Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 (পুরো বক্তব্য)

000-1খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৬:  স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী এবং বর্তমানে নিবন্ধিত সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

শুক্রবার বিকাল ৪টায় গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।

নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বাছাই কমিটির সদস্যদের সাবেক প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বিশ্ববিদ্যায়লের সাবেক অধ্যাপক ও দক্ষ যোগ্য নারীদের মধ্য থেকে নেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, জেলা জজের মর্যাদা সম্পন্ন, ন্যূনতম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার সম্পন্ন, সিনিয়র আইনজীবী, বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হবেন।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে দু’জন ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আটজন ব্যক্তিকে চার নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্তির সুপারিশ করবে বাছাই কমিটি।

এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে দুজনের মধ্যে একজন এবং নির্বাচন কমিশন পদে আটজন থেকে চারজনকে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন তার বক্তৃতায় ইসিকে অধিকতর শক্তিশালীকরণের জন্য বিধিবিধান ও আরপিও সংস্কার করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ইসির নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে এবং সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে।

খালেদা জিয়া ইসি কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের আহ্বান জানান। এছাড়া নির্বাচনের সময় ইসি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করবে বলেও প্রস্তাব দেন তিনি।

খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন।

তিন বলেছেন, ভোটগ্রহণের সময় ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে তা পোলিং বুথেই রাখতে হবে। আর ভোট গ্রহণের পর খালি ব্যালট বাক্স যদি থাকে তা নিরাপদে রাখতে হবে।

বিএনপি চেয়াপারসন রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অতিসত্ত্বর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে বিএন‌পি নেতা‌দের ম‌ধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হো‌সেন, ব্যা‌রিস্টার মওদুদ আহ‌মেদ, ত‌রিকুল ইসলাম, ব্যা‌রিস্টার জ‌মির উ‌দ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, ব্যা‌রিস্টার র‌ফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গ‌য়েশ্বর চন্দ্র রায়, আ‌মির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এনাম আহ‌মেদ চৌধুরী, আলতাফ হো‌সেন ‌চৌধুরী, হা‌ফিজ উ‌দ্দিন আহ‌মেদ, অ্যাড‌ভো‌কেট খন্দকার মাহবুব হো‌সেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাড‌ভো‌কেট জয়নাল আ‌বেদিন, আবদুল মান্নান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাড‌ভো‌কেট আহমদ আজম খান, ডা. এ জেড এম জা‌হিদ হো‌সেন, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়া‌জ্জেম হো‌সেন আলাল, খায়রুল ক‌বির খোকন প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

২০ দলীয় জোটের নেতা‌দের ম‌ধ্যে ক‌র্নেল (অব.) অলি আহ‌মেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরা‌হিম, আন্দা‌লিব রহমান পার্থ, শ‌ফিউল আলম প্রধ‌ান, ফ‌রিদুজ্জামান ফরহাদ, জে‌বেল রহমান গা‌নি গোলাম ‌মোর্ত্তজা, আজহারুল ইসলাম, মোস্তা‌ফিজুর রহমান ইরান, সাঈদ আহ‌মেদ, সাইফু‌দ্দিন আহ‌মেদ ম‌নি, মো. আবদুর র‌কিব প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

‌বি‌শিষ্ট ব্য‌ক্তি‌দের ম‌ধ্যে প্রবীন আইজী‌বি ব্যা‌রিস্টার র‌ফিক উল হক, প্রাক্তন গভর্নর সা‌লেহ উ‌দ্দিন আহ‌মেদ, সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, জা‌বির প্রাক্তন উপাচার্য ড. মোস্তা‌হিদুর রহমান, দিলারা চৌধুরী প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

এওয়ান নিউজ পাঠকদের জন্য পুরো বক্তব্য তুলে ধরা হলো:

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও এর কাঠামো সম্পর্কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র প্রস্তাবনা: খালেদা জিয়া
স্থান: হোটেল ওয়েস্টিন, গুলশান-২, ঢাকা। ১৯ নভেম্বর ২০১৬
উপস্থিত সুধী মন্ডলী, প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

আস্সালামু আলাইকুম।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। আর তাই নির্বাচনকে বলা হয় গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বাহন, অপরিহার্য অনুষঙ্গ।
এমন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেননিঃসন্দেহে তাঁদের নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা এবং দায়িত্ব পালনের দৃঢ়তা প্রশ্নাতীত হতে হবে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং ভোটার শুধু নয় সারা বিশ্ব যে কোন দেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেÑপ্রশংসা কিংবা তিরস্কার করে।

দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে বিশেষ করে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে এবং গত কয়েক বছরের অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণকে হতাশ, আস্থাহীন এবং ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বৃহত্তর জাতীয় ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এহেন পরিস্থিতি আর চলতে দেয়া যায় না। জনগণ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন চান। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, সক্ষমতা এবং দায়িত্বপালনে ন্যায়পরায়ন দৃঢ়তা দেখতে চায়।

তাঁরা চায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এমন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সেখানে তাঁরা নির্বিঘেœ ভোটের মাধ্যমে তাঁদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং তাঁদের দেয়া রায় যেন কৌশলে কেউ বদলে দিতে না পারে।

বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়, সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন বাঞ্ছনীয়।

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে (২০১৭) বর্তমান বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী, দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার কোন বিকল্প নেই।
জনগণের ন্যায্য ও সাংবিধানিক আকাংখা পূরণের লক্ষ্যে বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে কতিপয় সুপারিশ উপস্থাপন করছে;
১. সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের (ঈড়হংবহংঁং) ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
২. প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিরূপণের জন্য সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং অথবা, স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের মহাসচিব অথবা সাধারণ সম্পাদক কিংবা মনোনীত প্রতিনিধির সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করবেন।
তবে দেশে যেহেতু এই মুহূর্তে ২(দুই) টি প্রধান রাজনৈতিক জোট (বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট) বিদ্যমান সেহেতু এই দুই জোটের পক্ষ থেকে একজন করে মূল প্রতিনিধি এবং তাঁকে সহায়তাদানকারী আরও দুইজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি নাগরিক সমাজের মধ্য হতে সৎ, যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ প্রতিনিধিদেরকেও আলোচনা000-1য় যুক্ত করতে পারেন।
২.১ নিবন্ধনকৃত সকল রাজনৈতিক দল, এবং অথবা, স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের (ঈড়হংবহংঁং) ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের যোগ্যতা, অযোগ্যতা ও মনোনয়নের প্রশ্নে ঐকমত্য (ঈড়হংবহংঁং) প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দল এবং অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দল নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।

২.২ নিবন্ধনকৃত সকল রাজনৈতিক দল এবং অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের সাথে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুষ্ঠিত বৈঠকের সম্মত কার্যবিবরণী এবং বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে  গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ, সকল রাজনৈতিক দলের উপস্থিত প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরযুক্ত দলিলরূপে, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবে।

৩. বাছাই কমিটি গঠন;
মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ এবং অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন।

৩.১ বাছাই কমিটি গঠন কাঠামো:
রাষ্ট্রপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, এবং নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ৫(পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন। বাছাই কমিটি গঠনের কাঠামো নিরূপ হবে:

বাছাই কমিটির আহবায়ক :
৩.১.১ বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে) যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে (ঙভভরপব ড়ভ ঢ়ৎড়ভরঃ) অধিষ্ঠিত নহেন না ছিলেন না।

বাছাই কমিটির সদস্য :
৩.১.২ আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে (ঙভভরপব ড়ভ ঢ়ৎড়ভরঃ) অধিষ্ঠিত নহেন বা ছিলেন না।
৩.১.৩ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সৎ এবং দল নিরপেক্ষ একজন সচিব যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে (ঙভভরপব ড়ভ ঢ়ৎড়ভরঃ) অধিষ্ঠিত নহেন বা ছিলেন না। তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কোন কর্মকর্তা বাছাই কমিটির সদস্য হতে পারবেন না।
৩.১.৪ অবসরপ্রাপ্ত সৎ এবং দল নিরপেক্ষ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে সুখ্যাত, এবং যিনি অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে (ঙভভরপব ড়ভ ঢ়ৎড়ভরঃ) অধিষ্ঠিত নহেন বা ছিলেন না অথবা দল নিরপেক্ষ সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন বিশিষ্ট নাগরিক।

৩.১.৫ সর্বজন শ্রদ্ধেয় দল নিরপেক্ষ একজন সৎ, দক্ষ ও যোগ্য জ্যেষ্ঠ নারী।

৪. নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল এবং অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল, অনুচ্ছেদ ২ এ বর্ণিত পদ্ধতিতে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক বৈঠকে বাছাই কমিটির সদস্য নিয়োগের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে ২(দুই) জনের নাম ও পরিচয়সহ সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে পেশ করবে।

৫. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা :

৫.১ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর যোগ্যতা :
সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ, মেধাবী, দক্ষ, সাহসী, প্রাজ্ঞ এবং নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব ও কর্ম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং সকল বিচারে দল-নিরপেক্ষ এবং বিতর্কিত নন এমন একজন ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে অধিষ্টিত ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, অথবা বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব যিনি অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে নিয়োজিত নহেন বা ছিলেন না, অথবা একজন বিশিষ্ট নাগরিক-প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন।

তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রীপরিষদ সচিব এবং বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কোন কর্মকর্তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে পদায়নের যোগ্য হবেন না; এবং বাংলাদেশ সরকারের সচিব যিনি অবসরগ্রহণের বা পদত্যাগের বা অপসারণের পর, কিংবা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ সমাপ্তি বা চুক্তি বাতিলের পর তিন বছর সময়কাল অতিবাহিত করেননি, তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে পদায়নের যোগ্য হবেন না।

৫.২ নির্বাচন কমিশনার এর যোগ্যতা:

৫.২.১. একজন নারীসহ সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ, মেধাবী, দক্ষ, প্রাজ্ঞ, সাহসী, নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব ও কর্ম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও সকল বিচারে দলনিরপেক্ষ এবং বিতর্কিত নহেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে হতে চারজন নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হতে পারবেন।

৫.২.২ ন্যূনপক্ষে জেলা জজের মর্যাদা সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, ন্যূনপক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, ন্যূনপক্ষে যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষাবিদ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য হতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।

তবে যিনি প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের, বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের কোন চাকরি থেকে অবসর গ্রহন বা পদত্যাগের বা অপসারণের পর কিংবা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ সমাপ্তি বা চুক্তি বাতিলের পর, তিন বছর সময়কাল অতিবাহিত করেননি তিনি নির্বাচন কমিশনার পদে পদায়নের যোগ্য হবেন না।

৫.২.৩. নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল এবং অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদে থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল, অনুচ্ছেদ ২ এ বর্ণিত পদ্ধতিতে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য, প্রতি পদের বিপরীতে ২(দুই) জনের নাম ও পরিচয়সহ সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে পেশ করবে।

৬. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসমূহ হতে প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটির নিকট প্রেরণ করবেন। বাছাই কমিটি এই সকল নাম হতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য ২(দুই) জন এবং নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮(আট) জন এইভাবে মোট ১০(দশ) জনের নাম বাছাই করবে।
এই প্রক্রিয়ায় বাছাই কমিটি প্রথম প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ করবে এবং তাদের মধ্যে যেসব ব্যক্তির নাম সব রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনায় অভিন্ন (ঈড়সসড়হ) রয়েছে তাঁদের নাম রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণের জন্য চূড়ান্ত করবে।

এইভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য ২(দুই) জন এবং নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮(আট) জন অভিন্ন পাওয়া না গেলে বাছাই কমিটি নিবন্ধনকৃত সকল রাজনৈতিক দল এবং অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের সাথে প্রয়োজন বারবার আলোচনা করবে। এই প্রক্রিয়ায় কোন রাজনৈতিক দল নতুন নাম প্রস্তাব করতে চাইলে বাছাই কমিটি ঐকমত্য পৌছার স্বার্থে প্রস্তাবিত নতুন নাম গ্রহণ করবে।

এইভাবে বাছাই কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনাক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাকি নাম কিংবা নামসমূহ নির্ধারণ করবে এবং রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য প্রেরণ করবে।

৭. রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য বাছাইকৃত ২ (দুই) জনের মধ্যে হতে ১(এক) জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচন কমিশনারের জন্য বাছাইকৃত ৮(আট) জনের মধ্য হতে ৪(চার) জনকে নির্বাচন কমিশনার পদে চূড়ান্ত করবেন। রাষ্ট্রপতি চূড়ান্তকৃত এইসকল ব্যক্তিদের সম্মতি গ্রহণ এবং তাঁদের জীবন বৃত্তান্ত ও সম্পদের বিবরণী জনসমক্ষে প্রকাশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাঁদের নিয়োগ প্রদান করবেন।

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক চূড়ান্তকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেহ সম্মত না হলে, কিংবা অন্য কোন অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে, বাছাই কমিটি কর্তৃক মনোনীত অবশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্য হতে রাষ্ট্রপতি একই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রদান করবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য বাছাইকৃত ২(দুই) জনই অসম্মতি প্রকাশ করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নের জন্য একই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে নতুন করে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। একইভাবে কমিশনার পদে মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে অসম্মত ব্যক্তির সংখ্যা যদি এমন হয় যে, কমিশনার পদে বিবেচনার জন্য বাছাই কমিটি কর্তৃক মনোনীত আর কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট নেই, তাহলে কমিশনার পদে মনোনয়নের জন্য একই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে নতুন করে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে করণীয়

নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ এবং জচঙ সহ অন্যান্য নির্বাচনী বিধি-বিধান সময় উপযোগী ও যৌক্তিকিকরনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

 

১. হিসেবে অন্যান্য বাহিনীর সাথে  পুনঃস্থাপন করতে হবে।
(উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সনের সংশোধনীতে কে এই সংজ্ঞা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিলে।)

২. ২৮(৪)(ফ) এর পর নতুন করে (ব) সন্নিবেশ করতে হবে;

(ভোট গ্রহণের আগে বিভিন্ন বুথে খালি বাক্স সরবরাহের পর অবশিষ্ট শূন্য ব্যালট বাক্স সমূহ, যদি থাকে, এমন নিরাপদস্থানে রাখতে হবে যাতে তা প্রার্থী অথবা নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের কাছে দৃশমান থাকে)

৩. জচঙ এর অৎঃরপষব ২৮(৫) এর শেষাংশ এইভাবে সংশোধন করতে হবে

(ভোট চলাকালে ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ব্যালট ভর্তি বাক্স বা বাক্সগুলো সংশ্লিষ্ট বুথেই রাখতে হবে যাতে তা সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নির্বাচনী এজেন্ট এবং অথবা পোলিং এজেন্টদের নিকট দৃশ্যমান থাকে)

৪. জচঙ এর অৎঃরপষব ৩৬(৪)(ধ) তে ’ঙঢ়বহ’ শব্দের পর “ড়হষু’ শব্দ যোগ করতে হবে
(ভোট শেষে ব্যালট গননার জন্য কেবলমাত্র ভোটগ্রহনে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্স সমূহ খোলা হবে)

তাঁর স্বাক্ষরিত ফলাফল শীট ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টকে হস্তান্তর না করে ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না)
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ :

১. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে।

১.১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদের নিজস্ব সচিবালয় থাকবে বলে উল্লেখ আছে। একইভাবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জন্যও নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে।

২. নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

২.১ নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনকে এর নিজস্ব সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সকল পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটি, নির্বাচন কার্যে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

২.২ নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনকে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি কমিটি গঠনকরত: নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে অতিসত্বর প্রত্যাহার করতে হবে এবং প্রত্যাহারকৃত কর্মকর্তাদের যে কোন ধরনের নির্বাচনী দায়িত্বপালন হতে বিরত রাখতে হবে।
২.৩ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও তাদের মাঠ পর্যায়ের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (জচঙ) ও অন্যান্য নির্বাচনী বিধি বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করত; নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে হবে।

৩. প্রেষণে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকাশ্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

৩.১ নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশন একটি কমিটি গঠন করে বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটি, নির্বাচন কার্যে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্য হতে প্রকাশ্য দলীয় আনুগত্য পোষণকারীদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করবে।
ঐ সকল চিহ্নিত কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতে অন্য যে কোন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত রাখতে হবে।

৪. রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ।

৪.১ সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে বিগত ৫(পাঁচ) বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ঐ জেলায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে পদায়ন করা যাবে না।
৪.২ একইভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় প্রত্যেক উপজেলা এবং থানায় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোপূর্বে কোন সময় যে কোন পদমর্যাদায় ঐ উপজেলা বা থানায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কোন কর্মকর্তাদের একই উপজেলায় বা থানায় নিয়োগ প্রদান করা যাবে না।

৫. নির্বাচনের সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে।

৫.১ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার প্রাক্কালে নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যেমন স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে। সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।

৫.২ নির্বাচনকালীন সময়ে (নির্বাচন তফিসল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত) নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ( যেমন বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশ ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, উপ পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারম সহকারী পুলিশ সুপার, পুলিশ ইন্সপেক্টর, থানার ওসি, সাব ইন্সপেক্টর, এ এস আই, র‌্যাবের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, আনসার, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা প্রমুখ) বদলি ও পদায়ন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত থাকবে।

৬. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
৬.১ নবগঠিত নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলসমূহ কর্তৃক উত্থাপিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারন সংক্রান্ত অভিযোগ অথবা মামলা শুনানীর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস করবে।
৭. নির্বাচনকালীন সময়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭.১ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সময়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান করে সকল নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ ভোট কেন্দ্রে ও বিশেষ বিশেষ স্থানে মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এই ব্যবস্থা ভোট গ্রহণ দিবসের ৭ (সাত) দিন পূর্ব হতে নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশনা পর্যন্ত স্থায়ী হবে।

৮. ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ করতে হবে।
৮.১ প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ ভোটার হতে অভ্যন্ত আগ্রহী। বর্তমানে তারা ভোটার হতে পারছেন না। প্রবাসী বাংলাদেশীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান বিবেচনায় প্রবাসীদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বহু গণতান্ত্রিক দেশে প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার সুযোগ আছে।

৮.২ ভোটার হওয়ার যোগ্য সকল নাগরিকের নাম ভোটার তালিকায় নিবন্ধীকরণ করতে হবে। সকল রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী, যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য, কিন্তু বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলায় বর্তমানে কারান্তরীন রয়েছে, তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ নিশ্চিত করতে হবে।

৮.৩ ছবিসহ যে ভোটার তালিকা ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিকট থাকে, ছবিসহ অভিন্ন ভোটার তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা নির্বাচনী এজেন্টকে প্রার্থিতা বাছাই এর দিনে সরবরাহ করতে হবে।
৮.৪ ছবিসহ ভোটার তালিকায় অনেক ক্ষেত্রে ভোটারের ছবি অপরিচ্ছন্ন ও অস্পষ্ট রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এই ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় অভিযোগসমূহ আমলে নিয়ে সঠিকতা যাচাইপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮.৫ ভোটার তালিকায় যাদের নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে, কেবল মাত্র ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির ভিত্তিতে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তারা ভোট দিতে পারবেন।
৮.৬ প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোট গণনার সময় ঐ কেন্দ্রের প্রত্যেক বুথে প্রার্থী কর্তৃক নিযুক্ত পোলিং এজেন্টকে অবশ্যই উপস্থিত রাখতে হবে।
৮.৭ ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ভোট গণনা শুরু করতে হবে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া এবং ভোট গণনা শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে কোন বিরতি দেয়া যাবে না।
৯. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯.১ বর্তমানে কর্মরত নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে নির্বাচনী বিধি-বিধান, ভোটার নিবন্ধিকরন বিধি-বিধান, নাগরিক অধিকার, আচরণ, নিরাপত্তা, জনসংযোগ, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ভোটার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশ করতে হবে।
৯.২. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, লোকবল বৃদ্ধি, দক্ষতা ও কর্ম পরিধি বৃদ্ধি ইত্যাদি।
৯.৩. নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের কর্মী এবং সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।
৯.৪. রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ প্রদানে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলসমূহকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দানের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করবে। রাজনৈতিক দলসমূহ কর্তৃক আয়োজিত এ প্রশিক্ষণে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নির্বাচন কমিশন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৯.৫ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ব্যাপক ভোটার প্রশিক্ষণ প্রচারণা (ঠড়ঃবৎ ঊফঁপধঃরড়হ ঈধসঢ়ধরমহ) কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এই কার্যক্রমে রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম এবং বেসরকারী সংস্থা সমূহের সহায়তা নিতে হবে।

১০. নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।

১০.১. নির্বাচনকালীন সময়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নিজস্ব কর্মকর্তাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (জচঙ) এর ৮৯(এ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

১১. নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধান ভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১.১. নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার অব্যবহিত পর থেকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত নির্বাচনী আইন, আচরণবিধি ও অন্যান্য নির্বাচনী বিধি-বিধান ভঙ্গের অভিযোগপত্র এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে দাখিলকৃত অভিযোগপত্র গ্রহণ ও লিখিত প্রাপ্তি স্বীকার করতে হবে, তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর প্রতিবিধান করতে হবে এবং গৃহীত কার্যক্রম প্রত্যহ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

১২. জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক (ঊষবপঃরড়হ ঙনংবৎাবৎ) নিয়োগ।

১২.১ নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার ন্যূনপক্ষে ৩(তিন) বছর পূর্বে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিবন্ধিত হতে হবে।

১২.২ কোন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী কিংবা রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কোন ব্যক্তি বা তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন কোন পর্যবেক্ষক সংস্থা কিংবা সংস্থার কোন ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবেন না।
১২.৩. নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার ন্যূনপক্ষে ৩০(ত্রিশ) দিন আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা বা ব্যক্তিকে তালিকাভূক্ত করবে।
১২.৪. নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার ৭(সাত) দিনের মধ্যে, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তালিকাভূক্ত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম ও পরিচয় এবং তাঁদের মনোনীত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
১৩. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ:

১৩.১ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ন্যূনপক্ষে ০৭ (সাত) দিন পূর্বে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব।

একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যতিরেকে এ সকল সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে যথাসময়ে জাতির সমীপে উপস্থাপন করব।