Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

21খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৫ : নভেম্বরের প্যারিসের কয়েকটি স্থানে বর্বরোচিত হামলায় মারা গেছেন ১২৩ জন। মারাত্মক আহত ৮৯ জনসহ আহত হয়েছেন প্রায় ৩০০ জনের কাছাকাছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের ইতিহাসে একসঙ্গে এত লোক মারা যায়নি। ঘটনার পর প্যারিসসহ পুরো ফ্রান্সের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে চলছে পুলিশি চতুর্মুখী তৎপরতা। সন্ত্রাসী আক্রমণের প্রধান হোতা আবদেল হামিদ আবাউদকে ধরতে পুলিশের সঙ্গে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই সন্ত্রাসী নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে প্যারিসের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত।
প্যারিস পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ আকর্ষণীয় শহর। প্রতিদিন প্রায় ৭০ হাজার পর্যটক প্যারিসে আসেন। সন্ত্রাসী আক্রমণের পর থেকে তাদের আগমন অনেক কমে গেছে। হোটেলগুলোতে অতিথি নাই বললেই চলে। ছয়টি আবাসিক হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, এখনো প্রতিদিন বুকিং বাতিল হচ্ছে। আকর্ষণীয় স্থানগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য।
সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন সকলেই মুসলমান। ঘটনার পর থেকে কিছু ফরাসির ভাবভঙ্গি ও ভাষায় সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা দেখা যাচ্ছে। এলিজাবেথ নামে একজন ফরাসি নারী আমাকে বললেন, প্রত্যেক মুসলমান দেশেই অশান্তি। প্রতিনিয়ত ওই সব দেশে সন্ত্রাস কিংবা যুদ্ধ লেগেই আছে। তিনি একটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার। আমার ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাসের একজন অধ্যাপক ক্লাসে কথা প্রসঙ্গে বলেই ফেললেন, সারা পৃথিবীতে মুসলমানরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। এ সময় তার চেহারায় ছিল কিছুটা ক্ষোভ ও ঘৃণা। আমি আমার অবস্থান থেকে তার কথা খণ্ডনের চেষ্টা করেছি।রিপাবলিক চত্বর। সংগৃহীত ছবি
ফরাসি দৈনিক প্যারিসিয়ানের এক জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ ফরাসি এই ঘটনার প্রতিশোধ চান। তারা চান সিরিয়াসহ আইএসের ঘাঁটিতে যেন ফ্রান্স বিমান হামলা আরও জোরদার করে। ফ্রান্সের জনগণ মনে করেন সন্ত্রাসীদের মোকাবিলার জন্য ফ্রান্স যথেষ্ট সচেষ্ট। কারণ তাদের রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সহনশীলতা, দেশপ্রেম ও ঐক্য।
অন্যদিকে এই ঘটনার পর বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ভয়ভীতি। তবে আমার পাঁচ বছরের ফ্রান্সের অভিজ্ঞতায় দেখেছি ফ্রান্সের অন্যান্য কমিউনিটির মানুষের চেয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ ভদ্র ও পরিশ্রমী। যারা ফরাসি মূলধারার সঙ্গে একটু বেশি সম্পৃক্ত তারা আরও বেশি ভদ্র। বাংলাদেশিরা এখানে ফরাসি নানা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব কমিউনিটির মানুষের সঙ্গে কাজ করে ভদ্রতা ও কর্ম প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি রিপাবলিক চত্বরে গিয়ে ফুল দিয়েছেন।