%20h.jpg)
খােলাবাজার ২৪,রোববার, ২১ এপ্রিল ২০১৯ঃফরিদা আক্তার পপি। যাকে ববিতা নামে সবাই চিনেন। ঢালিউডের কিংবদন্তি এই নায়িকা সত্তর থেকে আশির দশকে চুটিয়ে সিনেমা করেছেন। ববিতা ২৫০ টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
ববিতা ১৯৫৩ সালে বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা ছিলেন একজন চিকিৎসক। বাবার চাকরি সূত্রে তারা বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশোরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরে।
তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।
ববিতার একমাত্র সন্তান অনিক। বর্তমানে অনিক কানাডায় থাকছেন। ববিতাও বছরের বেশিরভাগ সময় ছেলের সাথে কানাডায় থাকেন।
তার চলচ্চিত্রে আসার পেছনে বড়বোন সুচন্দার অনুপ্রেরণা রয়েছে। সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে। এই চলচ্চিত্রে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্র জগতে তার প্রাথমিক নাম ছিল ‘সুবর্ণা’। তিনি ‘কলম’ নামের একটি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছিলেন সে সময়। জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই তার নাম ‘ববিতা’ হয়ে যায়।
১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায় অভিনয় করেন প্রথম নায়িকা চরিত্রে। ১৯৬৯ সালের ১৪ই আগস্ট চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় এবং ঐদিন তার মা মারা যান।
তার কর্মজীবনের শুরুতে বোনের স্বামী জহির রায়হানের পথ প্রদর্শনে চললেও পরে তিনি একাই পথ চলেছেন। সত্তর এর দশকে শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি গোটা দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
‘টাকা আনা পাই’ সিনেমাটা ছিল তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট যা পরিচালনা করেছিলেন জহির রায়হান। এরপর তিনি নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’ সিনেমাতে অভিনয় করেন যা ছিল সুপারহিট সিনেমা।
ববিতার চলচ্চিত্র কর্মজীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের একটি অসমাপ্ত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অশনি সংকেত’। এই চলচ্চিত্রে ‘অনঙ্গ বৌ’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন এবং ব্যাপক প্রশংসিত হন।
সংসার, ইয়ে করে বিয়ে, বাঁদী থেকে বেগম, এক মুঠো ভাত, অগ্নিশিখা, তিন কন্যা , রামের সুমতি, গোলাপী এখন ঢাকায় , জীবন সংসার, স্বপ্নের পৃথিবী, পদ্মা মেঘনা যমুনা সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
ববিতা অভিনয়ের এক পর্যায়ে বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ঢালিউডের চলচ্চিত্রে ববিতা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। নায়িকা হিসেবে তার স্বাতন্ত্র্যতা লক্ষণীয়। অভিনয়, গ্ল্যামার, স্কিন পার্সোনালিটি, নৃত্য কুশলতা সবকিছুতেই তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।
তিনি ১৯৭৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। এছাড়া ১৯৮৬ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক এবং ২০০৩ ও ২০১৩ সালে দুইবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ২০১৮ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।