খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৫
দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো তদন্তের লাল ফিতায় বন্দি। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও রহস্যের কোন সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। ফলে হত্যাকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অনেক ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের অজুহাতে গ্রেফতার করছে না সন্দেহজনক আসামিদেরও। তবে পুরো জাতিকে নাড়া দেয়া এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরলস চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে। রাজধানীর রাজাবাজারে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী, গোপীবাগে কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক, খুলনায় তৈয়েবুর রহমান ও তার ছেলে মনির ও উত্তরায় জঙ্গি সংগঠন থেকে ফিরে আসা ফল ব্যবসায়ী মাসুম হত্যার রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। এছাড়া মিরপুর কালসীতে প্রকাশ্যে ১০ জনকে পুড়িয়ে হত্যা, রামপুরায় সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যার রহস্য এখনো অনুদঘাটিত। পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনারও কোনো কুল-কিনারা এখনো হয়নি। ২০১৩ সালের ৯ আগস্ট খুলনার খালিশপুরে তৈয়বুর রহমান (৬০) ও তার ছেলে মনিরকে (১২) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ধর্মীয় মতবিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। তাছাড়া বের হয়নি ঘটনার কোন ক্লুও। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এসআই সিহাব বলেন, প্রথম অবস্থায় বেশ কজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তবে তেমন কোন তথ্য না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এনে এখনো তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এ তদন্ত শেষ কবে হবে তা জানা নেই এই পুলিশ কর্মকর্তার। একই ধরণের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় রাজধানীর গোপীবাগে। ভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ প্রকাশ করে নিজেকে ‘ইমাম গাজ্জালী’র প্রতিনিধি দাবি করায় ছয় খুনের ঘটনা ঘটে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আটক করতে পারলে এসব ধর্মীয় মতবিরোধে হত্যা রহস্য ও জড়িতদের সনাক্ত করা যাবে। পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় পরিবারের সবাইকে বেঁধে নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ফারুকী সুন্নি মতাবলম্বী সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের রাতেই ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী অজ্ঞাতপরিচয় ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা ও ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরদিন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশ এখনো তদন্ত করছে মামলাটি। অন্যদিকে গোপীবাগের সিক্স মার্ডার মামলা প্রথমে মতিঝিল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে তা স্থানান্তর হয় ডিবিতে। কিন্তু দীর্ঘ তদন্তে কোন সুফল আসেনি। গোয়েন্দারা এখন অপেক্ষায় আছেন রাজাবাজারে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকাণ্ডের দিকে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তার বাসায় যাওয়া মাহমুদা নামের এক নারীকে আটক করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে কোন তথ্য মেলেনি। এছাড়াও উত্তরায় মাসুম নামের এক ব্যক্তি জঙ্গি সংগঠন থেকে চলে এসে নতুন জীবনের আশায় ফলের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনের অন্য সদস্যরা তাকে হত্যা করে। একই ঘটনা ঘটে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতেও। সেখানেও মোয়াজ্জেম নামের পুরনো এক জঙ্গি সদস্যকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ দুই ঘটনারও কোন রহস্য উদঘাটিত হয়নি। গ্রেফতার হয়নি জড়িতরা। এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তির কারণে খুব দ্রুত দাগী আসামি, খুনি, ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলেও প্রকাশ্যে মিরপুরের কালসীতে ১০ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার ক্লু বের হয়নি। সনাক্ত হয়নি কারা এর সঙ্গে জড়িত। উল্টো ভুক্তভোগী বিহারীদেরই আসামি করা হয়েছে পুলিশ পেটানোর মামলায়। আট যুবককে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনা এখন প্রায় অন্ধকারেই। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরলস চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা।