খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৫ : পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিজেদের সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা খতিয়ে দেখছে পুলিশ বিভাগ। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গঠন করা পাঁচ সদস্যের কমিটি গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
হোসেনি দালানে আশুরার অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় অদক্ষতা ও দায়িত্ব পালনে ঢিলেঢালা ভাব ছিল বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে যুক্ত সহযোগী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। তবে কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।
গত শুক্রবার গভীর রাতে ওই হামলায় এক কিশোর নিহত এবং প্রায় দেড় শ জন আহত হয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান বলেন, পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রথমে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। পরে আরও দুজনকে যুক্ত করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেড় হাজার সদস্যের উপস্থিতি আর ৩২টি সিসি ক্যামেরার আওতার মধ্যে থেকে ওই হামলা হওয়া এবং হামলাকারীরা নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সক্ষম হওয়ায় সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা সতর্ক ছিলেন, কিন্তু ব্যর্থতার দায়ভারও তাঁদের স্বীকার করতে হবে। ১৮ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক এক সভায় বোমা হামলার বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সভায় বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। তাঁরও প্রশ্ন, এত পুলিশ-র্যাবের মাঝে গ্রেনেড হামলা হলো কী করে? হামলাকারীই বা নির্বিঘেœ পালাল কীভাবে? এই ব্যর্থতা যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, তা মানতে দ্বিধা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হামলা সম্পর্কে আগাম কী ধরনের গোয়েন্দা তথ্য ছিল জানতে চাইলে মারুফ হাসান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না। আমাদের একটা আশঙ্কা ছিল। এই শঙ্কার কারণে রাতের বেলায় শোভাযাত্রা নিরুৎসাহিত করেছিলাম আমরা। কিন্তু যেহেতু ধর্মীয় বিষয়, তাই বেশি জোরাজোরি করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘সেদিন দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনও ছিল। সেখানেও আশঙ্কা ছিল। ফলে তখনো আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল। আবার আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালানের ওই এলাকাসহ লালবাগের উপকমিশনারের নেতৃত্বে আট-নয় শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। এ ছাড়া র্যাব, বিজিবি তো ছিলই। ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে হোসেনি দালানে আসা খণ্ড খণ্ড মিছিলের সঙ্গে তাদের মতো পোশাক পরেই হামলাকারীরা ঢুকেছে। তাই সেভাবে চিহ্নিত করাও কঠিন ছিল।’
হামলাকারীদের কাছে থাকা অস্ত্র-বিস্ফোরক শনাক্তের বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না থাকা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঐতিহ্য অনুযায়ী হোসেনি দালানে আগত মিছিলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ধাতব উপকরণ বহন করা হচ্ছিল। যার কারণে তাদের তল্লাশির জন্য আর্চওয়ে মোটেও কার্যকর হতো না। তবু মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির চেষ্টা চালানো হয়েছে।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে গাবতলীতে তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার একজনের কাছ থেকে বড় নাশকতার তথ্য পায় বলে জানিয়েছিল পুলিশ। এরপর পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না।’
হোসেনি দালানের ঘটনায় গত চার দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আর এএসআই খুনের ঘটনায় ঢাকা ও বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা ২৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, এর চেয়ে বড় জমায়েত হয়। নিরাপত্তাও দেওয়া হয়। আসলে শুক্রবার দিনভর দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের পর সবার মধ্যে একটু ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছিল।
আরেকজন কর্মকর্তা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্যই সতর্ক আছে। কিন্তু এখন জামায়াত-শিবির সব আন্ডারগ্রাউন্ডে (আত্মগোপনে) চলে গেছে। তারা এখন বড় টার্গেট নিচ্ছে। তাই সমস্যা কমছে না।
এএসআই ইব্রাহিম হত্যা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, তল্লাশির মুখে পড়ে তা হঠাৎ পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরি মরেছে। ওই হামলা তাদের পরিকল্পনায় ছিল না বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। তিনি বলেন, যে ছুরি মেরেছিল সেই এনামুল ওরফে কামাল পেশাদার অপরাধী। সে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার বাকিরাও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
তাহলে হোসেনি দালানে হামলাকারী কারা এই প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘দেশের যারা ভালো চায় না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারা। এসব সন্ত্রাসবাদ তো অবশ্যই। এদের সঙ্গে জঙ্গি কানেকশন কতখানি, তা আমরা তদন্ত করে দেখব। তবে কোনো রাজনৈতিক দলকে বেকায়দায় ফেলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো অপরাধীদের ধরা। অপরাধীদের ধরার পরে তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে তা তখন দেখা যাবে।’