খােলা বাজার২৪। বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দেয়ার চাপ বাড়ছে বিএনপিতে। দলের একটি অংশের নেতা ও কয়েকটি শরিক দল এখনই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে হরতাল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো উস্কানিতে পা না দিয়ে আপাতত কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত্ম বিএনপির। খালেদা জিয়া মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত্ম শান্ত্মিপূর্ণ আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে চায় দলটি। আর যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত্ম বাস্ত্মবায়ন ঠেকাতে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সবগুলো কর্মসূচি মনিটরিং করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের পরও কোনো কঠোর কর্মসূচি না দেয়ায় দলের বেশকিছু নেতা ও ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের ক্ষোভ আছে। তারা দেশব্যাপী কঠোর সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিল এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এ ব্যাপারে বিএনপির হাইকমান্ডে সিদ্ধান্ত্ম হচ্ছে, কোনো অবস্থাতাতে আর সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতে আপাতত শান্ত্মিপূর্ণভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্ব হলেও কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করা যাবে না বলে হাইকমান্ডের পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। তবে শান্ত্মিপূর্ণ চালমান আন্দোলনে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। আজ অনশন কর্মসূচির পর আবারো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নতুন কর্মসূচিতে নামের ভিন্নতা থাকলেও সব হবে শান্ত্মিপূর্ণ এবং জনসম্পৃক্ত।
সিনিয়র এই নেতা আরও বলেন, বিএনপির আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করা আপাতত প্রথম টার্গেট। তা পূরণে এখন পর্যন্ত্ম সফলতা পাওয়া গেছে। শান্ত্মিপূর্ণ আন্দোলনের কারণে দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ জনগণও তাতে যোগ দিতে শুরম্ন করেছেন।
সূত্রমতে, যারা এখনই কঠোর কর্মসূচি দেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের ব্যাপারে হাইকমান্ড থেকে শুরম্ন করে দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতারা বেশ সতর্ক। বিভিন্ন কর্মসূচিতে এ সব নেতা উপস্থিতি থাকলেও তাদের কোনো দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতকেও শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বিএনপি নিরম্নৎসাহিত করছে। সঙ্গত কারণে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপির আন্দোলনে সব দলের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত্ম হলেও জামায়াত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি বললেই চলে। আর তাতে বিএনপি বিরক্ত নয়, বরং খুশি।
দলের মধ্যসারির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি আশা করেছিল ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই আশা পূরণ করেনি। আর যারা কঠোর কর্মসূচিতে দলকে নেয়ার চেষ্টা করেছে তারাও দলে এবং জোটে কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন।
এখনই কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, এখন হার্ডলাইনে গিয়ে দীর্ঘ এক বছর সময় আন্দোলনের কর্মসূচি টেনে নেয়া কঠিন। দলের নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে পড়বেন। তাদের বিশ্বাস, খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। জামিন না পেলেও আপাতত কঠোর কর্মসূচি দেবে না দলটি। খালেদা জিয়া নিজেই সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আগে এ পরামর্শ দিয়ে গেছেন। আর একই সুরে কথা বলছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। তাই যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত্ম বাস্ত্মবায়ন ঠেকাতে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সবগুলো কর্মসূচি মনিটরিং করছেন তারেক রহমান।
সবগুলো কর্মসূচি তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে লন্ডনে বসেই সরাসরি দেখছেন তিনি। শুধু ঢাকা নয়, এর বাইরের কর্মসূচির ফুটেজসহ সার্বিক তথ্য তার কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদেরও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত্ম সব কর্মসূচির সফলতা দেখে তারেক রহমান সন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, দলটির মূল লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা। তাই নির্বাচন যত কাছে আসবে তখন আন্দোলনের ধরন পাল্টানোর কথা ভাববে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির পরবর্তী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, দেশব্যাপী শান্ত্মিপূর্ণ ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া, ২০ দলীয় জোটের বাইরের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের দাবি আদায়ে সারাসরি সম্পৃক্ত করা, কর্মসূচিগুলোতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা তুলে ধরে কৌশলে নির্বাচনী প্রস্তুতির কর্মকা- চালানো, ঢাকার পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় জমায়েতের মাধ্যমে কর্মসূচি করা। সাংগঠনিক এ সব তৎপরতার বাইরে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আন্ত্মর্জাতিক মহলের সমর্থনের চেষ্টা করছে বিএনপি।
আন্দোলনের পরবর্তী ধরন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত্ম তারা শান্ত্মিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কোনো সহিংস কর্মসূচিতে বিএনপি বিশ্বাস করেন না। দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশেই নিয়মতান্ত্রিক ও শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন এবং করে যবেন। যাযাদি