খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫: অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার চেয়ে চলে গেছে বেশি অর্থ।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের পেছনে একে একটি কারণ হিসেবে দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা। অবশ্য বিদেশি বিনিয়োগারীরা আবারও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ফিরবেন বলে তারা আশাবাদী।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়- ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ঋণাত্মক।
এই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, আগের করা বিনিয়োগের শেয়ার বিক্রি করে তার চেয়ে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার বেশি তারা বাজার থেকে তুলে নিয়ে গেছেন।
অথচ গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ৪০ লাখ ( ১৭৪ মিলিয়ন) ডলার। অর্থ্যাৎ, ওই সময়ে নতুন যে বিনিয়োগ হয়েছিল তা থেকে আগের কেনা শেয়ার বিক্রি বা মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার অর্থ বাদ দিলেও ১৭ কোটি ৪০ ডলারের বিনিয়োগ বাজারে ছিল।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করবেন; আগের বিনিয়োগের শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেবেন- এটা স্বাভাবিক; ব্যবসারই অংশ।
“তারা বিচক্ষণ। দেখে-শুনে গবেষণা করে বিনিয়োগ করেন।ৃএখন বিক্রি করছেন; কয়েকদিন পর দেখা যাবে আবার কিনছেন। যেহেতু বাজার এখন পড়ছে; সে কারণে মনে হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাব বাজারে পড়েছে।”
বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, “এটাই নিয়তি। আমাদের বাজারে যখন বিদশি বিনিয়োগ আসে তখন সুখের খবরৃ। আর যখন চলে যায় কষ্টেরৃ।”
তবে ‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “ভারতের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় অনেক বিনিয়োগকারী এখন সেখানে বিনিয়োগ করছেন। কিছুদিন পর হয়তো দেখা যাবে তারাই আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।”
রুপির দরপতনে বড় ধসের পর ভারতের পুঁজিবাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ ফিরে আসায় সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে বলে শাকিল রিজভী জানান।
“যে কোনো পুঁজিবাজারে ৪ থেকে ৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ থাকা ভালো। ২০১০ সালে আমাদের পুঁজিবাজারে বড় ধসের পর বিদেশি বিনিয়োগ ছিল না বললেই চলে। ২০১৩ সাল থেকে আবার বিদেশি বিনিয়োগ আসতে শুরু করে।”
বিশ্বের অনেক দেশের পুঁজিবাজারের ধস এবং ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান ওই সময়ে বিদেশিদের এ দেশের বাজারে আকৃষ্ট করেছে বলে মনে করেন শাকিল রিজভী।
“সাম্প্রতিক সময়ে টাকা বেশ খানিকটা দুর্বল হয়েছে। এখন ১ ডলারে ৮১/৮২ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। মাস দুয়েক আগেও পাওয়া যেতো ৭৮/৮৯ টাকা।”
এটাও পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমার একটি কারণ বলে তিনি মনে করেন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মোট ৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা ৬১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে নেমে আসে।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩ হাজার ৫০০ পয়েন্টে নেমে গিয়েছিল। লেনদেন নেমে এসেছিল ২০০ কোটি টাকার নিচে।
এরপর সরকারের নানা প্রণোদনা ও তৎপরতায় সেই সূচক এখন ৪ হাজার ৫০০ পয়েন্টের উপরে অবস্থান করছে।
গত সপ্তাহের প্রথম দিন ছাড়া প্রতি কর্মদিবসেই দর ও সূচক পতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। সপ্তাহের শেষ দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫৮৩ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২২ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৯৭৭ পয়েন্টে হয়েছে।