
এসময় বিএনপির শীর্ষ নেতারা মঞ্চে ছিলেন। এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন ‘ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ করছি, বাধা দেওয়ার কোনো কারণ নেই’।
আর যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেছেন, ‘সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করা পুলিশ প্রশাসনের উচিৎ হয়নি’। অন্যদিকে বিএনপির আরো অভিযোগ ছিলো সমাবেশ থেকে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১ টার আগেই বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ, ভারতের সাথে চুক্তি বাতিল এবং কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
প্রতিবাদী সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশস্থলে শুরুতে কাউকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। যারা আগে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁদের এক পর্যায়ে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সমাবেশ ঘিরে বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি, সাঁজোয়া যান এবং জলকামানবাহী গাড়ি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
সকালেই সমাবেশের অনুমতি চাইতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে গিয়েছেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। কিন্তু প্রতিনিধি দল জানিয়েছে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তবুও তারা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ বাস্তবায়ন করেন।
নয়াপল্টন এলাকায় দায়িত্বরত পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেছিলেন, ‘যেহেতু বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি তাই তাঁদের সমাবেশ করা উচিৎ নয়।’
এদিকে মতিঝিল-দৈনিক বাংলা পল্টন মোড় ও খিলগাঁও-মালিবাগ রেলগেট হয়ে যেসব বাস চলাচল করতো সেসব বাসকে হঠাৎ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। যদিও সমাবেশ শুরু হলে এক পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কে ফাঁকা রাখে বিএনপির নেতাকর্মীরা। যেখান দিয়ে কিছু গাড়ি চলাচল করতে শুরু করে।
কিন্তু সমাবেশের এক পর্যায়ে হঠাৎ রাস্তা পরিবর্তন করে বিএনপির সমাবেশের মধ্যে দিয়ে মতিঝিল-দৈনিক বাংলা-পল্টন মোড় হয়ে শাহবাগমুখি বাস বিকল্প, গাবতলী মিনি সার্ভিস (৮ নম্বর), বিহঙ্গ পরিবহন, রাইদা পরিবহন, নিউ ভিশন। এসব বাসগুলো যাত্রাবাড়ি থেকে মতিঝিল হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে মিরপুর পর্যন্ত চলাচল করতো।
গাবতলী মিনি ৮ নং বাস প্রেসক্লাবে রোড হয়ে গাবতলী যেতো এবং রাইদা চলাচল করতো হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে কমলাপুর রামপুরা হয়ে কিন্তু এসব বাস বিএনপির সমাবেশেল মধ্য দিয়ে চলাচল করছে।
আবরারের রক্তে আধিপত্যবাদ সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে বীজ বপিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আবরার স্ট্যাটাস দিয়েছিলো। এটা দেশের মানুষের প্রতিবাদ। মেধাবী ছাত্র বলেই সেটা করেছে। তার জন্য তাকে প্রাণ দিতে হলো। আবরারের কথা এ দেশের মানুষের কথা। আবরারকে হত্যা করে দেশের জনগণের কণ্ঠকে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র সমাজ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তার রক্ত জনগণ বৃথা যেতে দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ জেহাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার পতনের বীজ বপিত হয়েছিল। তেমনি আবরারের রক্তের বিনিময়ে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বীজ বপিত হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, গণতন্ত্র মুক্ত হবে।’
ভারতের সাথে চুক্তির সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফেনী নদীর পানি উত্তোলনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি দিয়েছেন, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে সম্মতি দিয়েছেন, উপকূলে যৌথ নজরদারির নামে ভারতকে ২০টি রাডার প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা যে এলপিজি আমদানি করি তা ভারতে রফতানি করার অনুমতি দিয়েছেন। এই চুক্তির প্রতিটি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে মোশাররফ বলেন, ‘ফেনী নদীর পানি উত্তোলনের অনুমতি দিলেন কিন্তু তা কতখানি তারা উত্তোলন করবে তা পরিমাপ করার বিষয়ে এই চুক্তিতে কিছু নেই। এছাড়া ৩৬টি পাইপ দিয়ে ইতোমধ্যেই ফেনী নদীর পানি ভারত জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।’
মোশাররফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘সামান্য পানি-, কিন্তু এর ফলে ফেনী নদীর পাশের লোকজনের কৃষি কাজ ব্যহত হবে। মুহুরী প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি বলছেন জাতীয় স্বার্থ ব্যাহত করেননি। সাবরুম শহরে তাহলে এতদিন তারা পানি পান করেছিল না? এটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে প্রতারণা করে ভারতকে সুবিধা দেয়ার জন্যই করেছেন।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সমুদ্রবন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভারতের পণ্য বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে খালাস হলে আমাদের ব্যবসায়ীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যৌথ পর্যবেক্ষণের নামে বিদেশি রাডার স্থাপন হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হবে, হুমকির মুখে পড়বে। আর এলপিজি আমদানি করে করে তা রফতানি করবেন। ৪টি চুক্তি ভারতের স্বার্থে করা হয়েছে। এটা দেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি।’সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করেছিলেন গ্যাস না দেয়ার জন্য ২০০১ সালে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তাহলে এবার কি তার খেসারত দিলেন। আসলে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে তিনি চুক্তি করে এসেছেন।’
বিএনপির স্থায়ি কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ভারত সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক তরফা ভারতকে দান করে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এজন্য আমরা লজ্জিত নই। কিন্তু আমি লজ্জিত একজন উপমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের ইজ্জত নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বলবো নৈশ ভোটের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এ সরকারের ইজ্জত বলতে কিছু নেই। আমাদেরকে আবরারের মতো জেগে উঠতে হবে।
বিএনপির স্থায়ি কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, এই সরকার খাদে পড় গেছে। পদত্যাগ সময়ের ব্যাপার। আবরার নির্যাতিত হয়ে ছাত্রলীগের হাতে খুন হয়েছে। এই আবরারের হত্যাকান্ড সারাদেশের মানুষকে অভাক করে দিয়েছে। এ দেশে হাজার হাজার আবরারকে জন্ম নেবে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক মন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের স্বার্থ বিক্রি করেননি কিন্তু দেশের মানুষ ঠিকই বুঝে এই সরকার দেশের পুরো সারভৌমত্ব বিক্রি করে এসেছেন।
ঈসমাঈল হোসেন সম্রাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্রাট মাত্র দুদিন কারাগারে ছিলো এরপর তাঁকে ভিআইপিভাবে রাখা হচ্ছে, উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও খালেদা জিয়া সেই সুযোগ পাচ্ছে না।এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যাবে না। আন্দোলন করে এই সরকারকে আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে নামানো এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলনের শপথ নিতে হবে
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।