Mon. May 5th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

22খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৫ : মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান রেহমান মালিক। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশি এ দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানিয়েছেন।
রেহমান মালিক ইউএনএইচআরসির হাই কমিশনারকে লেখা এক চিঠিতে এ আহ্বান জানান। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য নিউজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
হাই কমিশনার প্রিন্স জেইদ বিন রাদ আল হুসেইনকে লেখা চিঠিতে মালিক উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিশন গঠন করে বাংলাদেশ সফর এবং মানবতাবিরোধী এ দুই রাজনীতিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় তদন্তের আহ্বান জানান। এ ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী কঠিন পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি করেন তিনি।
চিঠিতে মালিক লেখেন, পাকিস্তানের জনগণ গভীর উদ্বেগ ও দুঃখের সঙ্গে এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড প্রত্যক্ষ করেছে এবং আমরা একে নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করছি। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ঘটনায় বাংলাদেশে ত্রুটিপূর্ণ যে বিচার চলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে নীরব ভূমিকায় পাকিস্তানের জনগণ উদ্বিগ্ন।
সিনেটর মালিক বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে দখলদার মন্তব্য করে বলেন, ৪৫ বছর আগে বাংলাদেশের যে সব রাজনৈতিক নেতা তাদের নিজের দেশ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল এবং অভ্যন্তরীন ইস্যুতে ভারতের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছিল বাংলাদেশ সরকার তাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে।
এরপর সিনেটর মালিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, চলতি বছরের ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গর্বের সঙ্গে পাকিস্তানের বিভক্ত হয়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ভারতের জড়িয়ে পড়ার কথা বলেন।
চিঠিতে মালিক ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ১৯৭০ সালের দিনগুলো স্মরণ করুন; আমাদের পরবর্তী উত্তরসূরীদের বলুন, সে সেময় আমরাই ছিলাম। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা এখানে উপস্থিত আছেন। আমি আপনাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সেই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় সেনারা যুদ্ধ করেছিল। কোনো প্রত্যক্ষদর্শীই এ কথা বলতে সক্ষম ছিল না যে, এটা ভারতীয়দের রক্ত আর এটা মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত।
তিনি লেখেন, জাতিসংঘ ও এর মানবাধিকার কমিশনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনোভাবেই মোদির এই বক্তব্য এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না যে, ১৯৭১ সালে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তাতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিল এবং নিস্পাপ বেসামরিক নাগরিক হত্যা ও সার্বভৌম পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করতে ঘৃণ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ যে সব অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলোকে সাজানো উল্লেখ করে মালিক বলেন, তারা নয়, বরং ভারত সমর্থিত মুক্তিবাহিনীই গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে জঘন্য অপরাধ’ মন্তব্য করে রেহমান মালিক বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এই জঘন্য অপরাধমূলক কাজকে এড়িয়ে যেতে থাকে তাহলে বাংলাদেশ সরকার তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার যে নীতিতে চলছে তা থামবে না।
সিনেটর রেহমান মালিক জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ করা না হয় তাহলে আরো অন্যান্য নিস্পাপ মানুষের জীবন দখলদার ক্ষমতাসীন সরকারের হাতে শেষ হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ২১ নভেম্বর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর পর পরই এক বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবার সেই ধারাবাহিকতায় দেশটির সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানালেন।