Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, সোমবার , ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ঃ দেশে পঞ্চমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে কৃষি শুমারি। ৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই শুমারি।

সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে ‘কৃষি শুমারি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি-২০১৮’ প্রকল্পের দ্বিতীয় জোনাল অপারেশন পরিচালনার লক্ষ্যে বিভাগীয় ও জেলা শুমারি সমন্বয়কারীদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন হয়।

প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) বিকাশ কিশোর দাস ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুয়াল হোসেন কৃষি শুমারির জনবল সঙ্কটের কথা জানান।

কৃষি শুমারির দ্বিতীয় জোনাল অপারেশনে সারা দেশের ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬টি এলাকায় গণনা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে অংশ নেবেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৫ জন গণনাকারী। অর্থাৎ প্রতিটি এলাকার জন্য একজনেরও কম গণনাকারী গণনা কাজ সম্পন্ন করবেন।

এ ছাড়াও ২২ হাজার ৩৭৩ জন সুপারভাইজার, ২১৯ জন সহকারি জেলা সমন্বয়কারী, ৭৮ জন জেলা সমন্বয়কারী এবং ১০ জন বিভাগী সমন্বয়কারী কাজ করবেন এই প্রকল্পের আওতায়।

জনবল সঙ্কটের কারণে কৃষি শুমারির কাজ কঠিন হবে বলে মনে করেন আবুয়াল হোসেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জনবলের সংকট রয়েছে। যেসব জেলায় জনবল সংকট রয়েছে, সেসব জেলায় তাদের কাজ অনেক বেশি কঠিন হবে।’

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম ফর দ্য সেনসাস অব অ্যাগ্রিকালচার ২০২০’ গাইডলাইন মোতাবেক এই কৃষি শুমারি পরিচালিত হবে।

প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জাফর আহাম্মদ খান জানান, কৃষি শুমারিতে শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসহ পোল্ট্রি সাব-সেক্টরে ও বড় পরিসরে পর্যায়ক্রমিক পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা; কৃষিখাতের কাঠামোগত পরিবর্তন সংক্রান্ত উপাত্ত প্রদান করা; ভূমি ব্যবহার, জমি চাষের প্রকার ও ফসল বৈচিত্র্যের পরিসংখ্যান প্রদান করা; প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি উপখাতের উপাত্ত সংগ্রহ করা; সেচ, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে উপাত্ত প্রদান করা; মৎস্য সাব-সেক্টরের মৌলিক উপাত্ত প্রদান করা; ক্ষুদ্র প্রশাসনিক এলাকার কৃষিবিষয়ক মৌলিক তথ্য সরবরাহ করা এবং কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন জরিপের জন্য সেম্পল ফ্রেম সরবরাহ করা হবে।

কৃষি শুমারির দ্বিতীয় জোনাল অপারেশনের অংশ হিসেবে বিভাগীয় সমন্বয়কারী/ জেলা সমন্বয়কারীর প্রশিক্ষণ ৪ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি, সহকারী জেলা সমন্বয়কারী/ জোনাল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ৭ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি, মাঠ পযায়ের কার্যক্রম ৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি, জেলা সমন্বয়কারী ২৫ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি মালামাল যাচাই করে গ্রহণ করবেন এবং ২৭ থেকে২৮ ফেব্রুয়ারি  বিভাগীয় সমন্বয়কারী/ জেলা সমন্বয়কারী প্রকল্প অফিসে মালামাল জমা দেয়া।

এ সময় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুয়াল হোসেন বলেন, ‘দেশব্যাপী একটি শুমারি পরিচালনা করা কঠিন কাজ। কৃষি শুমারি, ১০ বছর পর পর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর কৃষির ওপর নির্ভরশীল নয়। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনও বাড়ছে। আমাদের চাহিদার সমান আমরা উৎপাদন করছি। এটা আমাদের ব্যাপক সফলতা। কৃষকদের আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ। এবার যে শুমারি হবে, সেখানে আমরা প্রকৃত চিত্র পাব, আগের তুলনায় আমাদের কোন খাতে অগ্রগতি হয়েছে। শুধু কৃষির উৎপাদন নয়, এর সঙ্গে যন্ত্রপাতি, সেচসহ সার্বিক বিষয়ে আমরা প্রকৃত চিত্র পাব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি জানতে পারি, জেলা/ উপজেলা পর্যায়ে কী সম্পদ আছে, কী ঘাটতি আছে – এসবের সঠিক তথ্য থাকে তাহলে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে সহজ হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) বিকাশ কিশোর দাস বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রকেট গতিতে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কৃষির ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম রয়েছে। অন্য সেক্টরের সঙ্গে কৃষি কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এর বহুবিধ কারণ রয়েছে।’

‘দীর্ঘ সময় নিয়ে কৃষক চাষ করে, কিন্তু লাভ নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ দেশে দারিদ্রতা কখনই পিছু ছাড়েনি। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। কৃষি নিয়ে আমরা যতই গর্ব করি, এখানে সেকেন্ড থটের বিষয় রয়েছে। এ জন্য সঠিক তথ্যের প্রয়োজন। সেই কাজটিই করতে যাচ্ছে।’ এ সময় কৃষি শুমারিতে তিনি জনবল সঙ্কটের কথাও জানান।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহারিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. কৃষ্ণা গায়েন বলেন, ‘আমি আশা করব, প্রথম জোনাল অপারেশনে ছিলেন, আপনারা জানেন আপনাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী। প্রকৃত চ্যাঞ্জ হচ্ছে, সেজন্য আপনাদের চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। এই জোনাল অপারেশনে যে দিকনির্দেশনা আছে, সেটা আপনারা দেখে নেবেন।’

এ সময় তিনি বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, ‘আগামী ১০ বছরের জন্য কৃষিক্ষেত্রে যে তথ্য প্রয়োজন হবে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে যে দেশগুলো থাকবে, বাংলাদেশ প্রথম থাকবে।’

কৃষি শুমারি স্বাধীনতার আগে তথা পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬০ সালে প্রথম নমুনা আকারে অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৭ সালে প্রথম কৃষি শুমারি হয়। এরপর ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ সালের কৃষি শুমারিতে দুই ভাগে পৌর এলাকাসহ সব কৃষি খানা গণনার আওয়াতায় আনা হয়। ১৯৯৬ সালের কৃষি শুমারিতে সব শহর ও পল্লী এলাকার কৃষি খানাকে পৃথক প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আওতায় আনার পরিকল্পনা থাকলেও শুধু পল্লী এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সব শহর ও পল্লী এলখার সব কৃষি খানা ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।