খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৬: সুন্দরবন বিনাশী সরকারি অপতৎপরতাই বনসম্পদ লুট ও অগ্নিসংযোগে দুর্বৃত্তদের উৎসাহিত করছে বলে জানিয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে সংগঠনের আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘নানা রকম বাহিনী মোতায়েন, কমিটি গঠন আর বিভিন্ন প্রতিশ্র“তি সত্ত্বেও এই এপ্রিল মাসেই চার দফা আগুনে পুড়ে ছারখার হলো সুন্দরবন। এর ক্ষতি কখনই পূরণ হবার নয়। সুন্দরবনে একের পর এক আগুন এবং সরকারের নির্লিপ্ত কিংবা দায়সারা ভূমিকা থেকে আমরা আশংকা করি যে, এসব আগুন পরিকল্পিত অন্তর্ঘাত।’
‘কয়লায় পানি পরিষ্কার হয় এবং কয়লা ডুবিতে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষ্য, এবং ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে সুন্দরবন আরও সুরক্ষিত হবে’ জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতির এই ভাষ্য সরকারের অক্ষমতার প্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
এতে আরো বলা হয়, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র, এর অতুলনীয় ইকোসিস্টেম, পশুপাখি গাছ লতাগুল্মসহ অসংখ্য প্রাণের বসতি, কয়েক কোটি মানুষের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বাঁধের গুরুত্ব বুঝতে সরকারের অনীহা এবং অক্ষমতাই প্রকাশ করে ওইসব বক্তব্যের মাধ্যমে। এসব বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিষ্ক্রিয় হতে এবং প্রাকৃতিক এ বন বিনাশী অপতৎপরতায় যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সক্রিয় হতে শক্তি যোগায়। সেজন্যই আমরা দেখি একের পর এক আগুন লাগার পরও বাংলাদেশের এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকারের কোনো কার্যকর তৎপরতা নেই।
ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে যে, এই আগুন লাগানোর সঙ্গে সরকারি দলের লোকজন জড়িত। এছাড়া প্রশাসনের সক্রিয় সমর্থন বা দায়িত্বপালনে নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া কারও পক্ষে এধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুন্দরবন বিকাশে মানুষের হস্তক্ষেপ দরকার নাই, দরকার নাই বিশ্বব্যাংক ইউএসএআইডির প্রকল্প, শুধু দরকার সুন্দরবনকে মানুষের লোভী আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের ঘাড়ের ওপর রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সরকারের একগুঁয়ে তৎপরতা সুন্দরবন বিনাশী তৎপরতায় নিয়োজিত স্থানীয়, জাতীয় ও বিদেশি সকল পক্ষকে আরও ধ্বংসাত্মক হতে উদ্বুদ্ধ করছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প কার্যত দুর্বৃত্তদের জন্য একটি চৌম্বক আকর্ষণী শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
বিবৃতিতে মুনাফার অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চোখ খুলে সরকারকে সুন্দরবনের দিকে তাকাতে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, এটি প্রকৃতির বিশাল সম্পদ, কাঠ বা জমি নয়। রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবন বিনাশী সকল তৎপরতা বন্ধ করুন, দুর্বৃত্তদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করুন, সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচতে দিন।