খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫ : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও নাশকতা ঠেকাতে দেশজুড়ে ফের সাঁড়াশি অভিযান চালাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শক্তিশালী এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে সারাদেশে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের তালিকা হালনাগাদ করতে শুরু করেছে পুলিশ। এ তালিকা ধরে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে সারাদেশে একযোগে এ বিশেষ অভিযান চালাবে যৌথ বাহিনী। পৌরসভা নির্বাচনে পেশাদার সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের দৌরাত্ম্য ঠেকানো ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারই এ অভিযানের মূল লক্ষ্য। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে হয় সব বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থানা জমা নেয়া হচ্ছে, নচেত অস্ত্র ব্যবহার কিংবা প্রদর্শনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আরো জোরদার করা হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। এ লক্ষ্যে প্রত্যেকটি বিভাগে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপারদের (এসপি) কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা নির্বাচন। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), একাধিক অতিরিক্ত আইজিপি, র্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পদস্থ কর্মকর্তা, কয়েকজন রেঞ্জ ডিআইজি, অনেক জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র মতে, ওই বৈঠকে জঙ্গিবাদের পাশাপাশি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। এ সময় নির্বাচনের পূর্বাপর বিষয়ে ডিআইজি ও এসপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরপরই দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিগগিরই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠক শেষে পুলিশ সদর দফতরে নির্বাচন সংক্রান্ত চূড়ান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র জানায়, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সহিংসতা মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশ সদর দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিআইজি বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও ভোট ডাকাতি, ব্যালটবাক্স ছিনতাইসহ সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকার সন্ত্রাসী ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের তালিকা হালনাগাদ করতে ডিআইজি ও এসপিদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে এ কাজ করতে থানা পুলিশকে সহায়তা করছে ডিবি ও এসবির গোয়েন্দারা। ওই কর্মকর্তা বলেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর পরপরই নির্বাচন পুরোদমে জমে উঠবে। অনেক প্রার্থী তাদের পক্ষে কাজ করাতে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালাবে। সেক্ষেত্রে ১৫ ডিসেম্বর থেকে একযোগে সারাদেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দল-মত নির্বিশেষে এ অভিযান চালানো হবে। তবে জঙ্গি ও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার আশঙ্কায় খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশকিছু জেলায় কঠোরভাবে এ অভিযান চালানো হবে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন হলেও এখনো বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা নেয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রীতি অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর রাত থেকেই জমা নেয়া হতে পারে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে অস্ত্রগুলো। আর অস্ত্র জমা না নেয়া হলেও এর ব্যবহারে থাকছে কঠোর বিধিনিষেধ। ঘরের বাইরে কোনো স্থানে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রটি প্রদর্শন করার সুযোগ থাকবে না। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গণমাধ্যম) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। যাদের দ্বারা নির্বাচনী পরিবেশ বিঘœ হতে পারে বা হবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পেশাদার ও চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ ও র্যাব সূত্র জানায়, সারাদেশে পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে জোরদার করতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও পুলিশ সদর দফতরকে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এরপর পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বিদেশি হত্যা, ব্লগার হত্যা, শিয়া মসজিদের হামলা, পুলিশের ওপর হামলার পর বিশেষ পরিস্থিতিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী ও বোমাবাজদের আইনের আওতায় আইনে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা অথবা ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। তাই নির্বাচনের আগে-পরে যে কোনো ধরনের সহিংস কমকাণ্ড ঠেকাতে এখনই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছেন। প্রত্যেকটি থানায় ও জেলায় খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, গত মাস থেকে নাশকতা ঠেকাতে সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে যে অভিযান শুরু হবে তাতে পেশাদার অপরাধী, নাশকতাকারী, অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, র্যাবসহ সব সংস্থার সদস্যরা নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার করতে চালাবে বিশেষ অভিযান।