খােলাবাজার২৪, শুক্রবার, ২০মার্চ,২০২০ঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিদেশফেরতদের নিয়ন্ত্রণই করা জরুরী ।এখনো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে (কমিউনিটি) সংক্রমণ সে অর্থে শুরু হয়নি। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হলে তা হবে তৃতীয় স্তরে। ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ এখন সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে রয়েছে। যদি সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সংক্রমণ ঘটে, তখন তা হবে স্তর ৪। এখন আমাদের উচিত কীভাবে সংক্রমণকে দ্বিতীয় স্তরে আটকে রাখতে পারি তা দেখা।
এ জন্য সরকারি, বেসরকারির পাশাপাশি রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। এসব দায়িত্ব যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারি, তাহলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আমরা দ্বিতীয় স্তরে আটকে রাখতে পারব। নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
সরকারিভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা (পলিসি) করা হয়েছে। ৬৫ পৃষ্ঠার এই নীতিমালায় কার কী দায়িত্ব, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নীতিমালার অংশ হিসেবে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির প্রথম কাজ হচ্ছে, বিদেশ থেকে কারা এসেছে, তারা কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো মেনে চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। এটা কর্মপরিধিতে বলা রয়েছে। যদি না মানে, তা প্রশাসনকে জানাতে হবে। এসব বিষয় সমন্বয় করবেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য দপ্তর বা সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন বিদেশফেরতদের তালিকা সংরক্ষণ করে কমিটিগুলোকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে তা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এই কাজ যদি ভালোভাবে করা যায়, তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। কারণ, এখন পর্যন্ত বিদেশফেরতদের মাধ্যমেই করোনা ছড়াচ্ছে। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ব্যক্তিপর্যায়ে দায়িত্বটা অনেক বড় ব্যাপার। এটা নিজ নিজ সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ থেকে করা উচিত। এ ক্ষেত্রে যাঁর পরিবার কিংবা পাড়ায় বিদেশফেরত আছেন, তাঁদের সচেতন হতে হবে। প্রথম কাজ হবে বিদেশফেরত লোকটিকে বুঝিয়ে একটা কক্ষ এবং শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য করা। ঘরের অন্য সদস্যরা মাস্ক ব্যবহার করবেন। কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিকে দূর থেকে খাবার দেওয়া হবে। যদি তাঁর মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে প্রেরণ করা। ঘরের লোকদেরও সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা–নিরীক্ষার আওতায় আনা দরকার হবে।
রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব হবে জনগণকে করোনা সম্পর্কে বোঝানো, যেন জনসমাগম এড়িয়ে চলে, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলে। যথাসম্ভব বাজার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিতে হবে। এ ছাড়া মসজিদ, মন্দিরে প্রার্থনা থেকে আপাতত বিরত থাকার কথা বলবেন ধর্মীয় নেতারা। বিপণিবিতানে সময় কমিয়ে দেওয়া যায় এখন।
অধ্যাপক এম এ হাসান চৌধুরী।প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেসব প্রতিষ্ঠানের কাজ ঘরে বসে করা সম্ভব, তাদের সেটাই করা উচিত। অফিসে যাঁরা যেতে বাধ্য, তাঁদের পরস্পর থেকে তিন ফুট দূরত্বে বসা উচিত। এ ছাড়া ব্যাংকে টাকা গুনে হাত মুখে নেওয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে। হাত সাবান–পানি অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে প্রতিনিয়ত। সামগ্রিকভাবে কেউ যেন মুখে, নাকে হাত না দেয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পারতপক্ষে গণপরিবহন এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়। গণপরিবহনগুলো পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থাও নিতে পারে।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রস্তুতি ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। ফ্লুর মতো রোগ নিয়ে এখন অনেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে যাচ্ছেন। হাসপাতালগুলো আইসোলেশন ইউনিট করেছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে এ ধরনের রোগী পেলে আলাদা কক্ষে স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানেই যাক, সেখানে যাতে রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, করোনা রোগীর নড়াচড়া যত কম হবে তত মঙ্গল।
চিকিৎসক ও নার্সদের প্রস্তুতি হিসেবে তাঁদের পিপিই (সুরক্ষা পোশাক) পরিধান করতে হবে। এই পোশাক ছাড়া উপসর্গ আছে এমন রোগী যেন পরীক্ষা করা না হয়। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে অনেক হাসপাতাল এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন জীবাণুনাশক সঙ্গে রাখতে হবে। এসব করা গেলে বাংলাদেশে করোনাকে সংক্রমণের দ্বিতীয় স্তরে রাখা যাবে বলে মনে করি। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর (কমিউনিটি) মধ্যে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে।