খােলাবাজার ২৪, বুধবার, ২২ মে ২০১৯ঃ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম, এমপি বলেছেন, ‘এফ আর টাওয়ারের অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখবো। যারা অবসরে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য প্রক্রিয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা এখনো কর্মরত আছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়স্থ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২৮/০৩/২০১৯ তারিখে বনানী মডেল টাউনের এফ আর টাওয়ারে অগ্নিদূর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের তদন্তের বিষয় ছিলো এফ আর টাওয়ার নির্মাণে কোনো অনিয়ম, ব্যত্যয় হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে তা কি ধরণের হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্তরে কী কী অনিয়ম হয়েছে। এ অনিয়মের সাথে মালিক পক্ষ, ডেভেলপার পক্ষ এবং রাজউকে তৎকালীন কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা ছিলেন তাদের সম্পৃক্ততা কিভাবে ছিলো। কী কী নিয়মের লঙ্ঘন হয়েছে’।
মন্ত্রী বিফ্রিংকালীন বলেন, ‘১৯৯০ সালে এফ আর টাওয়ারের ১৫ তলা পযন্ত ভবনের অনুমোদন সঙ্গত ছিলো। পরবর্তীতে ১৫ তলা থেকে ১৮ তলা পযন্ত নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়া যথাযথ ছিলো, কিন্তু অনুমোদকালীন বিদ্যমান বিধির আওতায় অনুমোদন দেয়া হয়নি, আবেদনকালীন বিদ্যমান আইনের আওতায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আইনগত বিষয়ের ব্যত্যয় ঘটেছে। ১৮ তলার উদ্ধে ভবনের সকল তলা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এফ আর টাওয়ার কর্তৃপক্ষ একটি প্ল্যানের অনুমোদিত কপি দেখানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু রাজউকের রেকর্ডে কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব নেই। রাজউকের কাছে সংরক্ষিত নথিতে মূল প্ল্যানেরও কোনো কপি নেই। রাজউকের কোনো অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগের মাধ্যমে বিল্ডিং এর মালিক ও ডেভেলপার বাইরের একটি প্ল্যান তৈরী করতে পারে, আইনগতভাবে এই প্ল্যানের কোনো বৈধতা নেই। পরবর্তীতে অসাধু যোগসাজশে ঋণ গ্রহণের অনুমতি প্রদানের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদেরও তদন্তে দায়ী করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পরিদর্শক পযন্ত, রেজিস্ট্রার ব্যবস্থাপনায় যারা ছিলেন, যারা ঋণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন তাদের সকলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ঘটনায় জড়িত হিসেবে রিপোর্টে এসেছে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তি হিসেবে আমাদের কাছে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণাদি রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তে অনেকগুলো অনিয়ম সনাক্ত হয়েছে, সবমিলে আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি তাদের অভিযোগের থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ নেই।
মন্ত্রী বলেন, ‘এফ আর টাওয়ারের অবৈধভাবে নির্মিত অংশ ভেঙ্গে ফেলার জন্য আইনগত প্রক্রিয়ায় আমরা কাজ শুরু করেছি। এক্ষেত্রে আমরা আইনকে অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে অবৈধভাবে কাজে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যাতে জানতে পারে তদন্তের নামে লুকোচুরি করা হয়না। সত্যকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা রাজউক চেপে রাখে নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেটা শুধু মুখে না, কথায় কথায় না’।
রাজউক থেকে বহুতল ভবনের অনিয়ম চিহ্নিত করার জন্য ২৪টি পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকল বিল্ডিং পরিদর্শন করবো। প্রাথমিকভাবে বহুতল ভবন পরিদর্শন করা হয়েছে। বহুতল ভবনেরর ভেতরে এ পযন্ত রাজউক অনেুমদিত নকশা আছে এমন ভবন পাওয়া গেছে ১১৩৬টি, রাজউক ব্যতীত অন্যান্য সংস্থা অনুমোদিত নকশা আছে এমন ভবন ২০৭টি, ভবন মালিকগণ রাজউক অনুমোদিত নকশা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে এমন ভবনের সংখ্যা ৪৩১টি,এবং সরকারি ভবনের নকশা প্রদর্শন করা হয়েনি এমন ভবন ৪৪টি। নিদিষ্ট সময়ে নকশা প্রদর্শনে ব্যর্থ ভবনের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যত্যয়কৃত ভবনের অনিয়মকৃত অংশ ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমরা নির্দেশ দেবো। ভেঙ্গে না ফেললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবিদন আলোর মুখ দেখিয়েছি। রাজউকের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে তৃণমূল পযন্ত সম্পৃক্তদের নাম উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। কাজেই আপনারা আস্বস্থ থাকতে পারেন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যারাই অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনভাবেই কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই’।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিদর্শন একটি চলমান প্রক্রিয়া। পযায়ক্রমে সকল ভবন পরিদর্শন করা হবে’।
বিফ্রিং অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসিরসহ তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।