খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫: ব্রেন্ডন ম্যাককালামের কী একটু আক্ষেপ হচ্ছে? কেন যে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজে আরেকটি টেস্ট রাখা হলো না! আর একটা টেস্ট হলেই তো নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের একটা সেঞ্চুরি হয়ে যায়। হয়ে যায় একটা বিশ্ব রেকর্ড। সিরিজে আরও একটা টেস্ট হলে যে আরও দুই মাস ৯৯-তে আটকে থাকতে হয় না ম্যাককালামকে।
বিশ্ব রেকর্ড অবশ্য এরই মধ্যে হয়ে গেছে। হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে গতকাল থেকে শুরু হওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে টস করতে নেমেই একটা বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন কিউই অধিনায়ক। অভিষেকের পর টানা টেস্ট খেলার রেকর্ড।
এই হ্যামিল্টনেই ১১ বছর আগে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন ম্যাককালাম। সেই থেকে শুরু ম্যাককালামের মসৃণ পথচলা। ২০০৪ সালের মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই টেস্টের পর আরও ৯৯টি টেস্ট খেলেছে নিউজিল্যান্ড, তার প্রতিটিতেই দলে ছিলেন ম্যাককালাম। কী অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা, কী অবিশ্বাস্য ফিটনেস!
ধারাবাহিকতা, ফিটনেসের পুরস্কারটা ম্যাককালাম পাচ্ছেন রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়ে। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকের পর থেকে টানা ৯৯টি টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়লেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। মজার ব্যাপার, রেকর্ডটা গড়লেন তিনি হ্যামিল্টনে, যেখানে তাঁর অভিষেক হয়েছিল। চক্রপূরণ এভাবেও হয়!
টানা টেস্ট খেলার রেকর্ডে ম্যাককালাম যাঁকে পেছনে ফেলেছিলেন তিনিও একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। তিনিও খেলার ধরনে এমনই বিধ্বংসী। নামটা এতক্ষণে বুঝে ফেলার কথা—এবি ডি ভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক এখানে অবশ্য নার্ভাস নাইন্টিজেই থেমে গিয়েছিলেন। অভিষেকের পর টানা ৯৮টি টেস্ট খেলেছেন এবি।
অবশ্য সেঞ্চুরির ঠিক আগে তাঁর থেমে যাওয়াকে ‘নার্ভাস’ বলা যাবে না মোটেও। এভাবে থামতে হওয়াতে তাঁর বিন্দুমাত্র আক্ষেপও থাকবে না। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে দুটি টেস্টেই খেলার কথা ছিল ডি ভিলিয়ার্সের। কিন্তু সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে টেস্ট না খেলেই বাড়ির পথ ধরেছিলেন তিনি। ওই দুটি টেস্ট খেললেই তাঁর টানা টেস্ট খেলার সেঞ্চুরি হয়ে যেত। তবে সন্তান হওয়ার স্বর্গীয় সময়টাতে কাছে থাকার অনুভূতির সঙ্গে কি আর অন্য কিছুর তুলনা হয়!
মজার ব্যাপার, এই টানা টেস্ট খেলার রেকর্ডে তৃতীয় নামটিও একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের। তাঁর খেলার ধরনও ছিল ম্যাককালাম-ডি ভিলিয়ার্সের মতোই বিস্ফোরক! তিনি সাবেক অস্ট্রেলিয়ান উইকেটরক্ষক অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ১৯৯৯ সালে ব্রিসবেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকে ২০০৮ সালে অ্যাডিলেডে ভারত টেস্ট—টানা ৯৬টি টেস্টেই খেলেছেন গিলক্রিস্ট। সেঞ্চুরি করতে পারতেন তিনিও। কিন্তু অ্যাডিলেডের ওই টেস্টটির পরই ক্রিকেটকেই বিদায় বলে দেন ‘গিলি’।
গিলক্রিস্ট-ডি ভিলিয়ার্সরা যে রেকর্ডটি স্বেচ্ছায় দূরে ঠেলেছেন, সেই রেকর্ডটি গড়ার সুযোগ এখন ম্যাককালামের সামনে। কদিন আগেই টেস্টে ছক্কার সেঞ্চুরির রেকর্ডে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পাশে বসেছেন। এখন এই রেকর্ডটাকেও সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার জন্য আর এক টেস্টের অপেক্ষা ম্যাককালামের। অবশ্য সে জন্য এই ৩৪ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আগামী ফেব্র“য়ারিতে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ পর্যন্ত।
তাঁর আক্ষেপটাও হয়তো এখানেই, কেন যে এই সিরিজেই আরও একটা টেস্ট রাখা হলো না। তথ্যসূত্র: ক্রিকইনফো, জি নিউজ।