খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০১৬ : শরীয়তপুর জেলা সদরের ১০০ শয্যার হাসপাতালে ৩ যুগ ধরে একই ঠিকাদার মালামাল সরবরাহ করায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই ঠিকাদার ও বংশানুক্রমে একই পরিবার খাবার, স্টেশনারী ও লিলেন কাজের সরবরাহ করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঐ পরিবারের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্মমানের খাবার পরিমানে কম সরবরাহ করে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতাল কতৃপক্ষ এ ঠিকাদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। একই ঠিকাদার বার বার খাবার,স্টেশনারী ও লিলেন কাজের মালামাল সরবরাহ করে অসছে। এব্যাপারে ঠিকাদার আঃ সামাদ খানের পূত্র মামুন খান দাবী যথা নিয়মেই দরপত্রের নি¤œদরদাতা হিসেবেই কাজ পেয়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছেন এবং সিডিইল অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে নি¤œমানের মালামাল বা কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
শরীয়তপুর হাসপাতাল কতৃপক্ষ সূত্রে জানাগেছে, ১০০ শয্যার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেসার্স খান এন্ড সন্স, মেসার্স ভবতোষ দাসও মেসার্স আঃ সামাদ খান একই স্বত্ত্বাধিকারী আঃ সামাদ খান প্রায় ৩ যুগ ধরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে খাবার ,স্টেশনারী ও লিলেন সরবরাহ করে আসছে। এ হাসপাতালে রোগী প্রতি ১২৫ টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। পূর্বের চেয়ে খাবারের বরাদ্ধ বাড়লে ও খাবারের মান ও পরিমান বাড়েনি। দরপত্র অনুযায়ী প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীর জন্য বরাদ্ধ রয়েছে চাল (ইরি-২৮)৩৫০ গ্রাম,মশর ডাল ১৫ গ্রাম, তৈল সোয়াবিন ১৪দশমিক ৫০ গ্রাম, তরকারী ২০০ গ্রাম, হলুদ মরিচ ও পেয়াঁজ ২ গ্রাম , মাছ (পাঙ্গাস রুই ও সিলভার কাপ )১২৯ গ্রাম সপ্তাহে ৪দিন । মাংস (মুরগী) ১২৯ গ্রাম (২দিন)সকালের নাস্তা ২টি রুটি (১৪০ গ্রাম) ২টি কলা (শবরী ও সাগর) ও ২টি মুরগীর(ফার্ম) ডিম। ঠিকাদেরর সাথে দরপত্রের চুক্তিতে এ সব সরবাহের কথা থাকলে ও বাস্তবে সরবাহের অনেকটাই মিল নেই । হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের অভিযোগ সদর হাসপাতালে সরবরাহ কৃত খাবার তারা খেতে পারেন না। মাছ সরবরাহ করা হয় পরিমানে অনেক কম। তা আবার নি¤œমানের। অনেক সময় আশ যুক্ত মাছ আধা রান্না অবস্থায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তা দুগন্ধে খাওয়া যাচ্ছেনা। ডাল কমদামের তা দেখতে পানির মতো। তা পরিমানে অনেক কম। সবজি বা তরীতরকারী প্রতিদিন প্রায় একই ধরনের নি¤œমানের সবজি দেয়া হয়ে থাকে। যা খাবারের অযোগ্য। রেশনের পুরাতন চালের ভাত সরবরাহ করা হয়, যা থেকে দুগন্ধ আসে। এ সকল নি¤œমানের খাবার সরবরাহ দেয়ার কারনে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের অনেকেই এ সকল নি¤œমানের খাবার নিচ্ছেনা। কারন এ সব খাবার খেলে রোগীরা সুস্থ্যতো দুরের কথা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। অনেকে পেটের পিড়া ও শারিরীক দুর্বলতা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বিষয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ বার বার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক কে তাগিদ দেয়ার পরে ও তারা কোন পরিবর্তন করছেনা। একই নিয়মে কম খাবার ও নি¤œমানের খাবার সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তারা যেন হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জিম্মি করে নিয়েছে। একই নিয়মে তারা স্টৈশারী ও লিলেন সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে। হাসাপাতালে রোগীদের ব্যবহার কৃত বালিশের কভার , চাদর ও কম্বল ধোলাইয়ের ক্ষেত্রে তারা যাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। কোন রকম ধূয়ে চাদর,বালিশের কভার ও কম্বল গুলো দিয়ে দিচ্ছে। চাদর ও বালিশের কভারে নীল দেয়ার কথা থাকলে ও কখনো তা দিচ্ছেনা। অনেক সময় দেখা যায় চাদর ও কম্বলে ময়লাযুক্ত রয়েছে । ঠিকমত ধোলাই না করেই দিয়ে দিচ্ছে। আবার কখনো বা কিছু কিছু চাদরের সাথে ধোলাই ছাড়া চাদর কোন রকম আয়রন করে দিয়ে দিচ্ছে। যা ব্যবহারেরর অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে রোগীরা হাসপাতালের বয়, নার্স ও আয়াদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে। হাসপাতাল কর্তপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী ষ্টেশনারী মালামাল সরবরাহ দেয়ার কথা থাকলে ও তা দিচ্ছেনা। মালামাল সরবরাহের জন্য চাহিদা দেয়া হলে যে সব মাল যে ধরনের মালামাল দেয়ার চাহিদা থাকে তা না দিয়ে কমদামের মালামাল সরবরাহ করা হয়ে থাকে বলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ অভিযোগ করেছে।
সদর হাসপাতালে ভর্তি রুদ্রকর সোনামুখী গ্রামের রোগী আ ছিয়া খাতুন বলেন , হাসপাতালের খাবার কাওয়া যায়না। ভাতে গন্ধ কয়। মাছ ভাল ভাবে ধূয়ে রান্না করেনা। মাছের সাথে আশ পাওয়া যায়। অনেক সময় আধা রান্না মাছ খেতে দেয়। আমাদেরকে যে পরিমান খাবার দেয় তাতে রোগীর হয়না। পানির মত ডাল দেয় । তাও সামান্য একটু দেয়। বেশ কয়েকদিন যাবত এ ভাবেই দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান এন্ড সন্স,মেসার্স ভবতোষ দাস ও মেসার্স আঃ সামাদ খান এর মূল মালিক মোঃ আঃ সামাদ খানের (সামাদ খান অসুস্থ্য) পূত্র মামুন খান বলেন, আমরা পুরাতন ঠিকাদার হিসেবে যথা নিয়মে দরপত্রে নি¤œদরদাতা হিসেবে কাজ পাইয়ে সিডিউল অনুযায়ী মালামাল ও সুনামের সহিত খাবার সরবরাহ করে আসছি। কোন রকম অনিয়ম করে খাবার কম বা নি¤œমানের খাবার সরবরাহ দেয়ার সুযোগ নেই। লেলিন ও স্টেশনারীর ক্ষেত্রে ও কতৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ ও ধোলাইয়ের কাজ সঠিক ভাবে করে আসছি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত)আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, খাবারের মান খুবই খারাপ, প্রতিদিন একই ধরনের খাবার সরবরাহ করে থাকে। নতুনত্বের কোন লেম নেই। রোগী অনুযায়ী মানসম্মত কোন খাবার দেয়া হয়না। অত্যন্ত নিম্মমানের খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। সিলভারকাপ,বার্মিজ রুই মাছ সরবারাহ করে থাকে। অনেক সময় পরিমানে ও কম দেয়।