খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৫ : সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিভিন্ন অবস্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি প্যারিস হামলার তদন্ত আরও বিস্তৃত করেছে ফ্রান্স।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় আইএস এর শক্ত ঘাঁটি রাকায় রোববার রাতে ফারাসি জঙ্গি বিমান বড় ধরনের অভিযান চালায়। গত শুক্রবার প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় ১২৯ জন নিহত হওয়ার পর আইএস এর অবস্থানে এটাই প্রথম আঘাত।
ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের ফরাসি বিমান ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে দশটি জেট ফাইটার এ অভিযানে অংশ নেয়। লক্ষ্যবস্তুতে ফেলা হয় ২০টি বোমা। যেসব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, তার মধ্যে আইএস এর একটি কমান্ড পোস্ট, অস্ত্র গুদাম ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে।
এই অভিযানে আইএস এর কতটা ক্ষতি হয়েছে বা কেউ হতাহত হয়েছে কি না সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আইএসবিরোধী অভিযানের নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই ফরাসি বিমানবাহিনী এই অভিযান চালায় বলে বিবিসির এক খবরে বলা হয়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্যারিসের পাঁচটি স্থানে একই সময়ে অ্যাসল্ট রাইফেল ও বোমা নিয়ে আত্মঘাতী ওই হামলায় নিহত হয়েছেন ১২৯ জন, আইএস যার দায় স্বীকার করেছে।
ওই হামলার ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ বিবেচনা করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ‘নির্দয়’ জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সিরিয়া ও ইরাকে আইএস এর অবস্থানে আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিমান হামলার শুরু থেকেই ফ্রান্স এই অভিযানে রয়েছে। এরই মধ্যে প্যারিসে হামলার ঘটনা ঘটায় আইএসবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার চাপ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে প্যারিসের হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত একজন শরণার্থী হিসেবে সিরিয়া থেকে আসায় ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে আলোচনা নতুন মোড় নিয়েছে।
বেলজিয়ামে বসবাসরত একটি ফরাসি পরিবারের তিন ভাইয়ের দিকে তদন্ত কর্মকর্তাদের নজর পড়েছে, তাদের একজনকে পুলিশ খুঁজছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
হামলার পর বেলজিয়ান নম্বর প্লেটধারী যে দুটি গাড়ি প্যারিসে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেগুলো ওই তিন ভাইয়ের দুজনের নামে ভাড়া করা হয়েছিল।
এদের মধ্যে একজন আত্মঘাতী হামলার সময় নিহত হয়েছেন, আরেকজন পরদিন আটক হয়েছেন বেলজিয়ান পুলিশের হাতে। হামলায় জড়িত সন্দেহে বেলজিয়ামে এ পর্যন্ত মোট সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার।
প্রসিকিউটররা বলছেন, ঘাতক একটি বহুজাতিক গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মধ্যপ্রাচ্য, বেলজিয়াম ও সম্ভবত জার্মানিতেও তার যোগাযোগ রয়েছে।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ হামলাকারী সাতজনের মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানিয়েছে, যাদের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে তিনজনকে। তবে হামলার দায় স্বীকার করে দেওয়া আইএসের বার্তায় হামলাকারীর সংখ্যা আটজন বলা হওয়ায় একজন পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার প্যারিসের পূর্বাঞ্চলীয় মুনথাইও শহরতলীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি সিয়াট গাড়িতে তিনটি কালাশনিকভ রাইফেল পাওয়া গেছে। ওই গাড়িটি হামলাকারীরা ব্যবহার করেছিল এবং তাতে করেই এক হামলাকারী পালিয়ে থাকতে পারে বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা।