিবার এই ধর্ষনের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করেন।

শিশুটি প্রতিবেশী বীরগঞ্জ উপজেলার সোনাচালী গ্রামের অধিবাসীরা শিশু ধর্ষনের ঘটনায় মোঃ মতির দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করেন।

এদিকে মিথ্যা অভিযোগ এনে মোঃ মতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে মর্মে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বীরগঞ্জের বিষ্ণুপুর গ্রামবাসীর মধ্যে। এলাকার একজন নিরীহ মানুষ হিসেবে পরিচিত মোঃ মতি এ ধরনের কাজ করতে পারে-এমন কথা বিশ্বাস করতেই পারছেন না ওই এলাকার মানুষ। বিষ্ণুপুর গ্রামের ৮৫ বছর বয়স্ক জয়নদ্দিন আহমেদ জানান, শিশুটির পরিবার ইতিপুর্বেও এমন ঘটনা সাজিয়ে মানুষকে হয়রানী করেছে। একই কথা জানালেন এলাকার সাজেদা বেগম, আব্দুল মজিদ, আবু সাঈদসহ অন্যান্যরা। তারা জানালেন, অত্যন্ত গরীব হলেও এলাকার একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত মোঃ মতি।

মোঃ মতির শিশু কন্যা তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী মৌ জানালেন, ওই রাতে ওই শিশুসহ একসাথে ঘুমিয়েছে তারা। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার একসাথে খেলেছে তারা। এরপর শিশুটির মা এসে খাওয়া দাওয়া করে তাকে বাড়ীকে নিয়ে যায়।

মতির স্ত্রী পারভীন আক্তার তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদের বিচার দাবী করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম জানান, শিশুটির পরিবার তাকে ১৫ নভেম্বর এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। এরপর তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সুষ্ঠু তদন্ত হলেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

বীরগঞ্জ থানার ওসি আবু আককাছ আহমদ জানিয়েছেন, ৬ নভেম্বর ঘটনা ঘটলেও শিশুটির পরিবার ১৬ নভেম্বর থানায় আসার সাথে সাথেই মামলা নেয়া হয়েছে এবং আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, শিশুটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। ধর্ষন ঘটনার বিষয়ে তিনি জানান, মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতেই ধর্ষনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে শিশুটি বর্তমানে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মেহেরুন নাহার মিনু জানান, গত ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ঘটনার ১০ দিন পর ধর্ষনের আলামত পাওয়া কঠিন। কিন্তু যেহেতু শিশুটির বয়স মাত্র ৬ বছর, সেহেতু শিশুটি ধর্ষনের শিকার হলে অবশ্যই ক্ষত থাকতো। কিন্তু এ ধরনের কোন ক্ষত তারা পায়নি। এছাড়াও শিশুটির ধর্ষনের কোন আলামত বা নমুনা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।