খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ : শরৎ মানেই উৎসবের আগমনীবার্তা। শরৎকালে এই উৎসব হয় বলে দুর্গা পূজাকে শারদীয় দুর্গোৎসব বলা হয়ে থাকে। এ উৎসব এখন আমাদের সংস্কৃতির অংশ। খড়কুটো, বাঁশ, পাট, রঙ, মাটি ইত্যাদি দিয়ে যে মানুষগুলো দিনরাত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরী করে তারা মুলত ভাস্কর্য শিল্পী। এদের চিন্তা শক্তিতে সাম্য ও মানবতা কতটা গভীর তা তাদের প্রতিমা দিয়ে পূজা মন্ডপ সাজানো দেখলেই বুঝা যায়।
আসুন শরৎ দেখি। যান্ত্রিক জীবনের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে প্রকৃতির শোভায় নিজেকে জড়িয়ে কাশ ফুলের মতোই শুভ্র মন নিয়ে পৃথিবীকে সাজাই ধর্মীয় গোড়ামি-উম্মাদনা-জঙ্গিবাদের কালো ছোবল থেকে। নিজেকে চিনি সবুজ প্রকৃতিতে। গড়ে উঠুক নূতন বাংলাদেশ।
আগামী ৭ অক্টোবর থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সুচনা। আগামী ১ অক্টোবর আবাহন বা মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। ৭ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রন পত্র ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনের পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৮ অক্টোবর সপ্তমী, ৯ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও কুমারী পুজা, ১০ অক্টোবর মহা নবমী এবং ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিষর্যন ও বিজয়া শুভা যাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
সনাতন ধর্ম বিশ^াস মতে জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবীতে) আসবেন, যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানী। দেবী সর্গালোকে বিদায়ও নেবেন ঘোটকে চড়ে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি প্রফেসর সূর্যকান্ত দাস, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার সাহা ও সাবেক সভাপতি রঞ্জিত কুমার সাহা জানান, এবার নরসিংদী জেলায় ৩শতাধিক মন্দির ও মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৫৮, রায়পুরা উপজেলায় ৫১, শিবপুর উপজেলায় ৬৫, মনোহরদী উপজেলায় ৩৮, বেলাব উপজেলায় ১৯, পলাশ উপজেলায় ৪৪ এবং নব-গঠিত মাধবদী থানায় ৩৬ সহ সর্বমোট ৩১১টি পূজা মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
নরসিংদী শহরের বেশ কয়েকটি পূজা মন্ডপ ঘুরে শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ পর্যায়ে প্রস্তুতি চুখে পড়েছে। মন্দির মন্ডপগুলোতে প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল, মঞ্চস্থাপন, আর সাজ সজ্জাসহ সেই প্রস্তুটি অনেকটা এগিয়েও গেছে। সব খানেই যেন সাজ সাজ রব। নরসিংদীর রায়পুরা, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব, পলাশ ও সদরে পূজা মন্ডপগুলোতে পূজাকে ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
নরসিংদী শহরের শ্রেষ্ঠ পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত সেবা সংঘ দুর্গা মন্দির, বাগবিতান ক্লাব দুর্গা মন্দির, শিববাগ দুর্গামন্দির, বৌয়াকুড় দুর্গামন্দির, মহালয়া দুর্গামন্দির, অগ্রণী সংঘ দুর্গামন্দির, যুবক সংঘ দুর্গামন্দিরসহ শহরের প্রায় ২৫টি পূজা মন্ডপে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও মন্দিরে মিলনায়তনের বারান্দায় শেডের নিচে নির্মান করা হচ্ছে প্রতিমা। পুরোদমে চলছে রং তুলির কাজ।
মন্দিরের সামনের মাঠ জুড়ে প্যান্ডেল স্থাপন ও মন্দিরের সাযসজ্জার কাজও শুরু হবে ২/৩ দিনের মধ্যেই। নরসিংদীর প্রখ্যাত প্রতিমা শিল্পী বাসুদেব পাল ও তার পরিবারের অন্যান্য প্রতিমা শিল্পীরা যথারিতি প্রতিমা নির্মানে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও যশোর, খালনা, সাতক্ষিরা, এমনকি ভারত থেকে আসা প্রতিমা শিল্পীরা নরসিংদীতে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে শারদীয দুর্গোৎসব নির্বিঘেœ আয়োজন করতে আইন শৃংখলা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নরসিংদী সার্কিট হাউজে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামানের সভাপতিত্বে পূজা উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও পুজার নিরাপত্তা বিষয়ে সভায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কিল) বশির উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডা. সুলতানা রাজিয়া, অতিরি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার নুরুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসীম উদ্দীন হায়দার, সদরের ইউএনও মোতাকাব্বীর আহমেদ, প্রফেসর মোহাম্মদ আলী, নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ মোর্শেদ শাহরিয়ার, রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হেলাল উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ। সভায় উপস্থিথ ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ও মন্দির কমিটির পূজারী ও ভক্তভৃন্দ।
এছাড়াও নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের সভাপতিত্বে নরসিংদী পৌরসভা মিলনায়তনে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ, শহর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পুজা মন্ডপ ও মন্দির কমিটির পূজারী বৃন্দসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।