খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫: পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার ঘটনায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানসহ তিনজনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক সাঈদ আহমেদের আদালতে ঐশীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় আগামী ৪ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ যুক্তি উপস্থাপনে বলেন, ঐশী রহমান সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ঐশী বাবা-মাকে খুন করেননি। আর তার বাবা-মা খুন হওয়ার সময় ঐশী নাবালিকা ছিলেন। মামলায় তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাবালিকা দেখানো হয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে এই মামলায় ঐশী রহমান খালাস পাওয়ার যোগ্য।
এ মামলায় ৪৯ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৯ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ মামলায় কারাগারে থাকা ঐশী ও আসাদুজ্জামান জনিকে এবং জামিনে থাকা মিজানুর রহমান রনিকে আদালতে হাজির হয়।
গত ১৩ অক্টোবর ঐশী আত্মপক্ষ সমর্থন করে তার বক্তব্য লিখিতভাবে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। আইনজীবী মাহবুবুর রহমান রানা সাংবাদিকদের বলেন, ঐশী লিখিত বক্তব্যে তার বাবা-মাকে হত্যার কথা অস্বীকার করেন। ঐশীর দাবি, ঘটনার সময় তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। এর সমর্থনে একটি সনদপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে।পুলিশ নির্যাতন করে তার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। । ঐশীর বাবা-মা যখন খুন হন তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। তার বাবা-মাকে কে বা কারা খুন করেন তাও তিনি জানেন না।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মা-বাবা খুন হওয়ার পর পালিয়ে যায় ঐশী রহমান।
এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিহুর রহমান রুবেল পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। সেদিনই ঐশী রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। একই বছরের ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন ঐশী।
এ মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর একই ট্রাইবুন্যাল আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। তার আগে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ গত ৬ মে চার্জ গঠন করেছিলেন। আদালত চার্জ গঠনের পর মামলাটিতে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় ঐশী রহমানসহ (১৯) চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।চার্জশিটের অপর আসামিরা হলেন- ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি (২৭) ও মিজানুর রহমান রনি (২৫)।এছাড়া অভিযুক্ত গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমির বিরুদ্ধে আলাদা চার্জশিট দেওয়া হয়। চার্জশিটে গৃহকর্মী সুমির বিরুদ্ধে তার সামনে কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশানোর পরও তা মাহফুজ ও স্বপ্না রহমানকে না জানানো কিংবা ঘটনার সময় চিৎকার না দেওয়া এবং লাশ গোপন করতে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।
সুমি অপ্রাপ্ত হওয়ায় তার বিচার চলছে শিশু আদালতে। ২০১৪ সালের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাকে জামিন দেন মহানগর (অতি: দায়রা জজ) শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের জুবেনাইল আদালতে (শিশু আদালতে) এর বিচার কাজ চলছে। ২০১৪ সালের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে তার মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পায় সুমি।