Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খােলাবাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ০৬  ডিসেম্বর ২০১৮ঃ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে রীতিমত বোমা ফাটালেন সাবেক এই সামরিক শাসক। তিনি অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে চিকিৎসা করতে এবং বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তা স্পষ্ট না করেই আলোচিত এই রাজনীতিবিদ বলেছেন, তাকে ‘দমিয়ে রাখা’ যাবে না।

নির্বাচন সামনে রেখে পার্টির মনোনয়নপ্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না এরশাদকে। তার অসুস্থতার বিষয়ে জাতীয় পার্টির এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে অনেকটা হঠাৎ করেই বনানীতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসে গাড়ি থেকে না নেমে নেতা-কর্মীদের সামনে কয়েক মিনিট কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। সেখানেই তার বিস্ফোরক বক্তব্য আসে।

এরশাদ বলেন, ‘আজ বলতে এসেছি, আমাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না, এগিয়ে যাব৷ আমার বয়স হয়েছে, চিকিৎসা করতে দেবে না; বাইরে যেতে দেবে না। মৃত্যুকে ভয় করি না।’

নেতা-কর্মীদের অভয় দিয়ে এরশাদ বলেন, ‘তোমাদের কোনো ভয় নেই। জাপা তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। জাপা চিরদিন নির্বাচন করেছে, এবারো করবে।’

২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।

এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘অসুস্থ’ এরশাদের সিএমএইচে ভর্তির খবর এলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

এ বিষয়ে গুঞ্জনের মধ্যেই জাতীয় পার্টির জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মাসের শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘রাজনৈতিক‘ নয়; তিনি ‘সত্যিই’ অসুস্থ। তাকে দুই-এক দিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু জাতীয় পার্টির তখনকার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার তখন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘এমন কিছু নয়’। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশ কয়েকজন নেতা ‘মোটা টাকায়’ মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ তোলেন এরশাদ ও হাওলাদারের বিরুদ্ধে। হাওলাদার সে সময় তা অস্বীকার করেন।

ঋণ খেলাপের অভিযোগে পটুয়াখালী-১ আসনে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে গত সোমবার অনেকটা আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। এরশাদের ‘সন্তানতুল্য’ হওলাদারকে সরিয়ে মহাসচিব করা হয় পার্টিতে ‘সরকারঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নতুন মহাসচিব রাঙ্গাঁ বলেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এরশাদ ‘ভয়ে থাকেন’। এ কারণে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।

‘ঘুমের ডিস্টার্ব হলেও তিনি সিএমএইচে যান। বাসায় একা থাকেন বলে তার একলা লাগে, ভয় করে। তাছাড়া ইনফেকশনের ভয়ও আছে।’

নতুন মহাসচিব দাবি করেন, এরশাদ এখন ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট’ থাকলেও চিকিৎসার জন্য তার দেশের বাইরে যাওয়া জরুরি। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শেষ না করে তিনি দেশের বাইরে যেতে চান না। মহাজোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হলে ১০ ডিসেম্বরের পর হয়ত এরশাদ বিদেশে যেতে পারেন।

বৃহস্পতিবার বনানীর কার্যালয়ের সামনে এসে নতুন মহাসচিবকে নিয়েও কথা বলেন এরশাদ।

তিনি বলেন, ‘পুরনো মহাসচিবকে ভালোবাসতাম। নতুন মহাসচিবকে তোমরা ভালোবেসো৷ সে নতুন, তাকে সাহায্য করো।’

৮৮ বছর বয়সী এরশাদ বলেন, ‘বেঁচে আছি, বেঁচে থাকব। ২৭ বছর ধরে রাস্তায় রস্তায় ঘুরেছি, পার্টি ছাড়ি নাই৷ সব নির্ভর করে তোমাদের উপর। কেউ পার্টি ছেড়ে যেও না, আমাকে প্রতিশ্রুতি দাও।’

পার্টি অফিসের সামনে এই ঝটিকা সফর শেষে বিদায় নেওয়ার সময় এরশাদ তার কর্মীদের বলেন, ‘আমার ব্লাড শর্টেজ আছে, একটু বাসায় যাচ্ছি খেতে।’

এ সময় কার্যালয়ের সামনে কর্মীরা স্লোগান ধরেন- ‘এরশাদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’।