Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

44খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৫: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এ দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর।
“টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমাদের সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নিতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবে।”
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আশা করছি- সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মতো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা একইভাবে সফল হব।”
বাংলাদেশকে ‘অমিত সম্ভাবনার দেশ’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “বিশ্বের বুকে একটি গতিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার মতো সব উপায় ও উপকরণ আমাদের রয়েছে।
“আমাদের লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিদের পেলে আমরা আনন্দিত হব।”
এসডিজি অর্জনে উন্নত দেশগুলোকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন। এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগী দেশ ও সংস্থাসমূহসহ ব্যক্তিখাতের অংশীদারিত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।”
এসময় তিনি সুষম ও পারস্পরিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে সার্ক, বিমসটেক এবং বিসিআইএম-এ বাংলাদেশের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সম্প্রতি আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সুবিধার্থে এ অঞ্চলের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দিয়েছি। চারটি দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে।”
তিনি জানান, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবেশ ও কারিগরি খাতে পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির চিত্র তুলে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৯১ সালে আমাদের দারিদ্রের হার ছিল ৫৬.৭ শতাংশ। আমরা সেই দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। অতি দারিদ্র্যের হার ৭.৯ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।
“এখন আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ সময়ে দারিদ্র্যের হার ১৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।”
গত ছয় বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার তিনগুণ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতার প্রবণতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।”
অভিবাসীদের কল্যাণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাপী অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের কল্যাণে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশসমূহকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে বৈশ্বিক পর্যায়ে যৌথ প্রচেষ্টা চালানো উচিত।”
এসময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিলের অর্থ ছাড়ের ‘ধীরগতির’ অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, “বৈশ্বিক পর্যায়ে কিছু অগ্রগতির পরও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিলগুলোর বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান শর্তসমূহ কঠিন ও জটিল।
“এ সংক্রান্ত তহবিলগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের চাহিদা ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা ও অর্থ ছাড়ের ধীরগতি অপসারণ করতে হবে।
“তবে আমরা শুধু সাহায্যের জন্য বসে নেই। নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করে মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি।”
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উদ্যোগে ২০১০ এর পর এবারই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম। এতে বাংলাদেশে অর্থায়নকারী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) মনোনীত প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহ-সভাপতি ওয়েনচাই ঝাং প্রমুখ।