
রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কায় দেশটির বৃহত্তম শহর রাজধানী কলম্বোসহ অন্তত ৮টি স্থানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত ১৯০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৫৬ জন নিহত হয়েছে। পরে আরও দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ হামলায় অন্তত আরও দু’জন নিহত হয়। এতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৮ জনে। এ হামলায় অন্তত ৫০০ শ’র অধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
এ ঘটনায় জরুরি বৈঠকে বসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে। বৈঠক থেকে দেশজুড়ে কারফিউ ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে দেশজুড়ে ১২ ঘণ্টা কারফিউ জারি করা হলেও সেনা মোতায়েন কত দিন থাকবে তা উল্লেখ করা হয়নি।
বিস্ফোরণের এ ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দেশের জনগণকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী এই বোমা হামলার তদন্ত শুরু করেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যেসব গির্জায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেসব স্থানে দুই শতাধিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
সেইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর সংবাদে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, দেশজুড়ে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি সোম ও মঙ্গলবার সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুভান বিজয়বর্ধনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারির এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’
এছাড়া দেশটিতে ফেইসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রবিবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে প্রথম বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় গির্জাগুলোতে ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলছিলো। এর কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণ ঘটে রাজধানী কলম্বোর শাংরি লা, সিনামন গ্র্যান্ড ও কিংসবুরি হোটেলেও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কাতুয়াপিটিয়াতে অবস্থিত সেন্ট সেবাস্তিয়ান নামক গির্জার ছাদ ধসে পড়েছে এবং গির্জার মূল স্থানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। এ ঘটনায় অন্তত ৩৫ বিদেশি পর্যটক নিহত হয়েছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে দুই বাংলাদেশি নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিখোঁজ দুই বাংলাদেশির মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক, অন্যজন শিশু। চার সদস্যর পরিবারটি শ্রীলঙ্কার বেড়াতে গিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রধান একটি দেশ। দেশটিতে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের সংখ্যা মাত্র ছয় শতাংশ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী শ্রীলঙ্কা। ১৯৭২ সালের আগে এই দ্বীপ সিলন নামেও পরিচিত ছিল। এর প্রশাসনিক রাজধানীর নাম শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে। এর প্রধান শহর কলম্বো। ভারতের দক্ষিণ উপকূল হতে ৩১ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত।
২০১৬ সালের গণনা অনুযায়ী দেশটিতে মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার প্রায়। দেশটির ১৪% এর অধিক লোকজনের দৈনিক আয় ১.২৫ মার্কিন ডলারের নীচে। প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।