Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

19খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৫: এবার ‘সুশৃঙ্খল’ বিপিএল আয়োজনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল বিসিবি। প্রতিশ্র“তি দিয়েছে নির্ভেজাল ক্রিকেটেরও। তা মাঠের ক্রিকেটে এখনো ‘ভেজাল’ ধরা না পড়লেও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেছে। পরশু প্রথম দিনেই ঢাকা ডায়নামাইটসের জনস্রোতে প“লিত হয়েছে বিপিএলের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। কাল শৃঙ্খলা ধরে রাখার প্রতিশ্র“তি আরেকবার পরাজিত সিলেট সুপারস্টারসের কাছে। সম্পৃক্ত এতে খোদ বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল!
বেলা ২টায় খেলা শুরু মানে টস হবে দেড়টায়। অথচ চিটাগং ভাইকিংস-সিলেট সুপারস্টারস ম্যাচের টস হলো নির্ধারিত সময়ের ২৬ মিনিট পর। বেলা ২টার ম্যাচ শুরু হলো ৩টা ১০-এ! মাঝের সময়টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম দেখল চরম বিশৃঙ্খলার অসংখ্য খণ্ডচিত্র। অক্রিকেটীয় কাণ্ডকারখানা আর গা-জোয়ারি মনোভাবের প্রামাণ্যচিত্র বলতে পারেন সেটাকে।
দুই শ্রীলঙ্কান দিলশান মুনাবীরা ও অজন্তা মেন্ডিসের সঙ্গে সিলেট সুপারস্টারসে আছেন ইংল্যান্ডের তিন খেলোয়াড় রবি বোপারা, জশুয়া কব ও ওয়াইজ শাহ। কিন্তু কাল টস হওয়ার আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের তিন খেলোয়াড়ের অনাপত্তিপত্র জমা দিতে পারেনি ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ। টস দেরিতে হওয়ার সেটাই কারণ। চিটাগং ভাইকিংসের সম্মতি নিয়ে ইংল্যান্ডে যোগাযোগ করে ইংলিশ খেলোয়াড়দের অনাপত্তিপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা। শেষ পর্যন্ত তাতে সফল না হওয়ায় ওই তিন ক্রিকেটারকে বাইরে রেখেই ১৬ খেলোয়াড়ের তালিকা জমা দিয়ে টসে যান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
নিয়ম মানা হয়নি এখানেও। প্রতি ম্যাচে চারজন বিদেশি খেলোয়াড় খেলানো বাধ্যতামূলক হলেও সিলেট সুপারস্টারসের খেলোয়াড় তালিকায় বিদেশি ছিলেন মাত্র দুই শ্রীলঙ্কান মুনাবীরা ও মেন্ডিস! টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস অবশ্য জানিয়েছেন, ‘খেলার স্বার্থে’ নাকি চিটাগং ভাইকিংসের সম্মতি নিয়ে সিলেটকে দুই বিদেশি নিয়ে নামার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দুই দলের সম্মতিক্রমেই যদি সমস্যার সমাধান হয়, তাহলে টুর্নামেন্টের বাইলজ রাখা কেন! তা ছাড়া একটা দলকে সুবিধা দিতে খেলা দেরিতে শুরু করাটাও নজিরবিহীন। এ ব্যাপারে জালাল ইউনুসের কথা, ‘আমরা চাইনি ম্যাচটা ওয়াকওভার হোক।’
আইন একবার ভাঙলে বারবারই ভাঙে। সিলেট সুপারস্টারসও সুযোগ নিল বিপিএল কর্মকর্তাদের নমনীয় মানসিকতার। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মুনাবীরা ও মেন্ডিসের সঙ্গে তারা মাঠে নামাল বোপারা ও কবকেও, সেটা নাকি সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই! তবে সিলেটের কর্মকর্তা আজিমুল ইসলামের দাবি, ‘টস হওয়ার পর পর বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ই-মেইলে তাদের এনওসি (অনাপত্তিপত্র) আসে। উনি তখন আমাদের বলেছেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের খেলানো যাবে। সে জন্যই আমরা ওদের মাঠে নামাই।’ বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী এটি অস্বীকার করেছেন, ‘আমরা তাদের বলিনি খেলানো যাবে। আমরা বলেছি, এ ব্যাপারে ম্যাচ রেফারির মতামত নিতে হবে। পরে ম্যাচ রেফারি বলেন, প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সম্মতি থাকলে ওরা খেলতে পারবে। কিন্তু চিটাগং ভাইকিংস অধিনায়ক তাতে রাজি হননি।’
সে জন্যই টসের আগে দেওয়া খেলোয়াড় তালিকার বাইরের দুই ক্রিকেটারকে দেখে উইকেটে গিয়েও মাঠ ছেড়ে উঠে আসেন চিটাগং ওপেনার তামিম ইকবাল ও তিলকরতেœ দিলশান। এরপর পরিস্থিতি তো আরও বিশৃঙ্খল। দুই ডাগ-আউটের মাঝখানে দর্শকদের সামনেই চলতে থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক-খেলোয়াড় এবং টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বিসিবি কর্মকর্তাদের আলোচনা। কখনো কখনো সেটা রূপ নিচ্ছিল কথা-কাটাকাটিতে। অন্যরা থামিয়ে না দিলে আজিজুল ইসলামের সঙ্গে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের কথা-কাটাকাটি গড়াতে পারত আরও খারাপ দিকে।
সেটা সামলানো গেলেও একটা পর্যায়ে সামলানো যায়নি তামিম ও আজিজুলের ঝগড়া। আলোচনার একপর্যায়ে দূরে বসে থাকা তামিমের কাছে গিয়ে আজিজুল কিছু একটা বলতেই চিৎকার করে ওঠেন তামিম, ‘আপনি আমাকে এটা বলার কে?’ দু-একটি অশ্লীল শব্দও ছুড়ে দেন তিনি সিলেট সুপারস্টারসের মালিকের উদ্দেশে। ম্যাচই খেলবেন না জানিয়ে প্যাড খুলে দলের সবাইকে নিয়ে চলে যান ড্রেসিংরুমে। মাঠে থাকা বিসিবির কর্মকর্তারা চেষ্টা করেও শান্ত করতে পারেননি তামিমকে।
একটু পর সিলেট ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের ছাড়াই খেলতে রাজি হয়ে মাঠে নামে। কিন্তু চিটাগং ভাইকিংসের ড্রেসিংরুম তখন উত্তপ্ত। সিলেট সুপারস্টারসের মালিক আজিজুল ইসলামের মুখে আপত্তিকর কথা শুনেই তামিম চটেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি তামিমের। তামিমের বিরুদ্ধে নাকি বিসিবির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগও করেছে সিলেট সুপারস্টারসের মালিকপক্ষ। তামিমের আশা তাঁর সঙ্গে অসদাচরণের বিচার করবে বিসিবি।
দেখাই যাক, বিশৃঙ্খল বিপিএলে কার বিচার কে করে।